শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৫ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

একদিনে আ.লীগের ৪ নেতার বাড়ি থেকে ৫ কোটি টাকা উদ্ধার

তরফ নিউজ ডেস্ক: একদিনে রাজধানীতে আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের চার নেতার বাড়িতে অভিযান চালিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। সব মিলিয়ে নগদ ৫ কোটি ৫ লাখ টাকা, ৭২০ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৬টি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়েছে। সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) গভীর রাত থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে এসব বাড়িতে অভিযান চালানো হয়।

মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল থেকে পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়া থানাধীন ৩১ নম্বর বানিয়ানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এনামুল হক এনু ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বাসায় অভিযান চালিয়ে আনুমানিক ৭২০ ভরি (৮ কেজি) স্বর্ণ, নগদ অন্তত ১ কোটি ৫ লাখ টাকা ও ৫টি অস্ত্র জব্দ করে র‌্যাব। স্বর্ণের আনুমানিক মূল্য ৪ কোটি টাকা।

র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক শফিউল্লাহ বুলবুল জানান, আমাদের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল- টাকা ও সোনা রাখতে ইংলিশ রোড থেকে পাঁচটি ভল্ট ভাড়া করা হয়েছে। এই সূত্র ধরে ৩১ নম্বর বানিয়ানগরের বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এই বাড়ির তৃতীয় ও পঞ্চম তলায় তিনটি ভল্ট পাওয়া গেছে। ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে ভল্টগুলো খোলা হয়।

তিনি জানান, আওয়ামী লীগ নেতা এনামুল ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের অংশীদার (শেয়ারহোল্ডার)। সেখান থেকে পাওয়া লভ্যাংশের টাকা দিয়ে সোনা কিনে সে ভল্টে লুকিয়ে রাখত। নগদ টাকা রাখতে বেশি জায়গার প্রয়োজন, সেজন্য টাকাগুলো নিয়ে এসে সোনায় কনভার্ট করতো। এনামুলের ভাই গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রুপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। উদ্ধার হওয়া অস্ত্রগুলো দিয়ে এনামুল ও রুপন ভয়ভীতি প্রদর্শন করতো বলে র‌্যাবকে জানিয়েছে স্থানীয়রা।

তবে অভিযানের আগেই পালিয়ে যান রুপন। এনামুলও সপ্তাহখানেক আগে থাইল্যান্ডে পালিয়ে গেছেন বলে বাড়ির সদস্যরা জানিয়েছে।

এনামুলদের বানিয়ানগরের বাড়িতে অভিযানের পর বেলা আড়াইটার দিকে পার্শ্ববর্তী ৮১/১ লালমোহন সাহা স্ট্রিটে ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের কর্মচারী আবুল কালাম আজাদের চারতলা বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। এনামুল-রূপনের মতো আবুল কালামও র‍্যাবের অভিযানের আগে ওই বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। তবে বাড়ির দোতলায় তার কক্ষে থাকা একটি ভল্টের ভেতর পাওয়া যায় দুই কোটি টাকা ও একটি অস্ত্র।

আবুল কালামের বাড়ির পর র‍্যাবের অভিযান চলে ২২/১ শরৎ গুপ্ত রোডে অবস্থিত এনামুলের বন্ধু হারুন অর রশিদের তিনতলা বাড়ির দোতলায়। দোতলার এই ফ্ল্যাটে দুটি কক্ষ। এর মধ্যে হারুনের শয়নকক্ষে থাকা একটি ভল্ট খুলে পাওয়া যায় আরও দুই কোটি টাকা। অভিযানের আগে হারুনও পালিয়ে যান।

র‌্যাব জানিয়েছে, হারুন স্থানীয় ট্রাকস্ট্যান্ডের কর্মচারী। হারুনের স্ত্রী র‌্যাবের কাছে দাবি করেছেন, জব্দ হওয়া টাকা সম্পর্কে তারা কিছু জানেন না। কয়েকদিন আগে এনামুল হক এসব টাকা তাদের বাড়িতে রেখে গেছেন।

এনামুল হক ও তার ভাইয়ের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত করেছেন গেন্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লিয়াকত জাহান। তিনি জানান, এই দুজনের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় এনামুল হক ও রুপন ভূঁইয়ার অন্তত ১৫টি বাড়ি রয়েছে। গেণ্ডারিয়ার বিভিন্ন এলাকার দেয়ালে দেয়ালে দুই ভাইয়ের ছবিসহ পোস্টারও দেখা যায়।

উল্লেখ্য, গত সপ্তাহে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে যুবলীগ নেতাদের নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন দলীয় সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর ঢাকায় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের তত্ত্বাবধানে ‘৬০টি ক্যাসিনো চালানোর’ খবর আসে সংবাদমাধ্যমে। এ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই ১৮ সেপ্টেম্বর ঢাকার ওয়ান্ডারার্স ক্লাবসহ চারটি ক্লাবে অভিযান চালিয়ে জুয়ার সরঞ্জাম, নগদ টাকা ও মদ উদ্ধার করে র‌্যাব। পরে আরও কয়েকটি ক্লাবে অভিযান চালানো হয় ।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com