মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:১৭ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ভারত রফতানি বন্ধ ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে গত দুদিনের ব্যবধানে প্রায় দ্বিগুণ দামে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে ভারতীয় নাসিক জাতের পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৮৫-৯০ টাকায়। খুচরা বাজারে ১১০ টাকার নিচে পেঁয়াজ নেই।
পেঁয়াজের দাম ঠিক কী কারণে বাড়ছে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার মূলে হাত দেয়া হয়েছে। গতকাল সোমবার জাগো নিউজের সংবাদে জানানো হয়, খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা মূলত কমিশনে ব্যবসা করেন। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধিতে মূল ভূমিকা রেখেছেন আমদানিকারকরা।
চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসন বলছে, ব্যবসায়ীদের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কারসাজির হোতা আমদানিকারকদের একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির হোতা আমদানিকারকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে এ তালিকা পাঠানো হবে।
জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় ভোগ্যপণ্যের বাজার খাতুনগঞ্জে অভিযান চালিয়েছি। এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য যাচাই করে দেখা গেছে, এখানে পেঁয়াজের দাম বাড়ার পেছনে কলকাঠি নাড়ছেন বেশ কয়েকজন আমদানিকারক। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা যেহেতু কমিশনে ব্যবসা করেন, সেহেতু আমদানিকারকরা না চাইলে তাদের পক্ষে আগের দামে পেঁয়াজ বিক্রি করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ভারতীয় পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে জড়িত বেশ কয়েকজন আমদানিকারকের তথ্য আমরা পেয়েছি। এসব আমদানিকারকের তালিকা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধির হোতা দুই প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে আমরা জেনেছি। প্রতিষ্ঠান দুটি হচ্ছে- রিপা ট্রেডার্স ও টাটা ট্রেডার্স। এর মধ্যে রিপা ট্রেডার্সের মালিক সাতক্ষীরার বাসিন্দা বলে খবর পেয়েছি। টাটা ট্রেডার্স তার ব্যবসা পরিচালনা করে চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত ব্যবহার করে।
চলতি বছর বন্যার কারণে ভারতে পেঁয়াজ উৎপাদনে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। এ বছর ভারতের বাজারেও পেঁয়াজের মূল্য চড়া। তারই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ সেপ্টেম্বর দেশটির সরকার রান্নার জন্য অতি প্রয়োজনীয় এ উপাদানটির রফতানি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। ঘোষণার পর থেকে বাংলাদেশের বাজারে কেজিতে ২০-২৫ টাকা বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম।
জাগো নিউজের অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৯ সেপ্টেম্বর দুপুরে খাতুনগঞ্জের আড়তে মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৪৮-৫০ টাকা, ভারতের পেঁয়াজ ৫১-৫৫ এবং দেশি পেঁয়াজ ৬২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এরপর বিকেলে ভারতে পেঁয়াজ রফতানির নিষেধাজ্ঞার খবর খাতুনগঞ্জের বাজারে পৌঁছার পর হু হু করে বাড়তে থাকে দাম। সন্ধ্যা নাগাদ পেঁয়াজ বেচাকেনা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আড়তদার বলেন, খাতুনগঞ্জের অধিকাংশ ব্যবসায়ী সরাসরি পেঁয়াজ আমদানি করেন না। পেঁয়াজ বিক্রির সিদ্ধান্তও তাদের হাতে নেই। আমদানিকারকরা না চাইলে, যত দামই হোক তাদের পক্ষে পেঁয়াজ বিক্রি সম্ভব নয়।
সবুজ এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. সাবের বলেন, রোববার দুপুরের পর আমদানিকারকদের নির্দেশে ভারতের পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৮০-৮৫ ও মিয়ানমারের পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি করি। বিকেলে তাদের নির্দেশেই আমরা পেঁয়াজ বিক্রি বন্ধ করে দেই। আজ সকালেও পাইকারিতে ভারতীয় নাসিক পেঁয়াজ ৮৫ থেকে ৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খুচরায় বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকায়।
এদিকে জেলা প্রশাসনের অভিযানে অংশ নেয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম বলেন, প্রায় আড়াই ঘণ্টার অভিযানে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজের দামে বেশ পরিবর্তন এসেছে। সকালে ৯০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হলেও দুপুরেও অভিযান শেষ হওয়ার সময় সেই পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি করেছেন ব্যবসায়ীরা। খাজা ট্রেডার্স নামে এক আড়তে মূল্যতালিকা ছাড়া বাড়তি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় ওই প্রতিষ্ঠানের মালিককে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী নেতারাও আমাদের সঙ্গে ছিলেন।
পেঁয়াজের দাম নিয়ে উদ্বিগ্ন না হওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য সচিব মো. জাফর উদ্দীন জানান, দেশীয় ও আমদানি করা পেঁয়াজের সন্তোষজনক মজুত রয়েছে। এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। যারা মজুত করবেন এবং বাজার অস্থির করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, মিয়ানমার থেকে দুটি চ্যানেলে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। এছাড়া তুরস্ক ও মিসর থেকে পেঁয়াজ আনার প্রক্রিয়া চলমান। তবে সময়টা বলতে চাচ্ছি না। যেকোনো মুহূর্তে আসতে পারে পেঁয়াজ।