রবিবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: করোনার প্রকোপ ঠেকাতে চলমান কঠোর বিধিনিষেধ বা লকডাউনের চার দিন পার হয়েছে। সরকারের ঘোষিত এক সপ্তাহের বিধিনিষেধ শেষ হচ্ছে আগামী বুধবার। তবে এর মধ্যেই আরও এক সপ্তাহ এই বিধিনিষেধ অব্যাহত রাখার আলোচনা শুরু হয়েছে। করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী আরও এক সপ্তাহ বিধিনিষেধ বাড়ানো হতে পারে বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে।
করোনাসংক্রান্ত কারিগরি পরামর্শক কমিটি করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ১৪ দিন পুরো দেশ শাটডাউন করার পরামর্শ দিয়েছিল। তবে সরকার দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার কথা চিন্তা করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করে। অর্থনীতি সচল রাখতে অনেক ক্ষেত্রে ছাড় দিতে হয়।
রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, কঠোর বিধিনিষেধ আরও এক সপ্তাহ বাড়ানোর ব্যাপারে আলোচনা চলছে। তবে এ ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। কাল-পরশুর মধ্যে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
গত বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া লকডাউন পুরোপুরি কার্যকর না হলেও অনেকাংশে বাস্তবায়ন হচ্ছে। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশ অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে এই লকডাউনের কারণে। সাধারণ মানুষকে ঘরে রাখতে প্রশাসন নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এবারের লকডাউনের শুরুর দিন থেকে বিধিনিষেধ অমান্য করায় কয়েক হাজার লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়া জরিমানা আদায় ও মুচলেকা নিয়ে অনেককে ছেড়ে দেয়া হচ্ছে। পুলিশ, র্যাব ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা সারাদেশেই তৎপর রয়েছেন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে মোটামুটি ১৪ দিন বিধিনিষেধ পালন করতে পারলে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসতে পারে।
এদিকে দেশে করোনার ভয়াবহতা দিন দিন বেড়েই চলছে। গত আট দিন ধরে দেশে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। রবিবার রেকর্ডসংখ্যক ১৫৩ জন মারা গেছে। এদিন দেশে করোনায় মৃত্যু ১৫ হাজার ছাড়িয়েছে। সংক্রমণের হারও ৩০ শতাংশের কাছাকাছি। এখনই সর্বাত্মক চেষ্টা না চালালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় টেকনিক্যাল পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সহিদুল্লাহ রবিবার রাতে গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা প্রথম যখন পরামর্শ দিয়েছি তখনই আমরা পরিষ্কারভাবে বলেছি বিজ্ঞানসম্মতভাবে করোনা সংক্রমণ কমাতে চাইলে লকডাউন দুই সপ্তাহ দিতে হবে। আমরা এখনো সেটাতেই স্ট্যান্ড করছি। আমরা মনে করেছি সেটাই প্রয়োজন। এক সপ্তাহ দিয়ে কোনো কাজ হবে না। নতুন করে আর কোনো সুপারিশ করিনি আমরা। আমাদের আগের পরামর্শ অনুসারে কার্যকর ফলাফলের জন্য ৭ জুলাই লকডাউন শেষ হলে তা আরও এক সপ্তাহ দেয়া প্রয়োজন।’
এদিকে এই কমিটির সদস্য ডা. কাজী তারিকুল ইসলাম বলেন, ‘এবারের পরিস্থিতি ভয়ানক। কারণ এবারের যে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট তা অত্যন্ত ভয়ানক। যারা ভেবেছিলেন, করোনা শুধু বড়লোকদের সংক্রমিত করে, তারা এবার বুঝতে পারছেন করোনা কাউকেই ছাড়ে না। এই ভ্যারিয়েন্ট শহর-গ্রাম সর্বত্র দ্রুত ছড়ায়। এই ভয়াবহতা থেকে মানুষকে রক্ষা করতেই বিধিনিষেধ আরও সাত দিন বাড়াতে হবে।’
গত ২৪ জুন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ সহিদুল্লাহ স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে সারাদেশে ১৪ দিনের শাটডাউনের সুপারিশ করা হয়। এর আলোকে গত ২৮ জুন থেকে ৩০ জুন তিন দিন সীমিত পরিসরে লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। আর ১ জুলাই থেকে শুরু হয় কঠোর বিধিনিষেধ।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা শনাক্ত হলে সরকার দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে। টানা কয়েক মাস কার্যত লকডাউন চলার পর আস্তে আস্তে সবকিছু স্বাভাবিক হয়। চলতি বছরের মার্চের শেষে দেশে করোনা পরিস্থিতি আবার অবনতি হতে থাকে। এটাকে বিশেষজ্ঞরা করোনার দ্বিতীয় ঢেউ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। সরকার এপ্রিলে দ্বিতীয়বারের মতো কঠোর বিধিনিষেধ ঘোষণা করে। এই উদ্যোগের ফলে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এলেও জুনে আবার অবস্থার অবনতি হয়। এ নিয়ে করোনা পরিস্থিতির কারণে দেশে তৃতীয়বারের মতো কার্যত লকডাউন চলছে।