মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:০৭ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইনে পাখি শিকার ও নিধন দুটিই দন্ডনীয় অপরাধ হলেও আইনের সঠিক বাস্তাবায়ন ও সচেতনতার অভাবে শিকারীদের ফাঁদে ধরা পড়ছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি প্রকৃতিতে শীতের আমেজ শুরু হলেই রঙ-বেরঙের অতিথি পাখি কলতানে মুখরিত হয়ে থাকে বানিয়াচংয়ের হাওর-বাওড়গুলো।
শীত মওসুম জুড়েই দেখা যায় সাদা বক, বালিহাঁস, সারস, পানকৌরিসহ দেশি-বিদেশি অসংখ্য পাখির। খাল বিল ও জলাশয়গুলোতে নানা প্রজাতির ছোট ছোট মাছ খাওয়ার লোভেই অতিথি পাখি ঝাঁকেঝাঁকে আশ্রয় নেয়। দিগন্তজুড়া উন্মুক্ত হাওয়ায় পাখা মেলে এক বিল থেকে অন্য বিলে উড়াউড়ি করে অতিথি পাখিরা। এদের কলকাকলিতে মুখরিত হয়ে উঠে প্রকৃতি। কিন্তু এক শ্রেণির স্বার্থান্বেষী মহল পাখির এমন অবাধ বিচরণে কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২০১২ সালের বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন অনুযায়ি পাখি নিধনের সর্বোচ্চ শাস্তি ১ লাখ টাকা জরিমানা, ১ বছরের কারাদন্ড বা উভয় দন্ডের বিধান থাকলেও এই আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করে মৌসুমী পাখি শিকারীরা পাখি শিকারে মেতে উঠেছেন। অথচ এক শ্রেণির অসাধু মানুষ তা হত্যা করছে এই পরিযায়ি পাখিগুলোকে। যা সভ্য সমাজের জন্য কাম্য নয়। শীত এলেই হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে উড়ে আসে এই অতিথি পাখিরা। আর এই অতিথি পাখিদের শিকার করে কেউ আর্থিকভাবে লাভবান হয় আবার কেউ রসনার তৃপ্তি মেটাচ্ছেন।
শিকারীরা বিষটোপ-বড়শিসহ নানা প্রকার ফাঁদ পেতে নির্বিচারে শিকার করছে এসব অতিথি পাখি। বাঁশের খুটি, কলা পাতা, খেজুর ডালের বেতের পাতা এসব উপকরণ দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরী করা ফাঁদ পেতে বসে থাকে শিকারীরা। নৌকা, জাল, বন্দুক ও অচেতন ঔষধসহ বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে পাখি শিকারে। প্রতিদিনই শিকরাীরা এই পন্থায় নানা রকমের পাখি শিকার করছে।
দিনদিন উপজেলাজুড়ে পাখি শিকারীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। তারা অবাধ পাখি শিকার করায় জলাশয়ে আসা পাখিরা নিরাপত্তহীন হয়ে পড়েছে। শিকার করা পাখিগুলো বাজারে এনে প্রকাশ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। কিন্তু পাখি শিকার ও দন্ডনীয় অপরাধ হলেও এ বিষয়ে প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই। ফলে অবাধে শিকার ও বিক্রি বেড়েছে পাখির। এই পাখিগুলোই সমাজের সচেতন মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষক, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের বড়বড় কর্তাব্যক্তিসহ বিভিন্ন পেশাজীবীরা গোপনে কিনে নিচ্ছেন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এসব অতিথি পাখি বার্ডফ্লুতে আক্রান্ত হতে পারে। আর এসব রোগাক্রান্ত পাখি খেয়ে মানবদেহে বার্ডফ্লু ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাখি শিকার ও নিধন বন্ধের আইন থাকলেও এর কার্যকরী ভূমিকা না থাকায় পাখি শিকারীদের তৎপরতা বন্ধ করা যাচ্ছেনা বলে অভিযোগ রয়েছে সাধারণ মানুষের।
এ বিষয়ে সালমান জামান সৈকত নামে এক পাখিপ্রেমী জানান, শীতের শুরুতেই বিভিন্ন জায়গা থেকে ঝাঁকেঝাঁকে পাখি আসে আশেপাশের জলাশয়গুলোতে এবং নদীর জেগে উঠা চরে এদের আনাগোনা বেশি। আর এই সুযোগে চোরা শিকারাীরা তা শিকার করে নেয়। পাখি শিকার বন্ধে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও কোনো ভুমিকা রাখছেন না। বরং সমাজের এই বিবেকরাই সুযোগ পেলে পাখি কিনে রসনার তৃপ্তি মেটাতে ব্যস্ত। জনসচেতনতা ছাড়া অতিথি পাথি শিকার রোধ করা সম্ভব না। এছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থা কঠোর আইন থাকা সত্ত্বেও তা প্রয়োগ না করায় শিকারীরা উৎসাহিত হচ্ছে দিনদিন। তিনি এ ব্যাপারে সমাজের সুশীল সমাজকে এগিয়ে আসারও আহবান জানান।
এ নিয়ে কথা হয় বানিয়াচং উপজেলা নির্বাহী অফিসার মামুন খন্দকারের সাথে। তিনি এই প্রতিবেদককে জানান,পাখি শিকার জীব বৈচিত্রের জন্য দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি। পাখি শিকার ও বিক্রি রোধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। চালানো হবে অভিযানও।