শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৩ পূর্বাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

কূপে পড়ে আটকা মরক্কোর রায়ানের জন্য কাঁদছে বিশ্ব

তরফ নিউজ ডেস্ক: বাংলাদেশের ঢাকার শাহজাহানপুরে পরিত্যক্ত একটি গভীর নলকূপের পাইপে চার বছর বয়সী শিশু জিহাদের আটকা পড়ার খবর মনে আছে? মরক্কোর তামোরো শহরের একটি কূপে পড়ে আটকা পাঁচ বছর বয়সী রায়ান নামের শিশুটির ঘটনা জিহাদকে মনে করিয়ে দিল।

২০১৪ সালের ২৬ ডিসেম্বর ওই নলকূপের পাইপে পড়ার অন্তত ২৩ ঘণ্টা পর জিহাদকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তবে মৃত। আর মরক্কোর রায়ান গত মঙ্গলবারে খেলতে খেলতে পড়ে যায় কূপে। পাঁচ দিন ধরে তাকে উদ্ধারে চলছে তৎপরতা।

মরক্কোর স্থানীয় একটি কূপের মেরামত কাজ করছেন একজন শ্রমিক। মেরামত শ্রমিকের থেকেও বড় পরিচয় তিনি একজন বাবা। বাবার পাশেই ছোট্ট রায়ান খেলায় মত্ত ছিল হয়তোবা। বেড়িহীন সরু কূপে আদরের সন্তান এভাবে পড়ে যাবে হয়তো ভাবেননি। রায়ানের বাবার আক্ষেপ অন্তত সেটাই প্রমাণ করে।

‘আমি কাজ করতে করতে কিছু সময় হঠাৎ অমনোযোগী হয়ে পড়েছিলাম। সেই সময়টার পরেই তাকে (ছেলে) আর খুঁজে পাইনি। অবশেষে তাকে কূপের মধ্যে পাই, সেই থেকে আমি এখন পর্যন্ত চোখ বন্ধ করিনি’— রয়টার্সকে বলছিলেন রায়ানের বাবা।

নরম বালি আর পাথরের মাঝখানে ১০৪ফুট গভীর সরু কূপের ভেতর থেকে রায়ানকে জীবিত উদ্ধার করাটা রীতিমত চ্যালেঞ্জের। ভূমিধ্বসের আশঙ্কা তীব্র। এখানে উল্টো ঘটনাও ঘটতে পারে। বাবার সঙ্গে রায়ানের মাও ছেলেকে জীবিত উদ্ধার করার আশায় বুক চাপড়ে ক্ষণ গুনছেন।

শিশুটিকে উদ্ধার করতে গিয়ে উদ্ধারকারীদের ভুলেই ঘটতে পারে তার মৃত্যু। কিন্তু তারা কেউ হাল ছাড়ছেন না এখনো। তিন দিন ধরে নিরলস প্রেচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে উদ্ধারকারীদের পুরো টিম।

সবশেষ যখন তথ্য পাওয়া যায় তখন উদ্ধারকারীরা রায়ানের থেকে ১ দশমিক ৮ মিটার দূরে। মরক্কোর মানুষ তো বটেই, বিশ্বজুড়ে কোমল হৃদয় মানুষের চোখ এখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর টেলিভিশনের পর্দায়। #SaveRayan হ্যাশট্যাগে সয়লাভ এখন সোশাল মিডিয়া। সবার প্রার্থনার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন রায়ান।

মরক্কোর উত্তরাংশের শহর শেফচাওয়েন। দেশটির সিভিল প্রোটেকশন ডিরেক্টরের নেতৃত্বে পরিচালিত এই শহর থেকে আরও অন্তত ৬২ মাইল উত্তরের ছোট শহর তামোরো। সেখানকারই একটি গ্রামের কূপে পড়ে যায় রায়ান।

মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে চালানো হচ্ছে উদ্ধার অভিযান। সরু কূপের মধ্যে রায়ানের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য অক্সিজেন মাস্ক পাঠানো হয়েছে এর মধ্যেই। ক্যামেরার মাধ্যমে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে রায়ানের অস্তিত্ব। সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত তাকে জ্ঞান থাকা অবস্থায় দেখা গেছে।

শিশুটির জন্য হেলিকপ্টারের ব্যবস্থা করে রেখেছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। যেন তাকে উদ্ধার করার সাথে সাথেই হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায়। শহরজুড়ে এখন মানুষ দলবেঁধে উদ্ধারকারীদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছেন। রাস্তার পাশে শুধু সারি সারি যানবাহন রাখা। সবাই ব্যস্ত হয়ে রায়ানকে উদ্ধার করা দেখছে আর উদ্ধারকারীদের উৎসাহ দিয়ে যাচ্ছে। এখানে সব উৎকণ্ঠা ছাপিয়ে যেনো মানবতারই জয়।

রায়ানের বাবা গণমাধ্যমকে জানিয়েছিলেন, যারা আমাকে ভালোবাসে তারা সকলেই আমার ছেলেকে জীবিত উদ্ধারের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। দড়ির সাহায্যে খাবার এবং পানি সর্বক্ষণ সরবরাহ করা হচ্ছে রায়ানের কাছে। এই দৃশ্য রায়ানের বাবা-মা দুজনেই স্বচক্ষে দেখেছেন।

উদ্ধারে কেন এত ঝুঁকি?

এর পেছনে মূল কারণ দুইটি। প্রথমত কূপের গঠনটা নরম বালি এবং পাথরের সংমিশ্রণের। দ্বিতীয়ত কূপের গভীরতার নিচের দিকে ক্রমশ সরু। সম্পুর্ণ কূপটা মাত্র দেড় ফুট প্রস্থের এবং নিচের দিকে ২৮ ফুট যাবার পর ব্যাসার্ধ আরো সরু হয়ে গিয়েছে। কূপ খননে সামান্য ভূল করলেই ধ্বসে পরবে আশপাশের অধিকাংশ অঞ্চল। এতে করে রায়ানকে বাঁচানো সম্ভব হবে না কোনমতেই। স্থানীয় প্রকৌশলিরা উদ্ভাবনী উপায়ে সর্বোচ্চ পরিশ্রম করে যাচ্ছে শিশু প্রাণকে বাঁচাবার।

রায়ানের ঘটনাটি মনে করিয়ে দেয় ২০১৪ সালে শাহজাহানপুরের শিশু জিহাদের ঘটনা। ২৩ ঘন্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানের পর তাকে উদ্ধারে হাল ছেড়েছিল ফায়ার সার্ভিস। এর কিছু সময় পর নিজেদের উপস্থিত বুদ্ধি আর মেধা খাঁটিয়ে কিছু তরুণ ঠিকই উদ্ধার করতে পেরেছিল জিহাদকে। সেসময় দেশের সব মানুষের প্রার্থনায় ছিল জিহাদ। উদ্ধারের পর হাসপাতালে নেয়া হলে ডাক্তার জিহাদকে মৃত ঘোষণা করে।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com