বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় হেফাজত!

তরফ নিউজ ডেস্ক: প্রতিষ্ঠার পর এতটা চাপের মুখে পড়েনি কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক কথিত অরাজনৈতিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম। এমনকি ২০১৩ সালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে মতিঝিলের শাপলা চত্বর ছাড়ার পরও এত ধরপাকড় এবং সরকারের রোষানলে পড়েনি সংগঠনটি। কোনো উপায় না পেয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পাঁচ সদস্যের একটি আহ্বায়ক কমিটি করা হলেও এই ধাক্কা হেফাজতে ইসলামকে অনেকটা অস্তিত্ব সংকটে ফেলেছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা এখন কোনো রকম অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান বলে জানিয়েছেন হেফাজতের নেতারা।

নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফর ঘিরে কর্মসূচি না থাকলেও নাশকতার সব দায় চেপেছে হেফাজতে ইসলামের ওপর। এসব ঘটনায় দায়ের করা মামলায় হেফাজতের প্রায় দুই ডজন নেতা গ্রেপ্তারের পর সংগঠনটি প্রচণ্ড চাপের মুখে পড়ে। এমনকি আমির মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরীও গ্রেপ্তার হতে পারেন, এমন আভাস পাওয়ার পর সংগঠনটি তাদের কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করতে বাধ্য হয়। রবিবার রাতে হেফাজত আমির নিজে ভিডিও বার্তায় কমিটি বিলুপ্ত করেন। এর কয়েক ঘণ্টা পর সোমবার ভোররাতে পাঁচ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির ঘোষণা আসে।

হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ইসলামি রাজনৈতিক দলের নেতাদের কমিটিতে ব্যাপক হারে জায়গা দেয়ার খেসারত আজ আমাদের দিতে হচ্ছে। রাজনৈতিক নেতাদের প্রাধান্য না থাকলে আমাদেরকে আজ এমন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হতো না।’

তার মতে, হেফাজতে ইসলাম মাওলানা মামুনুল হকের পক্ষ নিয়ে বড় ভুল করেছে। সাংগঠনিকভাবে তার ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে পারতো সংগঠনটি। তা না করে যেভাবে মামুনুল হকের সব কর্মকাণ্ডকে বৈধতা দিয়েছে হেফাজত, এর পরিণাম আজ সংগঠন ভোগ করছে বলে মনে করছেন তিনি।

হেফাজতের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এটা নিয়ে তাদের মনেও আছে ক্ষোভ। দুই-চারজন ব্যক্তির বিতর্কিত কর্মকাণ্ড কিংবা রাজনৈতিক উচ্চাভিলাসের দায় কেন পুরো সংগঠনকে ভোগ করতে হবে, এমন প্রশ্ন রাখেন অনেকে।

কেন হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করতে হলো সেই বিষয়টি পরিষ্কার করে বলতে রাজি হননি আগের কমিটির মহাসচিব ও নতুন সদস্য সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী৷ তিনি জার্মানভিত্তিক সংবাদ সংস্থা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বাবুনগরী তো বলেছেন৷ সেটাই আমাদের কথা৷ এর চেয়ে বেশি পরিষ্কার করা যাবে না৷ বর্তমান পরিস্থিতি কী তা আপনিও জানেন, আমিও জানি৷ এটা তো জটিল কিছু না, কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে, আহ্বায়ক কমিটি বানানো হয়েছে৷’

হেফাজতে ইসলাম প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। সেই সময় নারী নীতিমালার বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে সংগঠনটির যাত্রা। তবে সংগঠনটি জাতীয় পর্যায়ে পরিচিতি লাভ করে ২০১৩ সালে। শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চ থেকে ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তি হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে ওই বছরের ৬ এপ্রিল সংগঠনটি ঢাকা অভিমুখে লংমার্চ করে। তাদের এই শোডাউন ব্যাপক নজর কাড়ে বিভিন্ন মহলের। তবে এর ঠিক এক মাস পর ৫ মে ঢাকা ঘেরাও কর্মসূচিতে শাপলা চত্বরে অবস্থানকালে মধ্যরাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে পালাতে বাধ্য হন হেফাজতের নেতাকর্মীরা। এরপর সংগঠনটি অনেকটা চুপসে যায়।

হেফাজতের প্রতিষ্ঠাতা আমির ছিলেন আল্লামা শাহ আহমদ শফী। তার ব্যক্তিত্বের কারণে সারাদেশের মানুষ তাকে সমীহ করতো। পরবর্তী সময়ে সরকারের সঙ্গেও দেশের শীর্ষ এই আলেমের সুসম্পর্ক গড়ে উঠে। তার নেতৃত্বেই কওমি মাদ্রাসা দাওরায়ে হাদিসের সনদের সরকারি স্বীকৃতি পায়। এমনকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে শোকরিয়া মাহফিলে প্রধানমন্ত্রীকে ‘কওমি জননী’ উপাধিও দেন আলেম-উলামারা।

আল্লামা শফী ইন্তেকাল করেন গত বছরের সেপ্টেম্বরে। তার ইন্তেকালের পর কাউন্সিলের মাধ্যমে হেফাজতের আমির নির্বাচিত হন মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী, যিনি আল্লামা শফীর কমিটির মহাসচিব ছিলেন। এই কমিটিতে স্থান পাননি আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানীসহ তার পক্ষের অনেক নেতা। অভিযোগ রয়েছে, বাবুনগরীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক আলেমরা প্রাধান্য পান। মূলত তাদের কারণে হেফাজত ধীরে ধীরে সরকারবিরোধী অবস্থানে চলে যায় এবং মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে তা চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে।

এছাড়া সম্প্রতি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হকের রিসোর্টকাণ্ডের পর তার বিরুদ্ধে হেফাজত কোনো ব্যবস্থা নেবে এমনটা প্রত্যাশা ছিল সর্বমহলের। কিন্তু হেফাজত এই ইস্যুতে জরুরি বৈঠক করলেও দাবি করে সেখানে মামুনুল হক ইস্যুতে কোনো আলোচনা হয়নি। এছাড়া এটা মামুনুল হকের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় বলেও মন্তব্য করেন বাবুনগরী। মূলত হেফাজতের এই অবস্থানই সংগঠনটিকে আরও চাপে ফেলে।

সূত্র জানায়, বর্তমানে হেফাজতে ইসলাম কোনো রকম নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চায়। আপাতত কোনো কর্মসূচি দেবে না সংগঠনটি। কিছুটা সময় নিয়ে নতুন কমিটি করতে পারে। তবে সেই কমিটিকে রাজনৈতিক বলয়মুক্ত রাখার ব্যাপারে ঘরে-বাইরের চাপ আছে সংগঠনটির ওপর।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com