রবিবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮:০০ অপরাহ্ন

অর্ধশতাধিক মডেল-অভিনেতা নজরদারিতে

চিত্রনায়িকা পরীমণি ও প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ

তরফ নিউজ ডেস্ক: উঠতি মডেল ও নায়িকাদের নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ ও প্রতারণার ফাঁদ পেতেছেন কিছু ব্যবসায়ী, প্রযোজক, নৃত্য পরিচালক পরিচয় দেয়া ব্যক্তি। তারা সুন্দরীদের মাদক, পর্নোগ্রাফিসহ অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে দামি গাড়ি, বাড়ি সহ বিলাসী জীবনের ফাঁদে ফেলেন।

বিনোদনজগতে পা রাখার দুই বছরের মধ্যেই এমন সিন্ডিকেটে জড়িয়ে ব্যাপকভাবে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন হালের জনপ্রিয় নায়িকা শামসুন্নাহার স্মৃতি ওরফে পরিমণি। জনপ্রিয় নায়িকার আড়ালে চক্রের সঙ্গে মিশে কাটাচ্ছিলেন বেপরোয়া জীবন।

অনৈতিক কারবারের চক্রে মডেল ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা, মৌ আক্তার সহ প্রায় ৩০ জন মডেল-চিত্রনায়িকা সক্রিয়ভাবে জড়িয়েছেন।

তারা অন্তত ১০০ মডেল-চিত্রনায়িকাকে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করেছেন।

জানা গেছে, ধরপাকড় শুরু হওয়ায় বিনোদন জগতের অন্ধকারের বাসিন্দাদের রমরমা সামাজ্য তছনছ হয়ে পড়েছে। গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন অনেকেই।

বুধবার (৪ আগস্ট) পরীমনির সঙ্গে ধারাবাহিক অভিযানে গ্রেফতার প্রযোজক নজরুল ইসলাম রাজ একটি চক্রের অন্যতম হোতা। এর আগে বোট ক্লাবে পরিমণির সঙ্গে থাকা তুহিন সিদ্দিক অমি, মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) র‌্যাবের হাতে গ্রেপ্তার শরফুল হাসান ওরফে মিশু হাসানসহ অন্তত এক ডজন পুরুষ ও নারী আছেন, যারা পেশার আড়ালে অনৈতিক কাজে জড়িত।

র‌্যাব ও পুলিশের গোয়েন্দারা তাদের ব্যাপারে তথ্য যাচাই ও নজরদারি করে দেখছেন। নাম আসা মডেল-চিত্রনায়িকাদের ব্যাপারেও যাচাই চলছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ফ্ল্যাটে পার্টির নামে বিত্তবান পরিবারের প্রতিষ্ঠিত যুবকদের ডেকে মদপান করিয়ে বা অনৈতিক কাজের সময় আপত্তিকর ছবি তুলে রাখে এসব চক্র। এরপর ব্ল্যাকমেইল করে টাকাসহ বিভিন্ন দামি ‘উপহার’ আদায় করে নেয়।

সম্প্রতি একটি প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এমন ফাঁদে পড়েন বলে প্রশাসনের কাছে তথ্য যায়। যাচাই-বাছাই করে দেখা যায়, বেপরোয়া জীবন যাপন করা সুন্দরী নারীদের নিয়ে হাইসোসাইটিতে অনৈতিক কারবার চলছে। এতে অনেকের ভাবমূর্তিও সংকটে পড়েছে। মিডিয়ার দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও এ ধরনের অপকর্মে বিব্রত। এসব কারণে পিয়াসা ও মৌকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমেই শুরু হয়েছে অভিযান। এর সূত্র ধরে মিশু হাসানকে গ্রেফতার করা হলে রাজের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের সিন্ডিকেট এবং পরিমণি জড়িত থাকার তথ্য পান র‌্যাবের গোয়েন্দারা।

বোট ক্লাবকাণ্ডে পরিমণির সঙ্গে থাকা বন্ধু পরিচয় দেয়া অমিও একই ধরনের কর্মকাণ্ডে জড়িত। রাজ, অমিসহ কয়েকজনের কথায় পরিমণি কাজ করেছেন বলে জানায় সূত্র।

তাদের মধ্যে একজন বিনোদন সাংবাদিকও রয়েছেন। প্রাথমিকভাবে অবৈধ মাদক উদ্ধারের ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও পর্নোগ্রাফি সহ প্রতারণার মামলা হতে পারে বলে জানায় তদন্তকারী সূত্র।

পরীমণির বাসায় একটি মিনিবার পরিচালনার বিভিন্ন সরঞ্জাম সহ ৩৩ বোতল বিভিন্ন প্রকার বিদেশি মদ সহ দেড় শতাধিক ব্যবহৃত মদের বোতল, ইয়াবা ও সিসাসামগ্রী, এলএসডি, আইস ও ইলেকট্রনিক ডিভাইস জব্দ করা হয়।

লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, পরিমণি পিরোজপুরের একটি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়া অবস্থায় ঢাকায় এসে সিনেমায় নাম লেখান। ২০১৪ সালে কাজ শুরু করে ৩০টি সিনেমা এবং পাঁচ থেকে সাতটি টিভিসিতে অভিনয় করেছেন। তার মিডিয়াজগতে আসার পেছনে ছিলেন রাজ। ২০১৬ সাল থেকেই পরিমণি নিয়মিত অ্যালকোহল সেবন করেন। মাত্রাতিরিক্ত চাহিদা মেটাতে তিনি বাসায় একটি মিনিবার স্থাপন করেন। মিনিবার থাকায় তার বাসায় পার্টির আয়োজন করা হতো। সেই পার্টিতে বিভিন্ন প্রকার মাদক সরবরাহ করতেন রাজ।

র‌্যাব পরিচালক বলেন, ‘পরিমণির একটি মাদকের লাইসেন্স আছে, তবে সেটির মেয়াদ নেই। আর লাইসেন্স থাকলেও বাসায় এভাবে বার স্থাপন অবৈধ।’

র‌্যাবের পরিচালক বলেন, রাজের অফিসের কম্পিউটারে আপত্তিকর ভিডিও পাওয়া গেছে। মোবাইল ফোনেও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে এসব ভিডিও রেখেছেন এবং অন্যকে দিয়েছেন।

পিয়াসার সব অপকর্মের নেতা ছিলেন মিশু। গাড়ি ব্যবসার আড়ালে পিয়াসা, মৌসহ বেশ কয়েকজন মডেলকে দিয়ে বিত্তবানদের ফাঁদে ফেলতেন মিশু হাসান।

ডিবির সূত্র জানায়, এই চক্রের হাতে অনেকে হয়রানির শিকার হয়েছেন। তারা তদবির বাণিজ্যও করতেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com