রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:১৬ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : পরিকল্পনা কমিশনে চাহিদাপত্র অনুযায়ী সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (আরএডিপি) পদ্মা বহুমূখী সেতু নির্মাণ প্রকল্পে মাত্র ২ হাজার ৯৯ কোটি টাকা চেয়েছে সেতু বিভাগ, যেখানে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ ছিল ৫ হাজার কোটি টাকা। ফলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের আওতায় ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা খরচই হচ্ছে না।
পদ্মাসেতু ও মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পকে গুরুত্ব দিয়ে ২০২০-২১ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বরাদ্দ রাখা হয় ২ লাখ ৫ হাজার ১৪৫ কোটি টাকা। উন্নয়ন বাজেটে পদ্মাসেতু প্রকল্পে ৫ হাজার এবং চলমান মেট্রোরেল প্রকল্পে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়।
করোনা সঙ্কট কেটে সবকিছু স্বভাবিক অবস্থায় আসবে, এই আশা নিয়েই এডিপি অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু করোনা মহামারি দীর্ঘদিন থাকায় পদ্মা সেতু প্রকল্পে খরচ হচ্ছে না ২ হাজার ৯০১ কোটি টাকা। বরাদ্দ কমছে কর্ণফুলি টানেল প্রকল্পেও। তবে এডিপির অর্থ খরচে সফলতা দেখিয়েছে মেট্রোরেল প্রকল্প। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, বর্তমানে সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (আরএডিপি) নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে পরিকল্পনা কমিশন। চলতি বছরের মার্চের শেষের দিকে চূড়ান্ত হবে আরএডিপি। অনেক মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের বাস্তবায়িত প্রকল্পে চাহিদার কথা পরিকল্পনা কমিশনে জানিয়েছে। প্রতিবছরের মতো এবারও চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বড় ধরনের কাটছাঁট হবে। মূলত বাস্তবায়ন না হওয়ায় এই কাটছাঁটে যাচ্ছে সরকার।
তবে বাস্তবায়ন পরিস্থিতি সন্তোষজনক না হলেও নতুন প্রকল্প সংশোধিত এডিপিতে ঢুকিয়ে দেওয়ার পুরনো প্রয়াস আবারও দেখা গেছে। আর রাজনৈতিক চাপেই সংশোধিত এডিপিতে অন্তর্ভুক্ত করার জন্য প্রস্তাবনা পরিকল্পনা কমিশনে জমা পড়েছে। স্বাস্থ্য, শিক্ষা, গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন ও কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য খাতে আসতে পারে একগুচ্ছ নতুন প্রকল্প।
এদিকে সংশোধিত এডিপিতে আট হাজার কোটি টাকা কাটছাঁট করছে সরকার। পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগ সংশোধিত এডিপি নিয়ে মূলত ব্যস্ত সময় পার করছে।
পরিকল্পনা কমিশনের কার্যক্রম বিভাগের যুগ্ম প্রধান (কৃষি, শিল্প ও সমন্বয় উইং) মো. ছায়েদুজ্জামান বাংলানিউজকে বলেন, অনেক আগে থেকেই আমরা আরএডিপি নিয়ে কাজ করছি। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ তাদের চাহিদার কথা আমাদের কাছে উল্লেখ করছে। অনেক প্রকল্পে বরাদ্দ বেশি চাওয়া হচ্ছে আবার করোনার কারণে কিছু প্রকল্পে টাকা খরচ হচ্ছে না।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়াই আবারও পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের সময় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জুন মাসে। প্রস্তাব অনুযায়ী সময় বাড়ানো হলে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৩ সালের ৩০ জুন। এ পর্যন্ত প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন হয়েছে ৮৩ শতাংশ। প্রকল্পের ব্যয় ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ ৭৬ হাজার টাকা।
বঙ্গবন্ধু টানেল
দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির দ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের লাইফলাইন খ্যাত কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের দ্বিতীয় টিউবের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের আওতায় এডিপি বরাদ্দ ছিল ১ হাজার ৫৫০ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত এডিপিতে কমে দাঁড়াচ্ছে ১ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। ফলে চলতি অর্থবছরে খরচ হচ্ছে না ১২৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৬২ শতাংশ।
পদ্মাসেতু রেল লিংক ও বঙ্গবন্ধু রেল সেতু প্রকল্পেও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছিল নতুন এডিপিতে। এ খাতে রয়েছে সড়ক পরিবহন, সেতু বিভাগ এবং রেলপথ, নৌ, বেসামরিক বিমান পরিবহন। পদ্মা সেতু ও রেলসংযোগ, মেট্রোরেলসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে সরকার।
মেট্রোরেল-৬ প্রকল্পের অগ্রগতি ভালো ছিল। তবে কোভিড-১৯ প্রকল্পের গতিরোধ করেছে। এরপর সব প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের বিজয় দিবসে বাংলাদেশের প্রথম উড়াল মেট্রোরেলের সম্পূর্ণ অংশ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এজন্য নতুন অর্থবছরে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সংশোধিত এডিপিতেও খরচে সফলতা দেখিয়েছে প্রকল্পটি। আরএডিপিতে ৫ হাজার ৫৪২ কোটি টাকা খরচ করতে পারবে বলে পরিকল্পনা কমিশনকে অবহিত করেছে মেট্রোরেল প্রকল্পের রাষ্ট্রায়ত্ত বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠান ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন বর্ষ ২০২১ সালের ১৬ ডিসেম্বর মেট্রোরেল প্রকল্পের উদ্বোধন করা হবে।
ঢাকার যানজট নিরসন ও নগরবাসীর যাতায়াত আরামদায়ক, দ্রুততর ও নির্বিঘ্ন করতে ২০১২ সালে গৃহীত হয় মেট্রোরেল প্রকল্প। ২৪ সেট ট্রেন চলাচল করবে। প্রত্যেকটি ট্রেনে থাকবে ৬টি করে কার। যাত্রী নিয়ে ঘণ্টায় ১শ কিলোমিটার বেগে ছুটবে এ ট্রেন। উভয়দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী বহনে সক্ষমতা থাকবে মেট্রোরেলের। প্রকল্পের মোট ব্যয় ২১ হাজার ৯৮৫ কোটি টাকার মধ্যে প্রকল্প সাহায্য হিসেবে ১৬ হাজার ৫৯৪ কোটি ৫৯ লাখ টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)। মেট্রোরেল প্রকল্পের সার্বিক গড় অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৯৪ শতাংশ।