শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৩৩ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : প্রায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহনের মধ্য দিয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কাল রোববার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। শান্তিপূর্ণ নির্বাচন আয়োজনে সাড়ে সাত লাখ আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিয়োজিত থাকবে। নির্বাচনী সামগ্রী প্রেরণ ও নজরদারীর জন্য পার্বত্য অঞ্চলের ৩ জেলার বেশ কিছু কেন্দ্রে ব্যবহার করা হবে হেলিকপ্টার। নির্বাচনে ৪০ হাজার ১৮৩টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ২৫ হাজার ৮২৭টি ভোটকেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে, কাল রবিবার প্রথমবারের মতো দেশের কোনো সংসদ নির্বাচনে ভোট দেবেন বাংলাদেশের সীমানার মধ্যে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া ছিটমহলের বাসিন্দারা। এর আগে ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে তারা কোনো রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ভোট দিতে পারেননি। ২০১৫ সালের ১ আগস্ট থেকে স্থলসীমান্ত চুক্তি কার্যকর হওয়ায় তারা এখন বাংলাদেশের নাগরিক। দেশের মানচিত্রের মূল ভূখন্ডে যুক্ত হওয়ার পর একবার স্থানীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলেও এবারই প্রথমবারের মতো ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যাচ্ছেন এসব অঞ্চলের অধিবাসীরা। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উৎসাহ ও উত্তেজনা কাজ করছে।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা গতকাল শুক্রবার এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, আগামীকাল ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর হবে। তিনি বলেন, এবারের নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যক ও সর্বাধিক প্রার্থী অংশগ্রহণ করেছে। ভোট উৎসবমুখর হবে এটাই আশা। নির্বাচন নিয়ে বিরোধী দলগুলোর আতঙ্কের অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সিইসি বলেন, অবশ্যই ভুল প্রমাণ হবে। আমরা প্রস্তুত, ভোটররা সবাই উৎসবমুখর এবং আনন্দঘন পরিবেশে ভোটে অংশগ্রহণ করবে।
মোট ১০ কোটি ৪১ লাখ ৯০ হাজার ৪৮০ জন ভোটারের মধ্যে এবার পুরুষ ভোটার ৫ কোটি ২৫ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৯ জন। আর নারী ভোটার রয়েছেন ৫ কোটি ১৬ লাখ ৪৩ হাজার ১৫১ জন। ২৯৯ আসনে মোট ভোটকেন্দ্র হচ্ছে ৪০ হাজার ১৮৩টি। ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৮৪৮ জন প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থী ভোটযুদ্ধে থাকছেন। গতকাল শুক্রবার সকালে তারা প্রচারের আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন। নির্বাচনে দায়িত্বে আছেন রিটার্নিং অফিসার ৬৬, প্রিজাইডিং অফিসার ৪০ হাজার ১৮৩ জন। ১৭ হাজার দেশি পর্যবেক্ষকের পাশাপাশি প্রায় ২০০ বিদেশী পর্যবেক্ষক এবারের ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে শেষ করেছে কমিশন। ভোটকেন্দ্র ও ভোটের সামগ্রিক মালামালের বিশেষ নিরাপত্তা কার্যকর করা হয়েছে। ইতিমধ্যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মাধ্যমে সব ভোটকেন্দ্রের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি গড়ে তোলা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের চারদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি তৈরি করে সব ধরনের যানবাহন ও জনসাধারণের চলাচল বন্ধ করা হয়েছে। ভোট কেন্দ্রের চারপাশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মোবাইল টিম ও ষ্ট্রাইকিং ফোর্সের টহলও জোরদার করা হয়েছে। ইতিমধ্যে সকল যানবাহন চলাচল বন্ধ করা হয়েছে।
ভোটের মাঠ সংঘাতমুক্ত ও আনন্দমুখর রাখতে রাজধানীজুড়েই সুসংগঠিত ও সুদৃঢ় নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেন, পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনী, বিজিবি, নৌবাহিনী, আনসার, আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নসহ সব বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতোমধ্যে সব বাহিনীর সদস্যরা বিভিন্ন এলাকায় তাদের টহল অব্যাহত রেখেছেন। এছাড়া, যেকোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় ডিএমপির সোয়াট ও বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ও ডগ স্কোয়াড প্রস্তুত থাকবে। সুস্পষ্ট নিরাপত্তাজনিত কোনও হুমকি না থাকলেও অতীত অভিজ্ঞতার আলোকে নিরাপত্তা ছক সাজানো হয়েছে বলে জানান তিনি।
গতকাল শুক্রবার বিকালে নোয়াখালী-জোরারগঞ্জ সড়কের ছোট ফেনী নদীর ওপর নির্মিত ব্রিজ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিককের প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আমার মনে হয় একটা শক্তি মরণ কামড় দিতে চাইতে পারে। কারণ, চূড়ান্ত পরাজয় দেখে মরিয়া হয়ে তারা নির্বাচনে জিততে চাইবে। শেষ চেষ্টা, তারা মরণ কামড় দিয়ে বসতে পারে। ওবায়দুল কাদের বলেন, বিভিন্ন জায়গা থেকে আমরা অভিযোগ পাচ্ছি। তবে যেকোনও ধরনের সহিংসতার চেষ্টা মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশন সবদিক থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে অবস্থান নিয়েছে। আশা করি, যত চক্রান্তই হোক, দেশের জনগণ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে পারবেন। জনগণ যখন ভোট দেওয়ার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ, তখন কোনো শক্তিই এই নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।