বুধবার, ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৮:১১ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :
বৃহস্পতিবার সারা দেশে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ ঘোষণা চট্টগ্রামে ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে নিহত ৩ কলম্বিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয়বার কোপা আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনা বাহুবলে স্মার্ট এনআইডি কার্ড বিতরণের জন্য জনবল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি বাহুবলে দুই মাস ধরে নিখোঁজ রবিউলের সন্ধান চায় পরিবার যে কারণে ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকি দেয় সোহাগ ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকিদাতা গ্রেপ্তার পিএসসির প্রশ্নফাঁস: দায় স্বীকার করে ৭ জনের জবানবন্দি, ১০ জন কারাগারে দেশের সম্পদ বেচে মুজিবের মেয়ে ক্ষমতায় আসে না: প্রধানমন্ত্রী ব্যারিস্টার সুমনকে হত্যার হুমকি, প্রতিবাদে বাহুবলে মানববন্ধন

উপজেলা নির্বাচন : বানিয়াচংয়ে কাদের হাতে উঠছে এবার নৌকা ধানের শীষ?

রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের রেষ কাটতে না কাটতেই শুরু হয়েছে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যে শোনা যাচ্ছেন আগামী মার্চ মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। তফসিল ঘোষণা হবে ফেব্রুয়ারি মাসে। নির্বাচনে প্রার্থী হতে প্রস্তুতি নিচ্ছেন বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগ,বিএনপির অনেকেই। কাদের হাতে উঠছে নৌকা আর ধানের শীষের প্রতীক !

এ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ইতিমধ্যে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা শুরু করেছেন দৌড়ঝাপ। এই প্রথম দলীয় প্রতীকে বানিয়াচং উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তাই এবার উপজেলা নির্বাচন জমে উঠবে বলে অনেকেই ধারনা করছেন। উপজেলা নির্বাচনে স্থানীয় আওয়াামী লীগ ও বিএনপি থেকে অনেকেই প্রার্থী হওয়ার ঘোষনা দিয়ে মাঠে কাজ শুরু করেছেন।

এদিকে নির্বাচনের দিন-তারিখ ঠিক না হলেও প্রার্থীরা দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে যোগযোগ অব্যাহত রেখেছেন। এলাকার ভোটাদের কাছে তাদের প্রার্থিতা হওয়ার খবরও ছড়িয়ে দিচ্ছেন। চায়ের স্টল থেকে আরম্ভ করে উপজেলা সর্বত্রই এখন নির্বাচন নিয়ে শুরু হয়েছে নতুন করে আলোচনা-সমালোচনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে প্রার্থী সমর্থকদের প্রচারণা। নির্বাচনে একক প্রার্থীকে সমর্থন দিতে দলের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে বলে সূত্রে জানা গেছে। প্রার্থী হতে আগ্রহী অনেকেই জানিয়েছেন তারা নিজ নিজ দলের সমর্থন পেলে নির্বাচনে অংশ নিবেন। আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নড়েচড়ে বসেছেন। প্রকাশ্যে না হলেও তারা নীরবে চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের লবিং। কে পাবে আ’লীগের দলীয় টিকেট তা নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা। দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা কার হাতে নৌকার দায়িত্ব দেন তা নিয়ে এলাকাবাসীর মাঝে শুরু হয়েছে কানাঘোষা। অন্যদিকে ধানের শীষের জন্যও বিএনপির প্রার্থীরা দলের হাইকমান্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা চলেছেন।

আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান প্রার্থী হওয়া আগ্রহ প্রকাশ করেছেন, বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক শেখ বশীর আহমদ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমির হোসেন মাষ্টার, সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান হায়দরুজ্জামান খান ধন মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও ১১নং মক্রমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া, উপজেলা আ’লীগের যুব ক্রীড়া সম্পাদক ও ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান  আবুল কাশেম চৌধুরী, উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি এডভোকেট মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহিন। জাতীয় জাতীয় ছাত্রসমাজের কেন্দ্রীয় নেতা এডভোকেট সাদিকুর মিয়া তালুকদার, জাপা নেতা দেওয়ান শোয়েব রাজাও দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যােেচ্ছন। বাম জোট থেকে নির্বাচন করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ইমদাদুল হোসেন খান।

তবে নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসবে প্রার্থীর সংখ্যা আরও কিছুটা বৃদ্ধি পাবে বলে দলীয় নেতাকর্মীরা মনে করেন। তবে বর্তমানে তারাই আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার আশা ব্যক্ত করেছেন। দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী অনেক প্রার্থীরা প্রকাশ্যে প্রচার-প্রচারনা না করলেও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে তাদের সরব উপস্থিতি লক্ষ করা যাচ্ছে। আর তারা এসব সামাজিক অনুষ্ঠানে কৌশলে আগামী উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থিতা হওয়ার ঘোষনা দিয়ে প্রচার-প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে থেকে জানা গেছে।

আগামী উপজেলা নির্বাচনে আ.লীগ, বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী প্রার্থীরা ব্যক্তি ইমেজ, দলীয় পরিচয়, বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডের বিষয়গুলো দলীয় নেতাকর্মীরদের অবহিত করছেন বিভিন্ন উপায়ে। আগামী উপজেলা নির্বাচনে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পেলে নির্বাচনে অংশগ্রহন করবেন বলে তারা জানান। তবে এদের মধ্যে আমির হোসেন মাষ্টার ও জাতীয় ছাত্র সমাজের কেন্দ্রীয় নেতা সাদিকুর মিয়া তালুকদার সদ্য শেষ হওয়া জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজনিজ দল থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য কেন্দ্রে জোর লবিং-তদবির করেও শেষমেষ দলের মনোনয়ন থেকে বঞ্চিত হন।

জানা গেছে, আগামী মাসে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হবে এমন খবরে দলীয় প্রতীক নৌকা, ধানের প্রতীক পেতে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীরা এখন থেকেই দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। সম্ভাব্য প্রাার্থীরাও নিরব প্রচার-প্রচারনায় চালিয়ে যাচ্ছেন। পনেরটি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বানিয়াচং উপজেলা। এই উপজেলায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলই অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে থাকে। গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে একাধিক প্রার্থী উপজেলা নির্বাচনে মনোনয়ন প্রাপ্তির জন্য লড়াই করেন। আর এতে দ্বিধা-বিভক্ত হয়ে পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগ। এবারও এর ব্যতিক্রম হবেনা এমনটাই মনে করছেন স্থানীয়রা। উপজেলা নির্বাচন দলীয় প্রতীকে হওয়ার কথা রয়েছে। যদি দলীয় প্রতীকে উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তবে বানিয়াচংয়ে এটাই হবে উপজেলা পরিষদের প্রথম দলীয় প্রতীকের নির্বাচন। জাতীয় প্রতীকে স্থানীয় নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনায় প্রার্থীরা উপজেলা ও জেলার সিনিয়র নেতাদের কাছে আগাম নিরবে লবিং শুরু করেছেন বলে জানা গেছে। তাদের জন্য দলীয় মনোনয়ন লাভই যেন প্রথম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সর্বশেষ কার কপালে জাতীয় প্রতীকের মনোনয়ন রয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব হচ্ছেনা।

এ ব্যাপারে বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ বশীর আহমদ জানান, নির্বাচন করার ইচ্ছে রয়েছে। তবে তা নির্ভর করছে দলীয় সিদ্ধান্তের উপর। দল যদি নির্বাচনে যায় আমিও দলের প্রতীক পাওয়ার জন্য লড়ব। জনগন যদি ঠিকমতো ভোট দিতে পারে তাহলে আমি বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করব আশা করি।

আমির হোসেন মাষ্টারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তার ব্যবহৃত মোবাইলে বারবার রিং দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান বলেন-উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালীন লোভ-লালসার উর্ধ্বে উঠে জনগনের জন্য কাজ করেছি। নেতাকর্মীদের পাশে থেকেছি সার্বক্ষণিক। বিগত নির্বাচনে প্রার্থী বেশি থাকায় পরাজয় হয়েছে। এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে,তাই দল আমার হাতেই নৌকার প্রতীক তুলে দিবে হাইকমান্ড এটাই আশা করি। দলের বাহিরে গিয়ে নির্বাচন করার প্রশ্নই আসেনা।

সাবেক চেয়ারম্যান হায়দরুজ্জামান খান ধন মিয়া জানান, ইউপি চেয়ারম্যান থাকাকালীন এলাকায় মসজিদ, কলেজ,বাজার, পোস্ট অফিস ছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পন্ন করেছি। তাই দল আামকেই উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে বিবেচনা করবে বলেই আশা করি।

চেয়ারম্যান আহাদ মিয়া বলেন-ভোটাররা পরিবর্তন চায়। দলীয় কর্মী আর ইউপি চেয়ারম্যান হওয়ায় উপজেলায় আমার আলাদা গ্রহন যোগ্যতা রয়েছে। শেখ হাসিনার মনোননীত ইউপি চেয়ারম্যান আমি। তাই আগামী উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। তবে দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে কোনো কাজ করবনা।

এদিকে গত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী আওয়ামী লীগ নেতা ও ১০নং সুবিদপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান, পরপর কয়েকবার উপজেলার শ্রেষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছি। বিগত নির্বাচনে আমি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছি। তাছাড়া সর্ব মহলে আমার ব্যাপক জনপ্রিয়তা রয়েছে। আমি আশা করি গত নির্বাচনের কথা ভেবে দল আমাকেই দলীয় প্রার্থী হিসেবে বাছাই করবে। তবে দলের বাহিরে গিয়ে ও স্বতন্ত্র ভাবে নির্বাচন করবনা ।

উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি মঞ্জুর উদ্দিন আহমেদ শাহিন জানান, দল নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দলীয় টিকেট চাইবো। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ থেকে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের বানিয়াচং শাখার সাধারণ সম্পাদক বাবু কাজল চ্যাটার্জি, পূজা উদযাপন পরিষদ বানিয়াচং শাখার সভাপতি কৃষ্ণ দেব। রয়েছেন জামায়াত ইসলামীর বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান ইকবাল বাহার খান। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জাহানারা আক্তার বিউটি ও মহিলা আ’লীগ নেত্রী হাসিনা আক্তার। বিএনপি থেকে প্রার্থী হতে মাঠে রয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান তানিয়া খানম। তবে এখন পর্যন্ত তানিয়া খানম ছাড়া আর কারো নাম শুনা যায়নি।

উল্লেখ্য, ১৫টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত হয়েছে বানিয়াচং উপজেলা । এই উপজেলায় মোট ভোটার রয়েছে ২ লাখ ২৮হাজার ৯৯৯জন। তন্মধ্যে পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৩ হাজার ৬৬২জন। আর মহিলা ভোটার রয়েছে ১ লাখ ১৫ হাজার ৩শ ৩৩৭জন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com