শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : করোনা ভাইরাসের কারণে মানুষজন ব্যাংকে সঞ্চয় করা কমিয়ে দিয়েছেন। বেশিরভাগ মানুষ নগদ অর্থ হাতে রাখতে শুরু করেছেন। চলতি বছরের এপ্রিল শেষে ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে মানুষের হাতে নগদ অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় পৌনে দুই লাখ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন মতে বড় অংকের আমানত কমেছে ব্যাংক খাতে। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষেও আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রতি মাসে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ হারে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাবে এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরে মানে জনগণের হাতে থাকা নগদ অর্থের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৭৭ হাজার ৯২১ কোটি টাকা। আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৪৪ হাজার ৭৫৯ কোটি টাকা বা ২৩ শতাংশের বেশি।
হিসাব বলছে, সরকারের সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের পরিমাণ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো। সুদের হার বেশি হওয়ার কারণে ব্যক্তিগত বিনিয়োগের বড় আস্থার নাম সঞ্চয়পত্র। পরিবার, পেনশনারসহ দশটিরও বেশি স্কিমে আমানত রাখা যায় সঞ্চয়পত্রে। হিসাব বলছে, চলতি বছরের শুরুতে জানুয়ারি মাসে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয়েছে ২ হাজার ২শ’ ৪০ কোটি টাকা। ফেব্রুয়ারিতে ১ হাজার ৯শ’ ৯২ কোটি টাকা, মার্চে ১ হাজার ৫শ’ ৩৬ কোটি টাকা, এপ্রিলে ৬২১ কোটি ৭৮ লাখ টাকা।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রথম দশ মাসে বিক্রি হয়েছে ১০ হাজার ৫৮০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আগের বছরের (২০১৮-১৯) একই সময়ে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৪৩ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা। এক বছরের ব্যবধানে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে ৭৫ শতাংশের মতো।
এ বিষয়ে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম বলেন, সঞ্চয়পত্রের সব ধরনের স্কিম মিলে এখন একটি সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। কেউ চাইলেও ৫০ লাখ টাকার বেশি কিনতে পারবেন না। টিআইএন সার্টিফিকেট ও জাতীয় পরিচয়পত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এসব কারণে বিক্রি কমেছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, সার্বিকভাবে সঞ্চয় কমে গেছে। আয় কমা এবং বেকারত্ব বাড়ার ফলে ব্যক্তিগত সঞ্চয় কমেছে। অন্যদিকে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো না চলায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবেও সঞ্চয় কমেছে।
সঞ্চয় কমার আরও একটি কারণ হলো নগদ টাকার চাহিদা বেড়েছে। এর পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ অনিয়শ্চতা। চলমান করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবে শুধু সরকারের সঞ্চয়পত্রে নয়, এই সময় ব্যাংকে টান পড়েছে আমানতেরও। এপ্রিল শেষে দেশের ব্যাংক খাতে আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২৮ হাজার কোটি টাকা। জানুয়ারি শেষেও আমানতের পরিমাণ ছিল ১২ লাখ ৫৩ হাজার কোটি টাকা। অথচ প্রতিমাসে দেশের ব্যাংকিং খাতে আমানতের গড় প্রবৃদ্ধি হয় ১০ শতাংশ হারে।
বেসরকারি ব্যাংক এমডিদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের সাবেক চেয়ারম্যান ও মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, অনেক মানুষের চাকরি চলে গেছে অথবা বেতন কমে গেছে। আর তা না হলে বেতন পেতে একটু দেরি হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে মানুষের সঞ্চয়ের ওপরেই চাপটা পড়েছে। আমরা ডিপোজিট কমে যাওয়ার আভাস পাচ্ছি।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাহেল আহমেদ বলেন, প্রাতিষ্ঠানিক আমানতের মধ্যে সরকারি আমানত আগের চেয়ে কিছুটা কমে গেছে। সার্বিকভাবে আমরা যেটা দেখতে পাচ্ছি প্রতিষ্ঠানের চেয়ে ব্যক্তি আমানতকারীরা ব্যাংকের ঝুঁকি বিবেচনায় রেখেই টাকা জমা রাখছেন।
গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, তিনমাসে ৬৫ হাজার কোটি টাকার আমানতের পতন আমরা দেখতে পাচ্ছি, এটা কিন্তু শুভ লক্ষণ নয়। এটা সবাইকে চিন্তা করতে হবে—ব্যাংকিং খাতের আমানত কমে গেলে অর্থনীতি ভালো থাকতে পারে না। ব্যাংকিং খাতের সামর্থ্য কমে যাচ্ছে ও ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমে যাচ্ছে। মানুষের আস্থা কমে যাচ্ছে। সামগ্রিকভাবে এটা অর্থনীতির জন্য দুঃসংবাদ।