সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) আসনে আওয়ামী লীগের সব নেতাকর্মী ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। শনিবার (২২ ডিসেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সেই ছবি ভাইরাল হয়েছে।
অবশেষে বিভেদ ভুলে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর সঙ্গে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গাজী শাহনওয়াজ ওরফে মিলাদ গাজী এক সমঝোতা সভা করেছেন। উক্ত সমঝোতা সভার সংবাদ ও ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীর মধ্যে নতুন উৎসাহ আমেজের সৃষ্টি হয়েছে।
সমঝোতা বৈঠক সুত্রে জানা যায়, এখান থেকে সিন্ধান্ত হয়েছে দুই নেতা একই মঞ্চে উঠে তিনটি জনসভা করার সিন্ধান্ত হয়েছে। পরে কেয়া চৌধুরী ও মিলাদ গাজী একসাথে ছবি তুলে ফেসবুকে পোষ্ট করেন। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তোলা ছবিটি মুহুর্তের মধ্যে সর্বত্র ভাইরাল হয়ে যায়।
শুক্রবার দিবাগত রাতে সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরীর হবিগঞ্জস্থ বাসভবনে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, নবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাধারণ সম্পাদক আলহাজ্ব সাইফুল জাহান চৌধুরী, বাহুবল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুর নুর মানিক, বাহুবল উপজেলা সাংগঠনিক সম্পাদক সোহেল আহমদ কুটি ও আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী গাজী শাহনওয়াজ ওরফে মিলাদ গাজীর ছোট ভাই নাহেদ গাজী প্রমূখ।
সভায় সিন্ধান্ত হয় ২৫ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ জে কে সরকারি বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী সভা, ২৬ ডিসেম্বর বাহুবল সদর ও ২৭ ডিসেম্বর দিনারপুর উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে তিনটি জনসভায় এক মঞ্চে বক্তব্য রাখবেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিত সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী গাজী শাহনওয়াজ ওরফে মিলাদ গাজী ।
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার ডাক দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরই ফলে তাদের মধ্যে ঐক্য হয় বলে জানা গেছে। তাদের ঐক্যে নবীগঞ্জ-বাহুবল আসনে বিজয় নিশ্চিত হবে বলে আশা করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা। কয়েক দিন ধরেই আওয়ামী লীগের উভয় পক্ষের মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ আলোচনা হয়।
নৌকার সমর্থনে দলীয় কোন্দল ও বিভেদ ভুলে গিয়ে হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ-বাহুবল) সংরক্ষিত আসনের এমপি আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী ও আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী গাজী শাহনওয়াজ ওরফে মিলাদ গাজী একই মঞ্চে উঠছেন। গতকাল দলের বিবদমান দুই পক্ষের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে নৌকার প্রার্থী ওই সমাবেশে ঘোষনা দেন। সব নেতা নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে বিজয়ী করার লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার ঘোষণা দেন।
সমঝোতা বৈঠকে মিলাদ গাজী তখন এমপি কেয়া চৌধুরীর সাথে কুশলাদি বিনিময় করে তাকে নৌকার পক্ষে কাজ করার জন্য আহবান জানিয়ে বলেন, ‘আওয়ামীলীগ একটি বড় দল। সংগত কারণেই আপনিসহ (কেয়া চৌধুরী) একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন চেয়ে ছিলেন। কিন্তু নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমরা ভূল বুঝা-বুঝি ভূলে গিয়ে নৌকাকে বিজয়ী করে আসনটি জননেত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে চাই’।
জবাবে এমপি কেয়া চৌধুরী বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শ্যের সৈনিক। নৌকার সাথে ছিলাম, আজীবন নৌকার সাথেই থাকব। এ জন্য আমার পক্ষে যা-যা করা সম্ভব সবকিছুই করব’। পরে উপস্থিত নেতৃবৃন্দ নৌকাকে বিজয়ী করতে মিলে-মিশে কাজ করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে সর্বসম্মতিক্রমে আগামী ২৫ ডিসেম্বর নবীগঞ্জ, ২৬ ডিসেম্বর বাহুবল ও ২৭ ডিসেম্বর দিনারপুর পরগনায় নির্বাচনী সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন। এসব নির্বাচনী সমাবেশে এমপি কেয়া চৌধুরী উপস্থিত থাকবেন বলে সম্মতি দেন। দলের মনোনীত প্রার্থী মিলাদ গাজীকে জেতাতে সকল নেতাকর্মী ও সমর্থক ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দরকার। তিনি বলেন, সমস্যা থাকতে পারে, সমাধানও হবে। দলের প্রার্থীকে জয়ী করতে আমরা যথাযথ উদ্যোগ নিয়েছি। এক্ষেত্রে আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই।
আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী গাজী শাহনওয়াজ ওরফে মিলাদ গাজী বলেন, দলের সকল নেতাকর্মী সাড়া দিয়েছেন। সবার সহযোগিতায় আমি জয়ী হয়ে এই নবীগঞ্জ বাহুবলকে নতুনরূপে ঢেলে সাজাতে চাই। আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় দল এখন বিভেদহীন ও শক্তিশালী। তিনি এক প্রশ্নের জবাবে বলেন কেয়া আমার চোট বোন তার সাথে কোন বিরোধ আর নেই। আমরা দুইজন মিলে এক সাথে কাজ কওে জননেত্রী শেখ হাসিনাকে এই আসনটি উপহার দিতে চাই তাই গতকাল তার বাসায় গিয়েছিলাম সমঝোতা হয়েছে। তিনি নৌকার জন্য মাঠে নামবেন।
উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল বলেন, নবীগঞ্জ বাহুবলে এখন থেকে দলের মধ্যে কোনো বিরোধ নেই। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে অব্যাহত রাখতে শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী ও পুনরায় প্রধানমন্ত্রী করার বিকল্প নেই।
উল্লেখ্য, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরী কন্যা এমপি কেয়া চৌধুরী ও প্রয়াত মন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী পুত্র শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজী উভয়ই আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নপত্র ক্রয় করেন। এক পর্যায়ে দল থেকে শাহ নেওয়াজ মিলাদ গাজীকে মনোনীত করা হলে কেয়া চৌধুরী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। কিন্তু বাছাইয়ে কেয়া চৌধুরীর প্রার্থীতা বাতিল হয়। পরে আপিল করার সুযোগ থাকলেও দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান তিনি।