বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৪ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

নওগাঁয় গো-খাদ্যের সংকটসহ নানামুখি সমস্যায় খামারীরা

মো. শহিদুল ইসলাম, নওগাঁ : করোনা ভাইরাস প্রতিরোধের সময় যতই দীর্ঘ হচ্ছে জেলার খামারীদের গোবাদি পশু নিয়ে সংকট ততই জটিল হচ্ছে। সকল হাট, বাজার, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও যানবাহন বন্ধ থাকায় খামারীরা তাদের খামারের গরু, ছাগল, ভেড়া, মহিষ, মুরগী, মুরগীর বাচ্চা বাজারজাত করতে না পারায় চরম বিপাকে পড়েছেন। অপরদিকে করোনা ভাইরাসের কারণে গো-খাদ্য না পাওয়ায় ও গো-খাদ্যের দাম অনেক বেশি হওয়ায় লোকসান গুনতে হচ্ছে এই সব ছোট-বড় খামারীদের। অনেকেই পুজি হারিয়ে পথে বসেছেন। এই সংকটের কারণে বাজারে মাংসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জেলায় ছোট-বড় গাভীর খামার ১৬৩৮টি, হৃষ্টপুষ্ট খামার ৭০৬১টি, মহিষের খামার ৪২টি, ছাগলের খামার ১৫১৩টি ও ভেড়ার খামার রয়েছে ৫৮৭টি। দেশের সিংহভাগ মাংসের চাহিদা পূরণ হয় ছোট-বড় খামারে উৎপাদিত গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও মুরগির মাধ্যমে। জেলার অধিকাংশ খামারীরা অধিক সুদে ঋণ নিয়ে খামার প্রতিষ্ঠা করেছেন। অধিকাংশ খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া মোটা-তাজাকরন করে নির্দিষ্ট সময় পর তা বাজারজাত করা হয়। এছাড়াও মুরগীর বাচ্চা উৎপাদনকারী খামারীরা লোকসানের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছেন। পূর্বে বাচ্চাগুলো বিক্রি হতো ৪০-৫০টাকা করে সেই বাচ্চাগুলো বর্তমানে ৬-১০টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না। এজন্য খামারীরা বর্তমানে বাচ্চা উৎপাদন বন্ধ রেখেছেন।

অপরদিকে গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া, মুরগী অর্ধেক দামেও কেউ কিনছেন না। এদিকে সবকিছু বন্ধ থাকায় খামারীরা গো-খাদ্যের চরম সংকটে পড়েছেন। যেটুকু খাবার পাওয়া যাচ্ছে তার দামও দ্বিগুনের চেয়েও অনেক বেশি। যার কারণে ছোট পুজির খামারীরা পথে বসতে শুরু করেছেন। খামারীরা যদি লোকসানের মুখে তাদের খামারের উৎপাদন বন্ধ করে দেয় তাহলে দেশে মাংসের কৃত্রিম সংকট দেখা দিবে। তাই কৃষি খাতে সরকার যে প্রণোদনা ঘোষনা করেছেন তা মাঠ পর্যায়ে তালিকা করে দ্রুত যদি কৃষক ও খামারীদের মাঝে পৌছানো না হয় তাহলে দেশে চরম সংকটের সৃষ্টি হবে। এছাড়াও গো-খাদ্য, ফিডসহ অন্যান্য খাবার সামগ্রীগুলোর মূল্য কমিয়ে বাজারজাত করার জন্য সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন খামারীরা।

রাণীনগর উপজেলার পল্লীশ্রী সমন্বিত প্রদর্শনী খামারের জেনারেল ম্যানেজার মাহফুজুর রহমান (রনি) বলেন গো-খাদ্যের সংকট, কম দামেও মুরগির বাচ্চা কেউ কিনছেন না যার কারণে আমরা খামারীরা বিপদে পড়েছি। বর্তমানে খামারে গরু, ছাগল, ভেড়া বিক্রির উপযুক্ত হলেও বিক্রি করতে পারছি না। এতে করে গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া গো-খাদ্যের সরবরাহ বন্ধ থাকায় যে খাদ্য পাওয়া যাচ্ছে সেগুলো আবার দ্বিগুণের চেয়ে বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। এতে করে লাভের চেয়ে লোকসান বেশি হচ্ছে। গোবাদি পশুগুলো বিক্রি করতে না পারায় খামারের কর্মচারীদের বেতন-ভাতা দিতে পারছি না। এমতাবস্থায় সরকারের প্রণোদনা দ্রুত না পেলে খামারীরা চোখে সরিষার ফুল দেখবেন। তাই আমাদের দিকে সরকারের দ্রুত নজর দেওয়া উচিত।

জেলা প্রশাসক মো: হারুনÑঅর-রশিদ বলেন মাঠ পর্যায়ে ছোট-বড় খামারীদের তালিকা তৈরির কাজ চলমান। প্রণোদনার বরাদ্দ এলেই তা খামারীদের মাঝে বিতরন করা হবে।

নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মো: ইসরাফিল আলম বলেন মাঠ পর্যায়ে যাচাই-বাছাইয়ের মাধ্যমে তালিকা করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থ্য খামারীদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া, বাজার সহজলভ্য করা এবং ঘোষনা করা প্রণোদনার সুবিধা দ্রুত না দিলে দেশে মাংসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হতে পারে। কৃষিখাতের মতো দেশের খামারী শিল্পটাকে টিকে রাখতে হলে এই খাতেও প্রণোদনার পরিমাণটা বৃদ্ধি করা উচিত।

জেলার ছোট-বড় খামারী ও খামার সংশ্লিষ্ট সকল খাতে সরকার যদি এখনই সুদৃষ্টি না দেয় ও সুষ্ঠু পদক্ষেপ গ্রহণ না করে তাহলে কয়েক হাজার খামার লোকসানের মুখে বন্ধ হয়ে যাবে এমনটিই আশঙ্কা করছেন সচেতন মহল।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com