মঙ্গলবার, ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:২২ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : ঘূর্ণিঝড় আম্পান বাংলাদেশ ঊপকূলে বড় ধরনের ধ্বংসযজ্ঞ না চালালেও এর প্রভাবে ঊপকূলীয় এলাকাগুলো বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হওয়া শুরু করেছে।
বুধবার সন্ধ্যা থেকে শুরু হওয়া ঝড়ো হাওয়ার প্রভাবে গাছ পড়ে, তার ছিঁড়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে ঘণ্টাখানেকের মধ্যে ঊপকূলে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের অন্তত ১৭টি সমিতির ১০ লাখের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছেন বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
এর বাইরে ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি বা ওজোপাডিকোর প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে।
সংযোগ মেরামতের প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রয়েছে জানিয়ে বিতরণ সংস্থাগুলো বলছে, ঝড় থেমে গেলে বৃহস্পতিবার বিকালের মধ্যে মেরামত করে সংযোগগুলো চালু করার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে।
আরইবির সদস্য (পরিকল্পনা ও উন্নয়ন) অনজন কান্তি দাশ সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে বলেন, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশালের কিছু অংশ, বাগেরহাট, পিরোজপুর, সাতক্ষীরাসহ উপকূলের ১৭টি সমিতির ৫০ থেকে ৬০ ভাগ লাইন বন্ধ হয়ে গেছে।
“সংখ্যার বিচারে ১০ থেকে ১২ লাখ গ্রাহকের সংযোগ বন্ধ হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। এগুলো আমরা বন্ধ করিনি, ঝড়ের কারণে বন্ধ হয়েছে। অনেক জায়গায় বড় বড় গাছ পড়েছে, অনেক স্থানে তার ছিঁড়েছে।”
বৃষ্টি ও দমকা হাওয়া এখনও অব্যাহত রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা এখনও ক্ষতি নিরূপণ করতে পারিনি। তবে মনে হয়, বুলবুলের মতো ক্ষয়ক্ষতি নাও হতে পারে। ঘূর্ণিঝড় অনেকটা দুর্বল হয়ে আসছে বলে মনে হচ্ছে। যা কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হোক না কেন আগামীকাল বিকালের মধ্যে সমাধান করতে পারব।”
ওজোপাডিকোর প্রকৌশল শাখার নির্বাহী পরিচালক আবুল হাসান জানান, বিকাল নাগাদ আলমডাঙা, মেহেরপুর, বরগুনা, পায়রা, চরফ্যাশনের প্রায় ৪০ হাজার গ্রাহকের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
তিনি বলেন, ঝড়ে খুলনা, মাগুরা, যশোর অঞ্চলে ক্ষয়ক্ষয়তি কম হলেও পায়রা, পটুয়াখালী, পিরোজপুর, বরগুনা এলাকায় বেশ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন।
“আমরা সেই অনুযায়ী প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছি। তবে মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে আগে জীবন রক্ষা করতে হবে। উদ্ধার তৎপরতা চালাতে গিয়ে কোনো প্রাণহানি কাম্য নয়।”
২০০৭ সালে সিডরের সময় নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে আবুল হাসান বলেন, তখন সন্ধ্যার দিকে ঝড় শুরু হয়ে রাতের মধ্যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছিল।
“ভোর থেকে সংস্কার কাজ শুরু করে আমরা দুপুর নাগাদ বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে পেরেছিলাম।”
ঘূর্ণিঝড় আম্পানে বাংলাদেশের পশ্চিমে সাতক্ষীরা থেকে শুরু করে খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের বেশি প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
পিডিবির বিতরণ সংস্থা ওজোপাডিকো এবং পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের ২৩টি সমিতি রয়েছে এসব এলাকায়।
পিডিবির চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন বিকালে বলেন, অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে এবারের ঘূর্ণিঝড়ের ক্ষয়ক্ষতি দ্রুত সারিয়ে নিতে প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
“প্রতিবছরই আমরা এ ধরনের ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলা করে অভ্যস্ত। এ ধরনের পরিস্থিতিতে কী কী সমস্যা দেখা দিতে পারে তা বিবেচনায় নিয়ে বেশ কিছু প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি যে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ বাংলাদেশের ওপর অতটা হবে না। তারপরেও খুলনা, বাগেরহাট, সুন্দরবন অঞ্চলের বিতরণ সংস্থাকে সতর্ক রাখা হয়েছে।
“বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে ঝড়ের প্রকোপ থেকে রক্ষায় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বনের জন্য সংশ্লিষ্টদের বলে দেওয়া হয়েছে।”
প্রস্তুতির বিষয়ে ওজোপাডিকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ একাধিক কর্মকর্তাকে বিকালে ফোন করা হলেও তাদের পাওয়া যায়নি।
আরইবির চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মঈন উদ্দিন বলেন, “আমরা আশা করছি ঘূর্ণিঝড় থেকে আল্লাহ পাক বাংলাদেশকে রক্ষা করবেন। এখন খুলনা ও পায়রা অঞ্চলে ১০ নম্বর ও কুমিল্লা-চট্টগ্রাম অঞ্চলে ৯ নম্বর বিপদ সংকেত দেওয়া হয়েছে। কুমিল্লা, নোয়াখালী ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে যদি আঘাত হানে তাহলে আরইবির ক্ষয়ক্ষতি হবে।
“উপকূলীয় অঞ্চলে আরইবির ২৩টি সমিতি রয়েছে যেগুলো গত ঘূর্ণিঝড় বুলবুলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এবার আমরা আশা করছি, আল্লাহ রক্ষা করবেন। আমাদের সমুদয় প্রস্তুতি আছে। কিছুক্ষণ আগে আরইবির জিএম ও ডিজিএম মিলিয়ে প্রায় ৫০০ শত কর্মকর্তাদের নিয়ে ভিডিও কনফারেন্স করলাম। তাদেরকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছি।
“ঝড়ের সময়, ঝড় শুরু হওয়ার আগে এবং ঝড় শেষ হলে কখন কী কাজ করতে হবে তার জন্য গ্রুপে গ্রুপে ভাগ হয়ে যেতে বলেছি। প্রয়োজনে আরও কিছু দক্ষ লোকজনকে সাময়িক নিয়োগ দিতে বলেছি। ঘূর্ণিঝড় শেষ হওয়ার পর একসাথে কাজে নেমে যাবে তারা। প্রশাসন, পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, আনসার সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। কিছু ক্রেন ঠিক করে রাখা হয়েছে যাতে ঝড়ে গাছ পড়ে গেলে রাস্তাঘাট দ্রুত পরিষ্কার করা যায়।”