বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসন ৭ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করছেন। এ আসনকে ঘিরে আলোচিত সারা দেশ। এ আসনে হঠাৎ করে নির্বাচনের আমেজে ভাটা পড়েছে। আলোচনায় এসেছে ড. রেজা কিবরিয়া এলাকা ত্যাগের বিষয়। আওয়ামী লীগের প্রার্থীর ব্যাপক প্রচারণা করলেও মাঠে নেই ধানের শীষের প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী গণফোরামের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য রেজা কিবরিয়া নির্বাচনী এলাকা ছেড়ে ঢাকায় চলে গেছেন।
হবিগঞ্জ-১ আসনে কোন সহিংসতার ঘটনা না ঘটলেও নিরাপত্তাহীনতা বোধ করায় গত রোববার রাতে নির্বাচনী এলাকায় নবীগঞ্জের গ্রামের বাড়ি ত্যাগ করে ঢাকায় চলে গেছেন বলে জানিয়েছেন রেজা কিবরিয়া। ফলে তার কোন প্রচারণা চোখে পড়ছে না।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে বঙ্গবন্ধু সরকারের সাবেক প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজীর ত্বনয় গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজ মিলাদ গাজী এবং ঐক্যফ্রন্ট থেকে ধানের শীষ প্রতিক নিয়ে সাবেক অর্থমন্ত্রী মরহুম শাহ এমএস কিবরিয়ার তনয় বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়ার মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বীতা হবার কথা থাকলেও প্রচারণায় পিছিয়ে পড়েছেন ড. রেজা কিবরিয়া। ফলে দুই মন্ত্রী পুত্রের লড়াইয়ে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে নিরাপত্তার অজুহাত।
এ ছাড়াও জাপা মনোনীত প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব আতিকুর রহমান আতিক, ইসলামী আন্দোলনের মনোননীত প্রার্থী হাত পাখা নিয়ে মাওলানা আবু হানিফ মোঃ আহমদ হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের মনোনীত প্রার্থী গামছা প্রতীক নিয়ে অ্যাডভোকেট নুরুল হক, বাসদ মনোনীত প্রার্থী মই প্রতীক নিয়ে চৌধুরী ফয়সল শোয়েব, ইসলামী ফ্রন্টের মনোনিত প্রার্থী মোমবাতি প্রতীক নিয়ে হাফেজ জুবায়ের আহমদ।
নির্বাচনের দিন ঘনিয়ে আসলেও আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী গাজী মোঃ শাহ নওয়াজ মিলাদ গাজী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর নজরে পড়ার মত কোন প্রচার প্রচারনা নেই। উক্ত আসনে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে নৌকার পোষ্টার ছাড়া অন্য কোন পোষ্টার নজরে পড়েনি। ফলে জমে উঠেনি হবিগঞ্জ-১ (বাহুবল-নবীগঞ্জ) আসনের সংসদ নির্বাচন।
ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত ধানের শীষ প্রার্থী ড. রেজা কিবরিয়া অভিযোগ করেন, আমাদের নেতাকর্মীরা গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন, প্রতি রাতেই পুলিশ একাধিকবার বসতঘরের কড়া নাড়ছে। ফলে আমরা নির্বাচনী প্রচারণায় ভোটারদের দারস্থ হতে পারছিনা। দেশে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীদের ওপর যেভাবে হামলা ও হেনস্তা করা হচ্ছে, তাতে তিনি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন।
এ ছাড়া তাঁর দল গণফোরাম তাঁর নিরাপত্তার বিষয়টিকে বেশ গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এ কারণে দলীয় প্রধানের নির্দেশে আপাতত তিনি নির্বাচনী এলাকায় থাকছেন না এবং ঢাকায় তার কয়েকটি জরুরি মিটিং রয়েছে তাই ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি আবার জনগণের পাশে ফিরে আসবেন বলে জানান।
রেজা কিবরিয়া বলেন, তিনি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন নির্বাচনের আগ পর্যন্ত এলাকায় থাকার কথা ছিলো। কিন্তু এলাকায় এসে দেখতে পেলাম ঐক্যফ্রন্টের নেতাকর্মীদের বিভিন্ন গায়েবি মামলায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এতে দলে আতঙ্ক ছড়িয়েছে পুলিশ। তিনি স্থানীয় পুলিশের সঙ্গে এ নিয়ে কথাও বলেছেন। তবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে তিনি আবার জনগণের পাশে ফিরে আসবেন বলে জানান।
এছাড়াও বিএনপির প্রার্থী সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া মনোনয়ন না পাওয়ায় তার দলের নেতাকর্মীরা ক্ষুদ্ধ অবস্থায় রয়েছেন। ফলে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী ড.রেজা কিবরিয়ার সাথে বিএনপি নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ ব্যাপারে ড. রেজা কিবরিয়া বলেন, আমি নিজে সুজাত সাহেবের সাথে কথা বলেছি, কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ কথা বলেছেন কয়েকদিনের মধ্যে শেখ সুজাত মাঠে নামবেন। খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য হলেও বিএনপিকে মাঠে নামতে হবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি শেখ সুজাত মিয়া বলেন, এখানে কোন নিরাপত্তার প্রশ্নই আসে না যেখানে কোন প্রচার করেননি ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী। তিনি এখনো আমাদের সাথে নির্বাচন নিয়ে কোন পরিকল্পণা বা যোগাযোগ করেননি। তিনি এলাকার ছেড়ে যাবার আগে আমাদেরকে জানাতে পারতেন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রশাসন আমাদেরকে কোন হুমকি দেয়নি। আমি মনে করি হবিগঞ্জ-১ আসনে এখনো নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়নি। ড. রেজা আমার সাথে যোগাযোগ না করলেও আমি নিজ উদ্দ্যেগে আজ (মঙ্গলবার) উপজেলা বিএনপির বর্ধিত সভা ডেকেছি এর পরেই মাঠে নেমে পড়বো।
অপরদিকে জাতীয় পাটির বর্তমান এমপি এমএ মুনিম চৌধুরী বাবুর রয়েছে একটি শক্তিশালী কর্মীবাহিনী। তাকে জাতীয় পাটির মনোনয়ন না দেয়ার তার কর্মীরা ক্ষুব্ধ। মুনিম চৌধুরী বাবু স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তিনি এখনো কোন প্রার্থীর পক্ষে মাঠে নামেননি।
এ দিকে জাতীয় পার্টি নতুন মুখ আতিকুর রহমান আতিক নেতাকর্মীদের ম্যানেজ করতে নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হাটছেন। ফলে বাধ্য হয়ে নির্বাচনী প্রচারণা থেকে দূরে রয়েছে জাপার একটি বড় অংশ।
এ ব্যাপারে জাপার বর্তমান এমপি মুনিম চৌধুরী বাবু বলেন, আমি দলের বাহিরে নয় মহাজোটের নির্দেশ মতো কাজ করবো।
জাতীয় পার্টি প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক, হবিগঞ্জ-১ সব প্রার্থীর যথাযত নিরাপত্তার বিধান রয়েছে এখানে কেউ নিরাপত্তহীনতায় ভোগার কথা নয়, রেজা সাহেব কেন এলাকায় নেই সেটা তার নিজস্ব ব্যাপার। আমি মাঠে কোন বাঁধার সম্মুখীন হই নাই।
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থী গাজী মোঃ শাহনওয়াজ মিলাদ গাজী বলেন, এলাকায় নির্বাচনের সুষ্টু পরিবেশ বিরাজ করছে। এখানে কোন নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আসতেই পারে না কারণ এখনো সহিংসতার ঘটনা ঘটেনি। ড. রেজা কিবরিয়া তার মনগড়া বক্তব্য দিয়ে পরিবেশ উতপ্ত করতে চাইছেন।
এ ছাড়া ইসলামী আন্দোলন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বাসদ ও ইসলামী ফ্রন্টের তেমন কোন কর্মী সমর্থক না থাকায় প্রার্থীরা প্রচার প্রচারনায় এগুতে পারছেন না।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে নবীগঞ্জ-বাহুবলের দায়িত্বে নিয়োজিত (সার্কেল) সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন, হবিগঞ্জ-১ আসনে পুলিশ প্রার্থীদের যথাযথ নিরাপত্তা বিধান করছে এখানে কেউ নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা নয়। রেজা কিবরিয়া যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করেই থাকেন, তাহলে বিষয়টি পুলিশকে জানাতে পারতেন কিন্তু তিনি বিষয়টি আমাদেরকে জানাননি। রেজা কিবরিয়া কেন এলাকা ছেড়েছেন তাদের জানা নেই। তিনি বলেন, ওই এলাকায় কোনো ঝুঁকির কারণ নেই। এখনো সহিংসতার ঘটনা এখানে ঘটেনি তাই নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন আসতে পারে না।