শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি: মধুমাস নামে পরিচিত বাংলা জ্যৈষ্ট মাস। এ মাসে বিভিন্ন ফল পাকে। পাকা ফল বিভিন্ন হাট-বাজার গুলো ভরে উঠে। এসব ফলের আগমনে পাল্টে যায় বাজারের দৃশ্য। বাহারি ফলের সারিসারি সাজে বেড়ে যায় বাজারের সৌন্দর্য। ফলের বাজারের কাছ দিয়ে গেলেই বাহারি ফলের মৌ-মৌ গ্রানে মুহিত হন মানুষ। এ মাসে আম, কাঠাল, লিচু, জাম সহ অনেক ফল পাকে তাই জ্যৈষ্ট মাসকে মধু মাস বলেই চেনেন সবাই।
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গল উপজেলা পাহাড়-টিলা থাকায় এখানে আম, কাঠাল, লিচু, লেবু আর আনারস হয় ব্যপক। এ উপজেলায় কাঠাল, লিচু আনারসের ফলনও হয় ভালো। শ্রীমঙ্গলের আনারস সুস্বাধু হওয়ায়, দেশজুড়েই রয়েছে শ্রীমঙ্গলের আনারসের চাহিদা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসেন আনারস কিনতে। শ্রীমঙ্গল পুরানবাজার-নতুনবাজারে হয় এসব ফলের পাইকারি ও খুচরা বেচা-কেনা । ভোর থেকে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্রেতারা আনারস, আম, কাঠাল ও লিচু নিয়ে বাজারগুলোতে আসতে থাকেন। বিভিন্ন জেলা-উপজেলা থেকে পাইকারি ক্রেতারা আগে থেকেই ফল কিনার জন্য বাজারে চলে আসেন। ভোর সকালেই ফলের বাজার ক্রেতা-বিক্রেতাদের আগমনে মুখরিত হয়ে ওঠে। এই ফলের হাটের বেচা-কেনা সকাল আটটার আগেই শেষ হয়ে যায়। গড়ে তিন থেকে চার ঘন্টা চলে এই মৌসুমী ফলের পাইকারি হাট।
রোববার ভোর ছয়টায় বাজারে গিয়ে দেখা যায়, শয়ে-শয়ে ঠেলাগাড়ী আনারস আর কাঠাল নিয়ে সারিবদ্ধভাবে দাড়িয়ে আছে। স্থানীয় ও দুরদূরান্তের ফল কারবারিরা কেনার জন্য দরদাম করছেন, কেউ কেউ আবার ফল কিনে বিভিন্ন গাড়িতে তুলছেন। কথা হয়, পাইকারি ফল কিনতে আসা সুমন মিয়া নামে এক পাইকারের সাথে, তিনি এসেছেন সুনামগঞ্জ থেকে। সুমন মিয়া জানান, তিনি প্রতিবছরই শ্রীমঙ্গল থেকে আনারস আর কাঠাল কিনে নিয়ে বিক্রি করেন। এবারও তিনি এই বাজার থেকে কাঠাল-আনারস নিয়ে বিক্রি করছেন, আজকের বাজার সহ তিনি এ সিজনে পাঁচ চালান ফল কিনে নিয়ে বিক্রি করেছেন, প্রথম ও দ্বিতীয় চালানের ফল বিক্রি করে ভালো লাভ হয়েছিল তাঁর। এর পর থেকে প্রচুর পরিমানে ফল বাজারে আসায়, ফলের দাম কিছুটা কম থাকায়, লাভ বেশী পাচ্ছেন না সুমন মিয়া।
আরেক কারবারি মৌলভীবাজারের ওয়াছিল মিয়ার সাথে কথা হয়, ওয়াছিল জানান, এ সিজনে শ্রীমঙ্গল থেকে তরমুজ কিনে মৌলভীবাজরে বিক্রি করে ভালই লাভ করেছেন। এখন কাঠাল, আর আনারসের ব্যববসা করছেন, শ্রীমঙ্গলের ফলের বাজার থেকে কাঠাল, ও আনারস কিনে নিয়ে তার এলাকায় বিক্রি করেন, তিনি জানান, শ্রীমঙ্গলের আনারসের চাহিদা বেশি থাকায়,আনারসের দাম একটু বেশি। তবুও তিনি আনারস আর কাঠাল কিনেছেন বিক্রির জন্য।
এছাড়া আরেক কারবারির সাথে আলাপ হয়, তিনি সিলেট থেকে রাতে এসেছেন আনারস-কাঠাল কিনতে। বকুল মিয়া নামের এই মৌসুমী ফল কারবারি জানান, বছরের ১০মাস তিনি রাজমিস্ত্রির কাজ করেন, আর ফলের সিজনে দুই মাস তিনি শ্রীমঙ্গল থেকে ফল কিনে সিলেটে বিক্রি করেন। তিনি জানান, এ ব্যবসা তিনি কয়েক বছর ধরে করে যাচ্ছেন, এ দুইমাসে তাঁর ভালোই লাভ হয়, তাই বছরে দুইমাস তিনি মৌসুমী ফলের ব্যবসা করে আসছেন। অন্য জেলার পাইকারদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, ফলের বাজার খুব ভোর থেকে শুরু হওয়ায়, ভোরে বাজার ধরতে আগের দিনই দুরের ব্যবসায়ীরা শ্রীমঙ্গলে চলে আসেন। রাতে বাজার এলাকার বিভিন্ন হোটেলে রাত্রিযাপন করে ভোরে ফল কিনে পিকআপভ্যানে, ট্রাকে করে ফল নিয়ে যান। চোটখাটো কারবারিরা সিএনজি চালিত অটোতে করে ফল নিয়ে ফেরেন গন্তব্যে।