বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : শীতের হিম প্রান্তর পেরিয়ে এখন ছুটছে ঋতুরাজ বসন্তের পালকি। সিলেটের প্রায় সব অঞ্চলেই ভাটা পড়েছে শীতের যৌবনে, সেই সাথে প্রতিদিনই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাপমাত্রা। অথচ দু\’সপ্তাহ আগেও তীব্র শীত আর শৈত্যপ্রবাহে সিলেটের মানুষ ছিলেন জবুথবু। বিশেষ করে সদ্য বিদায়ী মাঘ মাসে শ্রীমঙ্গলে লাগাতার থাকতো রেকর্ড পরিমাণ দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা।
জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে সিলেটের সব অঞ্চলেই কমে এসেছে শীতের তীব্রতা। লোকজনের মাঝে চলছে এখন কম্বল আর গরম কাপড়কে গুটিয়ে রাখার প্রস্তুতি।
সিলেট দক্ষিণ সুরমার ভার্থখলা একলাকার বাসিন্দা ব্যবসায়ী ইকবাল আহমদ এ প্রতিবেদককে বলেন, ৪/৫ দিন ধরে রাতের বেলা গরম কাপড় বা কম্বল ব্যবহার করতে হয় না। যা দুই সপ্তাহ আগেও এমনটা চিন্তা করা যেতো না। রাতের বেলা কোথাও বের হলে সুয়েটার বা জ্যাকেট নিয়ে বের হওয়াই লাগতো। আর ঘুমানোর সময় তো কম্বল ছিলো অপরিহার্য।
সিলেট আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, জলবায়ুর প্রভাবে এবারে সিলেটসহ পুরো দেশে শীত আসা-যাওয়ায় ব্যত্যয় ঘটলেও এ মৌসুমে আর শৈত্যপ্রবাহ আসা বা তীব্র শীত পড়ার সম্ভাবনা নেই। এখন দিন দিন তাপমাত্রা বাড়তেই থাকবে সিলেটে।
আজ ৬ ফাল্গুন। মাত্র ৫ দিন আগে বিদায় নিয়েছে শীত ঋতু। তবে এবারের শীত প্রসঙ্গে আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ুর প্রভাব শীত ঋতুর ওপর চেপে বসেছিলো। এবারের মাঘের শীত ছিল একটানা। এই সময় মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ অব্যাহত ছিলো। বিশেষজ্ঞরা বলছেন- জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশের ছয় ঋতুর ওপর স্পষ্ট হতে শুরু করছে। যার ফলে ঋতুবৈচিত্র্যে ধারাবাহিকতা থাকছে না। এর প্রভাব শীতেও এসে লেগেছিলো। ফলে প্রতি বছর শীতের ধারাবাহিকতা যেমন থাকছে না- তেমনি ঋতু বৈচিত্র্যে নিয়ম অনুযায়ী শীত তার বৈশিষ্ট্য ধরে রাখতে পারছে না। আবার নির্দিষ্ট প্যারামিটার ধরে শীত আসছে না। এবারের শীত ঋতু বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে- পৌষের চেয়ে মাঘ মাসেই শীতের দাপট ছিলো বেশি। যা বিগত বছরগুলোতে দেখা যায়নি।
আবহাওয়াবিদের হিসেব অনুযায়ী- বাংলাদেশে ইংরেজি মাসের ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শীতে দাপট থাকে। এর মধ্যে মধ্যডিসেম্বর থেকে মধ্যজানুয়ারি পর্যন্ত শীতের প্রকোপ থাকে বেশি। এরপর শীত কমতে থাতে। এরই মধ্য ডিসেম্বর থেকে মধ্যজানুয়ারি হচ্ছে বাংলা অনুযায়ী এই সময় পৌষ মাস। নিয়ম অনুযায়ী পৌষ মাসের শীতের আধিক্য থাকার কথা। মাঘেও শীতের অনুভুতি থাকে বেশ, তবে শীতের দাপট কম থাকে। এবার এই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেছে সিলেটসহ পুরো দেশে। মাঘজুড়ে শীত ছিলো একটানা। মাসজুড়েই ছিলো মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। কিন্তু পৌষে শৈত্যপ্রবাহ খুব একটা দেখা মেলেনি। তবে কয়েক দফায় বৃষ্টিপাতের কারণে পৌষে শীতের দাপট বেশি ছিলেঅ। আর মাঘ মাসে বৃষ্টিপাত ছাড়াই শীত দেখিয়ে গেছে দাপট।
এদিকে, দেশের কিছু কিছু অঞ্চলে এখনও শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, এ মাসের শেষ দিকে তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়বে। আগামী মাস অর্থাৎ মার্চে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছতে পারে। অন্যদিকে মার্চ মাসে তীব্র কালবৈশাখী ও বজ্রঝড়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ- এ তিন মাসের আবহাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
ফেব্রুয়ারি মাসের শেষার্ধের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, এ সময় দিন ও রাতের তাপমাত্রা ক্রমান্বয়ে বাড়তে পারে। এছাড়া এ সময়ে দেশের উত্তর, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন বজ্রঝড় হতে পারে।
মার্চ মাসের পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে সামগ্রিকভাবে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হতে পারে। দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ১ থেকে ২ দিন মাঝারি/তীব্র কালবৈশাখী/বজ্রঝড় এবং দেশের অন্যত্র ২ থেকে ৩ দিন হালকা/মাঝারি কালবৈশাখী/বজ্রঝড় হতে পারে।