শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩১ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

করোনাকালে ব্যতিক্রমী বাজেট অধিবেশন শুরু

তরফ নিউজ ডেস্ক : কঠোর বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে করোনা মহামারির মধ্যেই সম্পূর্ণ ভিন্ন প্রেক্ষাপটে শুরু হলো বাজেট অধিবেশন। আজ বুধবার বিকাল ৫টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে শুরু হয়। একাদশ সংসদের ৮ম অধিবেশন বা বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই প্যানেল সভাপতি মনোনয়ন করা হয়।

এরপর আইমন্ত্রী আনিসুল হক সংবিধানের ৯৩ অনুচ্ছেদের (২) দফা অনুযায়ী তিনটি অধ্যাদেশ উত্থাপন করবেন। এর একটি হচ্ছে- তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ-২০২০ (অধ্যাদেশ নং-১/২০২০২), মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শূল্ক (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২০ (অধ্যাদেশ নং-২/২০২০২), আয় কর বা ইনকাম ট্যাক্স অধ্যাদেশ-২০২০ (অধ্যাদেশ নং-৩/২০২০২) অধ্যাদেশ উত্থাপনের পর শোক প্রস্তাব গ্রহণ।

রেওয়াজ অনুযায়ী, সিটিং কোন সংসদ সদস্য অর্থাৎ বর্তমান সংসদের কোন এমপি মারা গেলে তার ওপর আনিত শোক প্রস্তাব নিয়ে সংসদে আলোচনা হবে। শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনার পর সাধারণত দিনের আর কোন কর্মসূচি থাকে না। তাই শোক প্রস্তাব শেষে সংসদের অধিবেশন মুলতবি ঘোষণা করা হবে।

এদিকে বাজেট অধিবেশনে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১১ই জুন) বিকাল ৩টা ১৫ মিনিটে ২০২০-২০২১ অর্থবছরের বাজেট উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে সংসদে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠকে বাজেট অনুমোদন দেয়া হবে। সেই বাজেটে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দেয়ার পর সংসদে উত্থাপন করবেন অর্থমন্ত্রী।

আ হ ম মুস্তফা কামাল তার জীবনের দ্বিতীয় বাজেট উত্থাপন করতে যাচ্ছেন।

যদিও গত অর্থবছরের বাজেট উপস্থান করতে গিয়ে ডেঙ্গু জ্বরের অসুস্থতার জন্য পুরো বাজেট বক্তৃতা দিতে পারেননি। তখন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাজেট উত্থাপন ও বাজেট সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন।

এদিকে প্রথম বারের মতো সংসদে বসে বাজেট অধিবেশন কাভার করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে গণমাধ্যমকর্মীরা। এছাড়া প্রতিবছরই বাজেট উত্থাপনের দিন বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকগণ, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ এই বাজেট প্রত্যেক্ষ করার জন্য আমন্ত্রণ পেয়ে থাকেন এবার সেটিও বন্ধ রাখা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশনে সংসদ সদস্যদের আসাও সীমিত করা হয়েছে। সাড়ে ৩০০ সংসদ সদস্যের মধ্যে তালিকা করে মাত্র ৮০ থেকে ৯০ জনের অধিবেশনে যোগদানের জন্য বলা হয়েছে।

করোনা সংক্রমণ রোধে সংসদে আসন বিন্যাসেও পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর আশপাশের বেশ কয়েকটি আসন ফাঁকা রাখা হবে। তারই অংশ হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পেছনের আসনে বসা সংসদের প্রধান হুইপ নূর ই আলম চৌধুরীকে আরো এক সারি পেছনে বসতে হবে। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আসনে বসতেন সংসদ উপনেতা সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী বয়স বিবেচনায় তিনি অধিবেশনে যোগ দিচ্ছেন না বলে জানা গেছে। সংসদ উপনেতার ডানে বসতেন মতিয়া চৌধুরী এবার প্রধানমন্ত্রীর ডান পাশের আরো কয়েকটি আসন ফাঁকা রেখে অন্যদের আসন বিন্যাস করা হয়েছে। একই ভাবে অন্যদের আসনও ফাঁকা রেখে বিন্যাস করা হয়েছে।

বাজেট অধিবেশনে কোন দিন কি: করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার বাজেট অধিবেশন হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। মাত্র ১২ কার্যদিবস চলবে এবারের অধিবেশন। এরইমধ্যে বাজেট অধিবেশন নিয়ে সংসদ সচিবালয় একটি সূচি বা ক্যালেন্ডার তৈরি করেছে। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা। ১১ই ‍জুন বাজেট উত্থাপনের পর ১২ ও ১৩ই জুন অধিবেশনের মুলতবি। ১৪ ও ১৫ই জুন ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরের সম্পূরক বাজেটের ওপর আলোচনা এবং সম্পূরক বাজেট পাস। পরদিন শুরু হবে প্রস্তাবিত (২০২০-২০২১ অর্থ বছরের) সাধারণ বাজেটের ওপর আলোচনা। ১৬ ও ১৭ই জুন আলোচনা শেষে ১৮-২১শে জুন পর্যন্ত অধিবেশন মুলতবি থাকবে। এরপর ২২-২৪শে জুন আরো তিন দিন বাজেটের ওপর আলোচনা করে ২৫-২৮শে জুন চারদিনের বিরতি দেয়া হবে। ২৯শে জুন সোমবার বাজেটের ওপর সমাপনী আলোচনা হবে। এদিনই পাস হবে অর্থবিল। ৩০শে জুন মূল বাজেট ও নির্দিষ্টকরণ বিল পাস হবে। এরপর আরেকটি বিরতি দিয়ে ৮ বা ৯ই জুলাই একদিনের জন্য অধিবেশন বসে ওইদিনই সমাপ্তি টানা হবে। ক্যালেন্ডার অনুযায়ী অধিবেশন শুরু ও বাজেট পেশের দিন ছাড়া প্রতিদিন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক বসবে। চলবে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত।

সংসদ সূত্র জানায়, সংসদে উপস্থিত সবাইকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে সংসদ ভবন ছাড়াও অধিবেশন কক্ষে ঢুকতে হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখতে নির্ধারিত এমপিদের সংসদে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়। এজন্য যারা আজ যাওয়ার জন্য তালিকাভুক্ত শুধু তারাই অধিবেশনে যোগ দিয়েছেন। এসময় সবাই মাস্ক পড়েছেন। সবার তাপমাত্রা মাপা হয়েছে। অসুস্থ ও বয়স্ক এমপিরা সংসদে যাননি।

বাজেট উপলক্ষে সংসদের কর্মকর্তাদের করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) পরীক্ষার পর ৮ই জুন পর্যন্ত ৪৩ জনের শরীরে ভাইরাসটি শনাক্ত হয়েছে। তারও আগে সংসদ সচিবালয়ে দায়িত্বরত ৮২ জন ব্যাটালিয়ন আনসার ও তিনজন পুলিশ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এছাড়া এ পর্যন্ত ৮ জন মন্ত্রী-এমপিও করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। এনিয়ে সবার মধ্যে আতঙ্ক।

এ বিষয়ে বিএনপির সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা বলেন, এই সংসদ অধিবেশন নিয়ে আমরা আতঙ্কিত। আমি ভার্চুয়াল অধিবেশন করার প্রস্তাব করেছিলাম। কিন্তু সেটা গ্রহণ করা হয়নি। তারা সংবিধানের কথা বলে। কিন্তু ডকট্রিন অব নেসেসিটি (doctrine of necessity) বলে একটা কথা আছে। প্রয়োজনের রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে অধিবেশন চালানো যেত।’

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com