বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:২০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আত্মস্বীকৃত খুনি ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদের (বরখাস্ত) ফাঁসির রায় কার্যকর করা হয়েছে।
রোববার (১২ এপ্রিল) প্রথম প্রহর রাত ১২টা ১ মিনিটে (শনিবার, ১১ এপ্রিল) কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে এই খুনিকে দড়িতে ঝুঁলিয়ে ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
কারা অধিদফতরের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল একেএম মোস্তফা কামাল পাশা গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তিনি বলেন, রাত ১২টা ১ মিনিটে দড়িতে ঝুলিয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।
এর আগে রাত ১০টা ৫২ মিনিটে কারাগারে গিয়ে পৌঁছান কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা। তারও আগে রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার সিভিল সার্জন পৌঁছান কারাগারে। ১০টা ৪৭ মিনিটে পৌঁছান জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
দ্রুত সময়ে মধ্যে আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
২০১৬ সালের ১০ এপ্রিল উদ্বোধন হওয়া এ কারাগারে এটাই প্রথম কোনও দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসি কার্যকর হলো।
এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মাজেদের লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা প্রক্রিয়া চলছিল। বঙ্গবন্ধুর খুনির লাশ ভোলায় নিয়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখানেই পারিবারিক করবস্থানে তাকে দাফনের কথা। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ঘোষণা দিয়েছে ভোলায় বঙ্গবন্ধুর খুনিকে দাফন করতে দেয়া হবে না। মাজেদের লাশ বঙ্গোপসাগরে ভাসিয়ে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন ভোলা-৩ আসনের সংসদ সদস্য নূরুন্নবী চৌধুরী শাওন।
মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করা নিয়ে শনিবার কারাগারের চারপাশে বিকাল থেকেই নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পুলিশের তিন স্তরের নিরাপত্তাবেষ্টনি চারদিক থেকে কারাগার ঘেরাও করে রাখে।
শনিবার সন্ধ্যায় কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুত এবং মঞ্চের লাইট জ্বালিয়ে দেয়া হয়। বাইরেও আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যদের সংখ্যা বাড়ানো হয়।
চূড়ান্ত ফাঁসির আগে দিনের বেলায় ট্রায়াল দেয়া হয়।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) মাজেদের ফাঁসি কার্যকর করতে শাহজাহানের নেতৃত্বে জল্লাদের একটি দল প্রস্তুত করে রাখে ঢাকা জেল কর্তৃপক্ষ। সেই তালিকায় ছিলেন জল্লাদ আবুল, তরিকুল ও সোহেলসহ মোট ১০ জন। তবে মূল জল্লাদের ভূমিকায় কে ছিলেন তা তাৎক্ষণিক জানা যায়নি।
শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধুর খুনি আবদুল মাজেদের সঙ্গে পরিবারের পাঁচ সদস্য কারাগারে দেখা করেন। তাদের মধ্যে ছিলেন- স্ত্রী সালেহা বেগম, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই, ভাতিজা ও একজন চাচাশশুর।
বুধবার (৮ এপ্রিল) কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন মাজেদ। রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ৯ এপ্রিল (বৃহস্পতিবার) তার আবেদন নাকচ করে দেন। ওই দিনই তার মৃত্যু পরোয়ানার ফাইল রাষ্ট্রপতির কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। এই ফাইল কারা কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হয়। এরপর কারাবিধি ও সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হয়।
দীর্ঘ দেড় যুগের বেশি সময় ভারতে পালিয়ে থাকা বঙ্গবন্ধুর এই আত্মস্বীকৃত খুনি মঙ্গলবার (৭ এপ্রিল) মিরপুর সাড়ে ১১ থেকে গ্রেফতার করে ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) একটি দল।
গত মাসে দেশে ফিরে মাজেদ স্ত্রীর ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকার এক নম্বর রোডের ১০/এ বাড়িতে বসবাস করছিলেন। পরদিন বুধবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে আদালতের নির্দেশে কারা কর্তৃপক্ষ আসামিকে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ হেলাল চৌধুরীর আদালতে হাজির করেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউটররা আসামি গ্রেফতার দেখানোসহ আসামির বিরুদ্ধে মৃত্যু পরোয়ানা জারি করার আবেদন করেন। শুনানি শেষে আদালত আসামি আবদুল মাজেদকে গ্রেফতারসহ মৃত্যু পরোয়ানার আবেদন মঞ্জুর করেন।
একই দিন সন্ধ্যায় কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করে আবদুল মাজেদ। আবেদন খারিজের পর নিয়ম অনুযায়ী তার ফাঁসির কার্যকরে আর কোনও বাধা ছিল না।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়। ৩৪ বছর পর ২০০৯ সালের ১৯ নভেম্বর বর্বরোচিত এই হত্যাকাণ্ডের বিচার শুরু হয়। দীর্ঘ ১২ বছরে নিম্ন আদালত থেকে শুরু করে আইনের প্রতিটি ধাপ স্বচ্ছতার সঙ্গে অতিক্রম করে সর্বোচ্চ আদালতের মাধ্যমে স্বঘোষিত খুনিদের মৃত্যুদণ্ডের রায় দেয়া হয়।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ১২ আসামির মধ্যে কারাবন্দি পাঁচ আসামির ২০১০ সালের ২৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে ফাঁসি কার্যকর হয়। তারা হলো- সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, মুহিউদ্দিন আহমেদ, বজলুল হুদা ও এ কে এম মহিউদ্দিন আহমেদ।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অন্য ৬ আসামি পলাতক ছিলেন। তাদের মধ্যে আবদুল মাজেদকে গ্রেফতার করা হয়।
পলাতক বাকি ৫ জনের মধ্যে লে. কর্নেল (অব.) খন্দকার আবদুর রশীদ (বরখাস্ত) লিবিয়া ও বেলজিয়ামে অবস্থান করছেন। বেশিরভাগ সময় লিবিয়াতে থেকেই ব্যবসা-বাণিজ্য করছেন। লে. কর্নেল (অব.) শরীফুল হক ডালিম (বরখাস্ত) পাকিস্তানে অবস্থান করছেন বলে জানা গেছে। লে. কর্নেল (অব.) এ এম রাশেদ চৌধুরী (বরখাস্ত) যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসে, লে. কর্নেল (অব.) এন এইচ এমবি নূর চৌধুরী (বরখাস্ত) কানাডায় রয়েছেন।রিসালদার মোসলেম উদ্দিন ভারতের কারাগারে আটক বলে ধারণা করা হচ্ছে।