শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:১৫ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ছাত্রলীগের চাদাবাজির বিচারের রেশ না কাটতেই যুবলীগের ১০ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ উঠেছে।এ চাদাবাজি ঠেকানো এবং যুবলীগের ঐতিহ্য ধরে রাখতে খুব শিগরই তালিকাভুক্ত যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হচ্ছে। পাশাপাশি তাদের বিচার সম্পন্ন করা হবে যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে ।এই শুদ্ধি অভিযানের তালিকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের তিন এবং ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর মিলিয়ে আরো সাত জন নেতার নাম রয়েছে। এদেরকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। সেখানেই তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নয়া হবে বলে জানান যুবলীগের শীর্ষ একাধিক নেতা।
যুবলীগ সিনিয়র নেতারা বলেন, যে সব নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অনৈতিক কাজের অভিযোগ উঠেছে তাদের বিচার হবে যুবলীগের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালে। বিচার প্রক্রিয়া শুরুর জন্য এরইমধ্যে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, যুবলীগের এই ট্রাইব্যুনাল চালু আছে অনেক দিন ধরে। ওই ট্রাইব্যুনালের প্রধান হলেন- যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী। আর প্রেসিডিয়াম সদস্যরা হলেন এর মেম্বার। যুবলীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এই ট্রাইব্যুনাল বসে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় একাধিক সিনিয়র সদস্য জানান, গত শনিবার আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কামটির বৈঠকে ছাত্রলীগ থেকে শোভন-রাব্বানীকে সরিয়ে দেয়ার পাশাপাশি যুবলীগে শুদ্ধি অভিযানের কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শুধু তাই নয়, তিনি কয়েকজন নেতার নাম ধরে তাদের অপকর্মের কথাও তুলে ধরেন।
জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈঠকে কিছু ছবিও দেখান। তিনি গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনও আংশিক তুলে ধরেন। ওই বৈঠকে উপস্থিত কয়েকজন নেতা জানান, শেখ হাসিনা যুবলীগের কয়েকজন নেতার নাম ধরে বলেন, ওরা শোভন-রাব্বানীর চেয়েও খারাপ। তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।
শীর্ষ নেতারা বলেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে যাওয়ার আগে গণবভবনে যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী এবং সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদকে যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দিতে বলেছিলেন। কাকরাইলে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের ভবন নির্মাণ থেকে চাঁদা দাবির অভিযোগ পেয়ে প্রধানমন্ত্রী তখন ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। আর এই চাঁদা দাবির অভিযোগ ওঠে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে।
জানা গেছে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে নির্দেশও দেয়া হয়েছিলো। পরিস্থিতি বুঝে তখন তিনি দেশের বাইরে চলে যান।এরপর রাজনৈতিক অঙ্গনের প্রভাবশালী মহল দেন দরবার করেন তার জন্য। পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলে তিনি দেশে ফিরে আসেন। তার ওপর এখনো চাপ রয়েছে। তিনি কিছুটা দমে গেলেও তার সহযোগীরা এখনো বেপরোয়া। দক্ষিণেরই সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ হলো তিনি প্রকাশ্যে অস্ত্র উঁচিয়ে চলাফেরা করেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসারও অভিযোগ রয়েছে।
আওয়ামী লীগের শীর্ষ মহলে অভিযোগ রয়েছে, যুবলীগের কিছু নেতার এখন আয়ের প্রধান উৎস ক্যাসিনো ব্যবসা। রাজধানীর সেগুন বাগিচা এলাকার একটি ভবনেই আছে এরকম তিনটি ক্যাসিনো। আর ঢাকায় তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে কম করে হলেও ৫০টি ক্যাসিনো। জুয়া খেলার জন্যই এইসব ক্যাসিনো গড়ে তোলা হয়েছে। আর জুয়ার ব্যবসা করে কেউ কেউ ফুলে ফেঁপে উঠছেন। তারা আবার দেশের বাইরেও ক্যাসিনোতে জুয়া খেলতে যান। ক্যাসিনোগুলোর মূল নিয়ন্ত্রণ ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের শীর্ষ কয়েক নেতার হাতে। কেন্দ্রীয় যুবলীগের অন্ততঃ দুজন নেতাও এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
অপরদিকে কেন্দ্রীয় এক যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে বাড়ি ও জমি দখলের। ঢাকার পুরো মিরপুর এলাকায় সে এই কাজে একটি সিন্ডিকেট গড়ে তুলেছে। তার গ্রামের বাড়ি ঢাকার পাশের একটি জেলায়। তিনি গত সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নেরও চেষ্টা করেছিলেন। আর সায়েদাবাদের বাস টার্মিনাল, শিক্ষাভবনসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠানের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করেন কয়েকজন যুবলীগ নেতা।
এ বিষয়ে যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট তার বিরুদ্ধে আঞ্জুমানের কাছ থেকে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, আমার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্ত হয়েছে। কিন্তু অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। আর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভুঁইয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র উঁচিয়ে চলার অভিযোগের তদন্ত চলছে। তার এলাকার কিছু যুবলীগ নেতার বিরুদ্ধে ক্যাসিনো ও মাদক ব্যবসার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এগুলো কারা করে আমার জানা নেই।
এ ব্যাপারে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ বলেন, সম্রাটের বিরুদ্ধে আঞ্জুমানের অভিযোগ নিয়ে আমরা তদন্ত শুরু করেছিলাম ট্রাইব্যুনালে বিচারের জন্য। তবে আঞ্জুমানের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ নেই বলে লিখিত দেয়া হলে আমরা আর এগোতে পারিনি। তবে আমরা বেশ কয়েক জনের বিচার করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিয়েছি।
যুবলীগ দক্ষিণের কমিটি ভেঙে দেয়ার ব্যাপারে তিনি বলে, গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী গণবভনে এক অনুষ্ঠানে যুবলীগ দক্ষিণের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন সত্য। তবে তখন তিনি কমিটি ভেঙে দিতে বলেছেন কিনা আমার তা জানা নেই। কারণ আমি একটু দূরে ছিলাম। তবে তিনি কমিটি যদি ভেঙে দিতে বলতেন তাহলে ভেঙেই দিতে হত। কারণ তিনি আমাদের নেত্রী। আর গত শনিবারের ওয়ার্কিং কামিটির বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী যুবলীগ নিয়ে কি বলেছেন তা আমাদের জানা নেই। আমরা সেখানে ছিলাম না। আমাদের চিঠি দিয়েও তিনি কিছু জানাননি। যা জেনেছি আমরা পত্রিকার মাধ্যমে জেনেছি।
তবে যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্তের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এজন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। আর এই সব অভিযোগের বিচারে ট্রাইব্যুনাল বসবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, যুবলীগ নেতাদের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্ন মাধ্যমে যেসব অভিযোগ আসছে তা আমরা সংরক্ষণ করছি। আমরা বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি প্রধানমন্ত্রী আমাদের কিছু না জানালেও আমরা ব্যবস্থা নেব। আর সেই ব্যবস্থা হবে আমাদের নিজস্ব ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে। এ বিষয়ে ইসমাইল হোসেন সম্রাট বলেন, আমরা শুদ্ধি অভিযানকে স্বাগত জানাই। আমাদের প্রধানমন্ত্রী যা বলবেন তাই হবে।
এসব বিষয়ে কথা বলার জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সঙ্গে মোবাইলফোনে বার বার চেষ্টা করেও কথা বলা যায়নি।
বিভিন্ন সূত্রে কথা বলে জানা গেছে, এই শুদ্ধি অভিযানের তালিকায় কেন্দ্রীয় যুবলীগের তিন এবং ঢাকা দক্ষিণ এবং উত্তর মিলিয়ে আরো সাত জন নেতার নাম রয়েছে।
সূত্র: দৈনিক জাগরণ।