তরফ নিউজ ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের সবগুলোতে এবং ফেডারেল রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে নজিরবিহীন নিরাপত্তা। টহল দিচ্ছে ন্যাশনাল গার্ডের অসংখ্য সদস্য। ফাঁকা বেশির ভাগ সড়ক। ন্যাশনাল মল বন্ধ থাকছে নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে। অনেক রাজ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছে। গোয়েন্দা তথ্য আছে, উগ্র-ট্রাম্পপন্থিরা সহিংস হামলা চালাতে পারে। এর প্রেক্ষিতেই এমন ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এমন অবস্থা সাম্প্রতিক সময়ে আর দেখা যায় নি।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। আগামী ২০ শে জানুয়ারি নতুন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন। এদিনও ক্যাপিটল হিল স্টাইলে সহিংস সংঘর্ষ হওয়ার আশংকা রয়েছে। ওয়াশিংটন ডিসিতে ভরে ফেলা হয়েছে ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের দিয়ে। পাশাপাশি রয়েছে অন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মীরা। আগেই গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই সতর্ক করেছিল, বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পপন্থি সমর্থকরা যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি রাজ্যের পার্লামেন্টে সশস্ত্র হামলা করতে পারে।
দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে পূর্ব সতর্কতা নেয়া হয়েছে। জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে মেরিল্যান্ড, নিউ মেক্সিকো এবং ইউটাহ রাজ্যে। ন্যাশনাল গার্ডদের সক্রিয় করছে ক্যালিফোর্নিয়া, পেনসিলভ্যানিয়া, মিশিগান, ভার্জিনিয়া, ওয়াশিংটন এবং উইসকনসিন। অন্যদিকে বাইডেনের শপথের দিনের শেষ নাগাদ রাজ্যের পার্লামেন্ট শনিবার থেকে বন্ধ করে দিয়েছে টেক্সাস। টেক্সাস ডিপার্টমেন্ট অব পাবলিক সেফটি গোয়েন্দা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেছে, সহিংস উগ্রপন্থিরা হামলা করার পরিকল্পনা করেছে। তারা ক্রিমিনাল কর্মকাণ্ড চালাতে পারে।
অন্যদিকে ট্রাম্পের গুরুত্বপূর্ণ অনেক পরিকল্পনাই উল্টে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বাইডেন টিম। তিনি হোয়াইট হাউজে পা রাখার কয়েক ঘন্টার মধ্যে এমন পরিবর্তনীয় সিদ্ধান্ত জারি করতে পারেন। এর মধ্যে যেসব ইস্যু রয়েছে তা হলো, তিনি প্যারিস জলবায়ু বিষয়ক চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নিতে পারেন। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর বিরুদ্ধে ট্রাম্প যে বহুল বিতর্কিত ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলেন, তিনি তা বাতিল করতে পারেন। এ ছাড়া তিনি ফেডারেল সব অফিসে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে পারেন।
জো বাইডেন এরই মধ্যে করোনা ও সংশ্লিষ্ট ক্ষতিতে ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলারের প্রণোদনা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। যদি কংগ্রেস এই পরিকল্পনায় অনুমোদন না দেয় তাহলে তিনি কংগ্রেসকে পাশ কাটিয়ে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে এই বিল জারি করতে পারেন। অভিবাসন বিষয়ক নীতির বিষয়েও এমন ঘটনা ঘটতে পারে।
বিবিসি জানাচ্ছে, বুধবার নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অবরুদ্ধ করে ফেলা হবে ওয়াশিংটন ডিসিকে। এ জন্য আগে থেকেই হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ডের সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ক্যাপিটল হিল থেকে কয়েক মাইল দূরের অনেক রাস্তাও এরই মধ্যে ব্লক করে দেয়া হয়েছে। রাস্তায় ফেলা হয়েছে কনক্রিটের ব্যারিয়ার্স এবং ধাতব প্রতিবন্ধকতা। নতুন প্রেসিডেন্টের শপথ অনুষ্ঠানে সাধারণত ন্যাশনাল মল-এ মানুষের ¯্রােত নামে। কিন্তু এবার সিক্রেট সার্ভিসের অনুরোধের প্রেক্ষিতে তা বন্ধ রাখা হয়েছে। এ অবস্থায় বাইডেন টিম ফেডারেল রাজধানীতে শপথ অনুষ্ঠান উপলক্ষে আসতে বারণ করেছেন মার্কিনিদের। স্থানীয় কর্মকর্তারা বলেছেন, লোকজনকে দূর থেকে এসব ইভেন্ট উপভোগ করতে হবে।
আজ ১৭ই জানুয়ারি ট্রাম্পপন্থিরা বিক্ষোভ করতে পারে বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা ৬ই জানুয়ারি ক্যাপিটল হিল স্টাইলে হামলা চালাতে অনলাইনে আহ্বান জানিয়েছে। তবে কিছু উগ্রবাদী তাদের অনুসারীদের এসব ইভেন্টে অংশ না নিতে আহ্বান জানিয়েছে। শনিবার ক্যাপিটল পুলিশ নিশ্চিত করেছে যে, তারা ভার্জিনিয়ার একজন ব্যক্তিকে শুক্রবার চেকপয়েন্টে আটক করে শরীর তল্লাশি চালিয়ে কমপক্ষে একটি বন্দুক এবং ৫০৯ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে। ওই ব্যক্তির নাম ওয়েসলি অ্যালেন বিলার। পরে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন পোস্ট বলেছে, ওই ব্যক্তি এসব অস্ত্র ওয়াশিংটন নেয়ার পরিকল্পনা করেননি। তিনি ওয়াশিংটনে একটি নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থায় কাজ করেন। ওদিকে ক্যাপিটল ভবনে হামলার সঙ্গে সম্পর্ক থাকার অভিযোগে বেশ কয়েক ডজন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছেন উগ্র ডানপডিন্থ মিডিয়া ব্যক্তিত বেকড আলাস্কা। তার আসল নাম অ্যানথিম জোসেপ গিওনেট। অপরাধ বিষয়ক এক অভিযোগে বলা হয়েছে, শুক্রবার তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে টেক্সাসের হিউজটন থেকে। তার বিরুদ্ধে দু’দফা ফেডারেল অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সহিংসতার সঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করা এবং ক্যাপিটল হিলে বিশৃংখলা সৃষ্টি করা।