রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৫৬ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: অনুমতি দেয়ার দুই মাসের মধ্যে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে আগামীকাল শনিবার থেকে শুরু হতে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এই পরীক্ষায় ২০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই মিলবে রিপোর্ট।
প্রাথমিকভাবে ১০টি জেলায় এই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হবে কেউ করোনাভাইরাস পজিটিভ কি না। এ লক্ষ্যে ওই জেলাগুলোর কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোয় এরই মধ্যে টেস্ট কিট পাঠানো হয়েছে।
মূলত দেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে যেসব জেলায় আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষার সুবিধা নেই কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে সংক্রমণের হার বেশি, এমন ১০টি জেলাকে অ্যান্টিজেন পরীক্ষার জন্য বেছে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা।
অ্যান্টিজেন পরীক্ষার আওতাভুক্ত জেলাগুলো হলো গাইবান্ধা, পঞ্চগড়, জয়পুরহাট, যশোর, মেহেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, পটুয়াখালী, মুন্সীগঞ্জ, মাদারীপুর ও সিলেট।
এসব জেলার শুধু যাদের মধ্যে করোনাভাইরাসের উপসর্গ রয়েছে তাদেরকেই অ্যান্টিজেন পরীক্ষার আওতায় আনা হবে।
এর মধ্যে যাদের ফল পজিটিভ আসবে তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে আলাদা রাখার ব্যবস্থা করা হবে যেন সংক্রমণ ঠেকানো যায়। অন্যদিকে উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও কারও টেস্টের ফল যদি নেগেটিভ হয় তাহলে পুনরায় তার আরটি পিসিআর পদ্ধতিতে পরীক্ষা করা হবে বলে জানিয়েছেন নাসিমা।
কারণ অ্যান্টিজেন টেস্টে দ্রুত ফল এলেও এতে ফলস নেগেটিভ অর্থাৎ নেগেটিভের ভুল ফল আসার আশঙ্কাও বেশি থাকে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে শনিবার থেকে অ্যান্টিজেন পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে যাচ্ছে। জেলার কোভিড-১৯ এর জন্য নির্ধারিত এই হাসপাতালটিতে এরই মধ্যে ৫০০টি কিট পৌঁছে গেছে বলে জানা গেছে।
এর আগে ৫০টি কিট দিয়ে এখানে পরীক্ষামূলক অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়। এজন্য তিনজনকে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক হিমাংশু লাল রায়।
দেশে বর্তমানে যে পদ্ধতিতে করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা হয় সেটাকে বলা হয় আরটি-পিসিআর টেস্ট। এতে নমুনা দেয়ার পর ফল পেতে অন্তত ২৪ ঘণ্টা কিংবা তার বেশি সময় লাগে। কিন্তু অ্যান্টিজেন টেস্টে নমুনা সংগ্রহের ২০ থেকে ৪০ মিনিটের মধ্যেই করোনাভাইরাস পজিটিভ নাকি নেগেটিভ সেটা জানা যায়। যদিও কিছু ফলস নেগেটিভ ফল আসার আশংকা থেকেই যায়।
এরপরেও কারও মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হলে আক্রান্ত ব্যক্তিকে দ্রুত সাধারণ মানুষের সংস্পর্শ থেকে আলাদা করে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব বলে জানিয়েছেন হিমাংশু রায়।
অ্যান্টিজেনের এই পরীক্ষামূলক পরীক্ষা ১০টি জেলা থেকে শুরু করা হলেও পর্যায়ক্রমে অন্য জেলাগুলোতেও এই পরীক্ষা সম্প্রসারিত করা হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
মানসম্মত কিট সরবরাহ করা গেলে স্বাস্থ্যকর্মীদের সাধারণ কিছু প্রশিক্ষণ দিয়েই এই পরীক্ষা করা সম্ভব। এতে বিশেষায়িত কোনো পরীক্ষাগার বা অতিরিক্ত সময়ের প্রয়োজন হয় না। আবার অ্যান্টিজেন পরীক্ষার ফল দ্রুত মেলায় যদি দেশব্যাপী টেস্ট করা হয় তাহলে করোনাভাইরাস সংক্রমণের মূল চিত্র নিরূপণ করে সরকারের সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার পথ তৈরি হবে বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
তবে অ্যান্টিজেনের পাশাপাশি অ্যান্টিবডি টেস্টও শুরু করা প্রয়োজন বলে মনে করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোস্তাক হোসেন।
চলতি বছরের মাঝামাঝি সময় থেকেই করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনাভাইরাস শনাক্তে আরটিপিসিআর পরীক্ষার পাশাপাশি অ্যান্টিজেন পরীক্ষা সেইসঙ্গে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা চালুর পক্ষে সুপারিশ করে আসছিল।
এরপর স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জুলাইয়ে এ সংক্রান্ত একটি খসড়া নীতিমালা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠায়। এরপর ১২ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ কোভিড-১৯ পরীক্ষা সংক্রান্ত নীতিমালা করে। সূত্র: বিবিসি বাংলা