শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৯ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : জাতীয় সংসদে পাস হওয়া নতুন সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮ কার্যকর হচ্ছে আজ ১ নভেম্বর (শুক্রবার) থেকে। নতুন আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে সর্বোচ্চ ৫ বছর শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে। এছাড়া হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে মোটরসাইকেল আরোহীর জরিমানা হবে ১০ হাজার টাকা।
নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর গত বছর ১৯ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে ‘সড়ক পরিবহন আইন ২০১৮’ পাস করা হয়। ওই বছর ৮ অক্টোবর এর গেজেট জারি করা হয়। তবে আইনে বলা হয়, সরকার আইনটি কার্যকরের তারিখ ঠিক করে এর প্রজ্ঞাপন জারি করবে।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হলে এ নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয় পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্যপরিষদসহ পরিবহন সেক্টরের তিনটি সংগঠন। তারা এ আইন বাতিলের দাবি থেকে সরে এসে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ৫ বছরের শাস্তি কমানো, মামলা জামিনযোগ্য করাসহ চালক-হেলপারের শিক্ষাগত যোগ্যতা শিথিলের দাবিতে আন্দোলন শুরু করে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে আইনটি কোনো প্রকার সংশোধন ছাড়াই কার্যকর করার নির্দেশনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।
জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার ১৪ মাস পর নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে গত ২৭ অক্টোবর এ আইন কার্যকরে প্রজ্ঞাপন জারি করে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ এর ধারা ১ এর উপধারা (২) এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর থেকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করল।’ এর ফলে আইনটি সংশোধন বা পরিবর্তন ছাড়াই কার্যকর হতে যাচ্ছে। প্রজ্ঞাপনে স্বাক্ষর করেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম। প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আজ (১ নভেম্বর) থেকে আইনটি কার্যকর করার দিন-ক্ষণ ঠিক করা হয়।
তবে এ আইনটি জাতীয় সংসদে পাস হওয়ার ১৪ মাসেও হয়নি বিধি প্রণয়ন। সংশ্লিষ্টরা অবশ্য বলছেন, বিধি প্রণয়ন না হলেও আজ থেকে এ আইন কার্যকরে কোনো বাধা নেই। এর আগে অনেক আইনই পাসের পর তা কার্যকর হওয়ার এক বছর কখনো দুই বছর পর বিধি প্রণয়ন করা হয়েছে। তাতে কিন্তু আইন কার্যকরে কোনো ব্যত্যয় হয়নি।
বিশিষ্ট আইনজীবী খুরশিদ আলম খান এ বিষয়ে দৈনিক জাগরণকে বলেন, আইনের বিধি প্রণয়ন করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নানা ব্যস্ততায় বিধি প্রণয়ন বিলম্বিত হতে পারে। তবে এ কারণে আইন বাস্তবায়ন বা কার্যকরে বাধা সৃষ্টি হয় না।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ সূত্র অবশ্য জানিয়েছে, এ আইনের বিধি প্রণয়নের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের প্রথম দিকে এ কাজ শেষ হতে পারে।
নতুন সড়ক পরিবহন আইনে যা আছে
শিক্ষাগত যোগ্যতা : আগের আইনে ড্রাইভিং লাইসেন্সের জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনো বাধ্যবাধকতা ছিল না। নতুন আইনের খসড়ায় ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য চালকের কমপক্ষে অষ্টম শ্রেণি পাসের শর্ত রাখা হয়েছে।
সহকারী হতেও শিক্ষাগত যোগ্যতা : আগের অধ্যাদেশে সহকারীদের লাইসেন্সের কথা থাকলেও তাদের শিক্ষাগত যোগ্যতার শর্ত ছিল না। নতুন আইনে চালকের সহকারীরও থাকতে হবে পঞ্চম শ্রেণি পাসের সার্টিফকেট। সহকারী হতে বাধ্যতামূলকভাবে লাইসেন্সের বিধান তো থাকছেই।
ন্যূনতম বয়স : ব্যক্তিগত গাড়ি চালনার জন্য চালকের বয়স আগের মতোই অন্তত ১৮ বছর রাখা হয়েছে। তবে পেশাদার চালকদের বয়স হতে হবে কমপক্ষে ২১ বছর।
দুর্ঘটনার সাজা দণ্ডবিধিতে : দুর্ঘটনার জন্য শাস্তি দেয়া হবে দণ্ডবিধি অনুযায়ী। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড। হত্যা না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হবে। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ থেকে ৫ বছরের কারাদণ্ড হবে।
সাজা হবে সহকারীরও : চালকের সহকারীর লাইসেন্স না থাকলে ১ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান আছে নতুন আইনের খসড়ায়।
নিষিদ্ধ মোবাইল ফোন : নতুন আইন পাস হলে গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে পারবেন না চালক। এ আইন ভাঙলে এক মাসের কারাদণ্ড বা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে।
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার : ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে- এমন অপরাধের ক্ষেত্রে চালককে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতারের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে পুলিশকে।
বিধি অমান্যে পয়েন্ট কাটা : নতুন এ আইনে লাইসেন্সে থাকবে মোট ১২ পয়েন্ট। বিভিন্ন বিধি অমান্যে কাটা যাবে এই পয়েন্ট। লালবাতি অমান্য, ওভারটেক, গতিসীমা অমান্য, বিপরীত দিক থেকে গাড়ি চালানো, ওজনসীমা লঙ্ঘন, নেশাগ্রস্ত হয়ে গাড়ি চালালে পয়েন্ট কাটা যাবে চালকের। এ বিধান আগে ছিল না। পয়েন্ট শূন্য হলে বাতিল হবে চালকের লাইসেন্স।
এ ছাড়াও, কর্তৃপক্ষ ছাড়া কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বা সমিতি ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরি, প্রদান ও নবায়ন করলে শাস্তি হবে অনধিক দুই বছর। নিবন্ধন (রেজিস্ট্রেশন) ছাড়া গাড়ি চালালে অনধিক ৬ মাসের জেল বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ডের বিধান রয়েছে।
নতুন আইনে বলা হয়েছে, ‘দণ্ডবিধির ৩০৪বি ধারায় যা–ই থাকুক না কেন, কোনো ব্যক্তির বেপরোয়া বা অবহেলাজনিত মোটরযান চালনার কারণে সংঘটিত কোনো দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি গুরুতরভাবে আহত বা নিহত হলে চালক সর্বোচ্চ ৫ বছরের কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।’ একইসঙ্গে এটি জামিন অযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হত্যাকাণ্ড প্রমাণ হলে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড। আগের আইনে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানিতে চালকের সর্বোচ্চ শাস্তি ৩ বছর এবং এটি জামিনযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য ছিল।
নতুন আইনে- বেপরোয়া যানবাহন পরিচালনার মাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটালে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান ৩ বছর। লেন ভঙ্গ ও হেলমেট ব্যবহার না করলে অনধিক ১০ হাজার টাকা জরিমানা। ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানোয় ৬ মাসের জেল ও ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড। নিবন্ধন ছাড়া গাড়ি চালানোয় ৬ মাসের জেল বা ৫০ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ড। ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানোয় ৬ মাসের জেল বা ২৫ হাজার টাকা বা উভয় দণ্ডের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।