বুধবার, ২০ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২৫ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বাজেট অধিবেশনে অংশ নিয়ে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ থেকে ওয়াকআউট করেছেন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুন অর রশীদ। আজ মঙ্গলবার তাকে ১২ মিনিট আলোচনার সুযোগ দেয়া হয়। শুরুতেই সাংসদ হারুন ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ বলে বক্তব্য শুরু করেন। এ সময় স্পিকারের দায়িত্ব পালন করা ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া তাকে থামিয়ে এভাবে শুরু করার কারণ জানতে চান। তখন হারুন অর রশিদ এটার ব্যাখ্যা বক্তব্যের শেষে দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে ফজলে রাব্বী মিয়া বলেন, এমনভাবে শুরু আমার সাতবারের সংসদ সদস্য জীবনে দেখিনি। আপনাকে অবশ্যই এর ব্যাখ্যা দিতে হবে। এ সময় সাংসদ হারুন তার সময় আরও বাড়িয়ে দেয়ার আরজি জানান স্পিকারের কাছে।
বক্তব্যে হারুন-অর-রশীদ বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেছেন, করোনা দু’তিন বছরেও যাবে না।
এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন ডিজি। তাহলে এই করোনা আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটাকে মোকাবিলা করার জন্য জাতীয় ঐক্য দরকার। এ সময় তিনি বলেন, জাতীয় ঐক্যের জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও তার ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে, তা প্রত্যাহার করতে হবে।
এ কথা বলার সঙ্গে সঙ্গে সরকারদলীয় সাংসদেরা হইচই শুরু করেন। এ সময় হারুন বলেন, হইচই করে লাভ নেই। চিল্লাচিল্লি করে কোনো লাভ হবে না। জনগণের কাছে বার্তা যাচ্ছে যে আপনারা সত্য তথ্যগুলো তুলে ধরা থেকে বঞ্চিত করছেন।
এক পর্যায়ে হারুন অর রশীদের সময় শেষ হয়ে গেলে মাইক বন্ধ হয়ে যায়। পরে তিনি মাইক ছাড়াই কথা বলতে থাকেন। এ সময় অন্য সদস্যরা হইচই করতে থাকেন।
এ সময় স্পিকার বলেন, হইচইয়ের জন্য আমি নিজে দুঃখ প্রকাশ করছি। তবে আপনি যে দুজন ব্যক্তির নাম উচ্চারণ করেছেন, আমি ডেপুটি স্পিকার হিসেবে তাঁদের নাম উচ্চারণ করতে পারি না। কারণ দুজনই কনভিক্টেট। পার্লামেন্টে বসে কীভাবে কনভিক্টেটের বিষয়ে কথা বলতে পারি! হারুন অর রশীদ তার বক্তব্যে গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ বলে উল্লেখ করেন। এটাও সংসদের কার্যপ্রণালি থেকে বাদ দেয়া হবে বলে জানান ডেপুটি স্পিকার।
এরপর হারুন অর রশীদের মাইক অন হয়। এ সময় তিনি বলেন, সংসদ নেতার (প্রধানমন্ত্রী) কথায় আপনি আমাকে সময় বাড়িয়ে দিয়েছেন। আমার কথার মধ্যে স্পিকার হয়ে বাধা দিয়েছেন। এটা দুঃখজনক। এ জন্য আমি ওয়াকআউট করছি। এরপরও তিনি হইচই করতে থাকেন।
এ সময় ফজলে রাব্বী মিয়া সরকারদলীয় সাংসদদের উদ্দেশে বলেন, হারুন-অর-রশীদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার জন্য আমি যথেষ্ট। আমি আনপার্লামেন্টারি কিছু হতে দেব না। এটা সরকারি দলের সাংসদ হলেও আমি ইন্টারেপ্ট করব।
ওয়াকআউটের আগেই দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি তুলে ধরে সংসদে থাকা প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ করে হারুন-অর-রশীদ বলেন, সরকারের লোকজন, বিএমএ বলছে, করোনায় মৃত্যুর দায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের। এই দুঃসময়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী কি কোনো কোভিড হাসপাতাল ভিজিট করেছেন? ১০ দিন ধরে ফোন করে ও বার্তা দিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সাড়া মিলছে না। ব্যর্থতার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে সরিয়ে দেন। কমিটমেন্ট আছে, এমন ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেন।
হারুন-অর-রশীদ অভিযোগ করেন, সমাজে ঘুণ ধরে গেছে। চাঁদাবাজি, শেয়ার কেলেঙ্কারিসহ খারাপ ব্যক্তিরা দেশ নিয়ন্ত্রণ করছে। কারও নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলছেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স। এই সংসদে এমন ব্যক্তি এসেছেন, যিনি মাদক পাচারের শীর্ষে। তিনি কীভাবে সংসদে এলেন? তার স্ত্রী কীভাবে সংসদে এলেন? সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয় না থাকলে সংসদে আসতে পারতেন না।
তথ্য সূত্র : মানবজমিন