মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১:৩৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার আহতদের চিকিৎসায় ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। এ মেডিকেল বোর্ডের প্রধান হচ্ছেন- ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জারী বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাজিউল হক।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) রাত ৯টায় এই মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে বলে জানান হাসপাতাল পরিচালক ব্রি. জে. নাসির উদ্দিন।
তিনি বলেন, গঠিত মেডিকেল বোর্ডের পরার্মশ অনুযায়ী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৫ জনের চিকিৎসা চলবে।নুরসহ তাদের সবাই শঙ্কামুক্ত রয়েছেন।
এর আগে গত রোববার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সমর্থকদের ওপর হামলার ঘটনায় ছয় সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। গতকাল সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দফতর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
এ কমিটিতে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আবু মো.দেলোয়ার হোসেনকে ছয় সদস্যবিশিষ্ট কমিটির আহ্বায়ক করা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- শামসুন নাহার হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. সুপ্রিয়া সাহা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেট সদস্য অধ্যাপক ড. অসীম সরকার, স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. মহিউদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সদস্য ড. মো. মিজানুর রহমান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাঈনুল করিম। ঘটনাটি তদন্ত করে ছয় কার্যদিবসের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে সুপারিশসহ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য কমিটিকে অনুরোধ করা হয়েছে।
অপরদিকে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরই গতকাল সকালে শাহবাগ এলাকা থেকে ভিপি নুরের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িত মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন এবং তার সহযোগী উয়াসির আরাফাত তূর্যকে আটক করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা কার্যালয়ে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) ভিপি নুরুল হক নুর ও তার সংগঠনের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক ইয়াসির আরাফাত তূর্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ডিএমপির গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার মো. আবদুল বাতেন।
রোববার দুপুর পৌনে ১টার দিকে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীদের ওপর হামলা চালায় মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের একাংশের নেতাকর্মীরা। হামলায় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাও অংশ নেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ওই হামলায় নুরসহ অন্তত ২২ জন আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ডাকসু ভবনের মূল ফটক বন্ধ করে নুরের ওপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা করা হয়। এছাড়া বাইরে থেকেও মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা ইটপাটকেল ছোড়েন। হামলায় অন্তত ২২ জন আহত হন। এরপরই ভিপি নুরসহ আহত ছয়জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আহতদের মধ্যে ফারাবীকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। এছাড়া আহত বাকিদের চিকিৎসা দিয়ে ঢামেক থেকে ছেড়ে দেয়া হয়। তবে চিকিৎসাধীন ৫ জনই শঙ্কামুক্ত বলে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকরা মন্তব্য করেছেন। হামলার পর সন্ধ্যায় আহত নুরকে দেখতে হাসপাতালে যান আওয়ামী লীগের নতুন প্রেসিডিয়াম সদস্য নানক ও নাছিম। তবে হাসপাতালে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাধার মুখে পড়েন তারা। আওয়ামী লীগের দুই নেতাকে সামনে পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে শ্লোগানও দেয়া শুরু করেন অনেকে। এরপর তারা সাংবাদিকদের বলেন, হাসপাতালে যারা শ্লোগান দিয়ে পরিবেশ নষ্ট করছে, তারা কী উদ্দেশে এগুলো করছে, তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। এছাড়া নুরদের ওপর হামলাকারীদের শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান তারা।
সোমবার দুপুরে সচিবালয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, ডাকসু হামলার সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক এবং সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। ডাকসুতে যে হামলা হয়েছে তা নিন্দনীয়। হামলার সঙ্গে যারাই জড়িত হোক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। দলের পক্ষ থেকে এ হামলায় তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।
এর আগে, ভারতের জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) ও নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের (সিএবি) বিরুদ্ধে আন্দোলনরত ভারতীয়দের প্রতি সংহতি জানাতে গত ১৭ ডিসেম্বর বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে নুর ও তার সহযোগীদের বিক্ষোভ মিছিল ও সংহতি সমাবেশে হামলা হয়। এই হামলায়ও আল মামুন এবং তূর্যরা নেতৃত্ব দিয়েছেন বলে অভিযোগ নুরের সহযোগীদের।