শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০৭ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার অজুহাতে ভারত ছাড়ার নোটিসের বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া বাংলাদেশি ছাত্রীর পক্ষে নৈতিক ও আইনি সমর্থনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষকরা।
নাগরিগত্ব সংশোধন আইন (সিএএ) নিয়ে ক্যাম্পাসে এক বিক্ষোভের কয়েকটি ছবি সম্প্রতি ফেইসবুকে পোস্ট করার পর বুধবার ওই ছাত্রী স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিদেশি নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয় থেকে আসা নোটিসটি পান, যাতে ১৫ দিনের মধ্যে তাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে।
সেখানে কারণ হিসেবে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী আফসারা আনিকা মিম স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে ভারতে পড়তে এসে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে ভিসার শর্ত লঙ্ঘন করেছেন’ বলে উল্লেখ করা হলেও নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগের কথা নেই।
গ্রাফিক ডিজাইনের প্রথম বর্ষের ছাত্রী কুষ্টিয়ার মেয়ে আফসারাও বুঝতে পারছেন না কেন তাকে এই শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। নোটিসটি পুনর্বিবেচনার জন্য বৃহস্পতিবার বন্ধুদের নিয়ে কলকাতায় বিদেশি নিবন্ধকের আঞ্চলিক কার্যালয়েও গিয়েছিলেন ২০ বছর বয়সী এই তরুণী।
বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাতে রয়েছে জানিয়ে সেখান কর্মকর্তারা কিছু করার জানিয়ে দিয়েছেন বলে টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। এক বন্ধুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, আফসারা নিজের বক্তব্য কয়েকটি অফিসে লিখিতভাবে জানাতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা পরামর্শ দিয়েছেন।
তবে ওই আদেশের বিরুদ্ধে আইনি প্রতিকার খুঁজতে বৃহস্পতিবারই বিশ্বভারতীর শিক্ষকদের একটি অংশ কলকাতার জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের দ্বারস্থ হয়েছেন।
জ্যেষ্ঠ এক অধ্যাপক বলেন, “মেয়েটি কয়েকটা ছবি সোশাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিল। তার ভিত্তিতে তাকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে। আমরা এর মধ্যেই কলকাতা হাই কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। আমরা ওই ছাত্রীকে সব ধরনের সহায়তা দেব।”
তাদের অন্যতম হাই কোর্টের আইনজীবী শামিম আহমেদ বলেন, আফসারাকে দেওয়া নোটিসকে আইনগতভাবে চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে। কারণ তাতে ‘সরকারবিরোধী কর্মকাণ্ডে’ তার জড়িত থাকার কোনো প্রমাণ নেই।
“ওই আদেশ ও তার ফেইসবুক পোস্ট আমি ভালভাবে খতিয়ে দেখেছি।আদেশে এমন কোনো নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ নেই যা দিয়ে প্রমাণিত হয় ওই ছাত্রী সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করেছেন। মন্তব্য করা তার অধিকার এবং এর জন্য কেন্দ্র থেকে তাকে দেশ ছাড়তে বলা খুবই অস্পষ্ট একটা কারণ। এমনকি ওই নোটিস দেওয়ার আগে তাকে নিজের বক্তব্য উপস্থাপনের সুযোগ দেওয়া হয়নি।”
ওই ছাত্রীকে তিনি আইনি সহায়তা দেবেন বলে জানান এই আইনজীবী।
এদিকে বাংলাদেশি ছাত্রীকে ভারত ছাড়ার নোটিস দেওয়ায় সমালোচনামুখর রয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
ভারতের মতো মুক্ত দেশে যেখানে পাকিস্তানের সঙ্গে মধ্যস্ততার ঘোষণা দেওয়ার পরেও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে আমন্ত্রণ জানানো হয়, সেখানে বাংলাদেশের মেয়ে কেন নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরুদ্ধের প্রতিবাদের ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করতে পারবে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিশ্বভারতীর স্টুডেন্ট ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ার (এসএফআই) নেতা সোমনাথ সৌ।
তিনি বলেন, “ওই নোটিসের মধ্য দিয়ে তার প্রতি অবিচার হয়েছে। এঘটনার প্রতিবাদে আমরা রাজনৈতিক আদর্শ নির্বিশেষে সোমবার সর্বদলীয় বৈঠক ডেকেছি। ওই আদেশের বিরুদ্ধে আমরা অবশ্যই প্রতিবাদ করব।”
বিশ্বভারতীতে সিএএবিরোধী বিক্ষোভে যেসব শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছেন, আফসারা এধরণের কোন ঘটনায় জড়িত নয় বলে তারাও নিশ্চিত করেছেন। তাদের অন্যতম অর্থনীতির ছাত্র স্বপ্নীল মুখার্জী গত জানুয়ারিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভে অংশ নিয়ে গুণ্ডাদের হামলার শিকারও হন।
তিনি বলেন, “বিশ্বভারতী এমন একটা জায়গা যেখানে বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা পড়তে আসে এবং আমাদের বন্ধু হয়ে যান। এদের বেশিরভাগই বাংলাদেশের। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, ওই ছাত্রী মোটেই কোনো প্রতিবাদে অংশ নেননি। আমরা তার সাথে আছি।”
কর্মকর্তার নাম প্রকাশ না করে টেলিগ্রাফ বলেছে, বিশ্বভারতীতে প্রায় ১০০ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন, যাদের অনেকেই আফসানাকে নোটিস দেওয়ার পর ভয়ে আছেন।
এক বাংলাদেশের এক শিক্ষার্থী বলেন, অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থীই ফি বাড়ানো থেকে শুরু করে সিএএর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ মিছিল দেখতে গিয়েছিলেন। আর আফসারা শুধুই কতগুলো ছবি ফেইসবুকে পোস্ট করেছিলেন। এটার আমাদের জন্য ভয়ার্ত এক পরিস্থিতি।
তবে বিশ্বভারতীর ক্ষমতাসীন বিজেপির ছাত্র সংগঠন এবিভিপির নেতারা আফসারাকে নোটিস দেওয়ায় খুশি। কারণ তার বিরুদ্ধে তদন্ত ও পদক্ষেপের দাবি জানিয়ে তারাই গত ২৩ জানুয়ারি ভিসি বিদ্যুৎ চক্রবর্তীর কাছে লিখিত দাবি জানিয়েছিলেন।
ওই চিঠির একটি অনুলিপি তারা দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয়েও পাঠিয়েছেন।
এবিভিপি নেতা অপূর্ব শারদ বলেন, “ভিসির কাছে লেখা চিঠিতে আমরা ওই মেয়ের সিএএবিরোধী ভূমিকার কথা তুলে ধরেছিলাম।