বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক: জায়েদ খানের আবেদনের প্রেক্ষিতে তার প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্তটি স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। সোমবার বিচারপতি মামনুন রহমান ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।
এর আগে গত শনিবার এফডিসিতে এক বৈঠক শেষে জায়েদ খানের সাধারণ সম্পাদক পদের প্রার্থিতা বাতিলের ঘোষণা দেয় চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির এবারের নির্বাচনে দায়িত্বপ্রাপ্ত আপিল বোর্ড।
সেই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার সকাল ১০টায় জায়েদ খান হাইকোর্টে আবেদন করেন। হাইকোর্ট সেই আবেদন আমলে নিয়ে নায়কের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত স্থগিত করেছেন। পাশাপাশি নিপুণের সাধারণ সম্পাদকের পদও স্থগিত করা হয়েছে।
শুধু তাই নয়, জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিলের সিদ্ধান্ত কেন অবৈধ হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে নির্বাচনের আপিল বোর্ডকে সেই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এমন আদেশের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জায়েদ খান জানিয়েছেন, ‘হাইকোর্টের আদেশ আমার পক্ষে এসেছে। আমি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির ভোটারদের ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক। মহামান্য হাইকোর্টও আমার পক্ষে আদেশ দিলেন।’
ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় গত ৫ ফেব্রুয়ারি, শনিবার জায়েদ খানের প্রার্থিতা বাতিল করে চিত্রনায়িকা নিপুণকে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে বিজয়ী ঘোষণা করেছিল আপিল বোর্ড। রবিবার বিকালে সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন ও সাধারণ সম্পাদক নিপুণসহ নতুন কমিটির ১০ জন শপথও নিয়েছেন।
গত ২৮ জানুয়ারি এফডিসিতে অনুষ্ঠিত হয় শিল্পী সমিতির ২০২২-২৪ মেয়াদের নির্বাচন। পরদিন ভোররাতে ঘোষণা হয় ফলাফল। এবার গত দুইবারের সভাপতি মিশা সওদাগরকে হারিয়ে নতুন সভাপতি হয়েছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তবে জায়েদের কাছে ১৩ ভোটে হেরে যান সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ।
কিন্তু সেই পরাজয় মানেননি নায়িকা। ফলাফল ঘোষণার দিনই তিনি আপিল বোর্ডে পুনরায় ভোট গণনার জন্য আবেদন করেন। পাশাপাশি জায়েদের বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ তোলেন। ওইদিন পুনরায় ভোট গণনার পর আপিল বোর্ড জানিয়ে দেয়, জায়েদ খানই জিতেছেন।
কিন্তু হাল ছাড়েননি নিপুণ। তিনি পরবর্তীতে জায়েদ ও তার প্যানেলের আরেক জয়ী প্রার্থী চুন্নুর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ে। সেখান থেকে এক চিঠির মাধ্যমে আপিল বোর্ডকে নির্দেশনা দেওয়া হয় নিপুণের অভিযোগের ব্যাপারে তদন্ত করে সিদ্ধান্ত নিতে। আপিল বোর্ডের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত হবে বলেও চিঠিতে জানায় মন্ত্রণালয়।
এর পরই একটি বৈঠক ডাকেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান। শনিবার বিকাল চারটায় এফডিসিতে শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে হওয়ার কথা ছিল সেই বৈঠক। সেখানে বাদী নিপুণ এবং বিবাদী জায়েদ খান ও চুন্নুকে হাজির থাকতে বলা হয়। কিন্তু এদিন নিপুণ বৈঠকে হাজির হলেও এফডিসিতে পা রাখেননি দুই অভিযুক্ত।
এরপর একপক্ষকে নিয়ে বৈঠক করেই তাদের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় আপিল বোর্ড। সোহানুর রহমান সোহান এদিন সাংবাদিকদের জানান, জায়েদ খান ও চুন্নুর বিরুদ্ধে টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। তাই নির্বাচনী আচরণবিধি ভঙ্গের দায়ে তাদের প্রার্থিতা বাতিল করা হলো।
পাশাপাশি এদিন সাধারণ সম্পাদক পদে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিপুণ আক্তারকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। অন্যদিকে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে চুন্নুর জায়গায় তার প্যানেলের আরেক প্রার্থী নাদির খানকে বিজয়ী ঘোষণা করে আপিল বোর্ড।
সেদিন সোহানুর রহমান সোহান জানিয়েছিলেন, দুজন ভোটার লিখিতভাবে জানিয়েছেন, সাধারণ পদপ্রার্থী জায়েদ খান এবং কার্যনিবার্হ সদস্য পদপ্রার্থী চুন্নু ভোট দেওয়ার জন্য তাদের নগদ অর্থ দিয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন প্রার্থী মৌখিকভাবে তাদের অর্থ প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং ভিডিও ফুটেজে তা প্রমাণিত হয়েছে।
এই পরিচালক আরও জানান, বাংলাদেশ শিল্পী সমিতির নির্বাচন ২০২২-২৪ এর প্রণীত তফসিলের ১০ নম্বর ধারায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে যে, টাকা দিয়ে ভোট কেনার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই প্রার্থীর প্রার্থিতা নির্বাচন কমিশন বাতিল করতে পারবে। শনিবার বৈঠক শেষে সেই সিদ্ধান্তই নেয় আপিল বোর্ড।
তারই বিরুদ্ধে সোমবার হাইকোর্টের দারস্থ হন জায়েদ খান। তার ফলও পেলেন সঙ্গে সঙ্গে। এই অভিনেতা গত ২০১৭-১৯ এবং ২০১৯-২১ মেয়াদে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব সামলেছেন। এবার তিনি হ্যাটট্রিক জয় পেয়েছেন। এবার হাইকোর্টের আদেশের ব্যাপারে নিপুণরা কী পদক্ষেপ নেন তার জন্য অপেক্ষা।