শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন

জানাজা পড়িয়ে শিশু তাসফিয়াকে কবরে নামালেন গুলিবিদ্ধ বাবা

তরফ নিউজ ডেস্ক: নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত শিশু তাসফিয়া জান্নাতের জানাজা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তাসফিয়ার জানাজা পড়িয়েছেন সন্ত্রাসীদের গুলিতে চোখ হারানো তার বাবা মাওলানা আবু জাহের।

বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় হাজীপুর ইউনিয়নের পূর্ব হাজীপুর গ্রামের মালেকার বাপের দোকান সংলগ্ন এলাকার একটি মাঠে হাজার হাজার লোকের অংশগ্রহণে তাসফিয়ার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন, হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহ আজিম মির্জা, স্থানীয় ইউপি সদস্য জাকির হোসেন, নিহত শিশুর পরিবারের সদস্যরা, আত্মীয়-স্বজন ও এলাকার হাজার-হাজার জনতা। জানাজা শেষে কান্নায় ভেঙে পড়েন তাসফিয়ার বাবা মাওলানা আবু জাহের। এ সময় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও লোকজন তাকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করেন।

এর আগে বিকালে নিহতের লাশ নিয়ে ফেনী-নোয়াখালী আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ, সরুপোল এলাকায় বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন এলাকাবাসী। এসময় তারা আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাসফিয়া হত্যায় জড়িত মূল আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান। অন্যথায় কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি তারা।

এদিকে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তবে গ্রেপ্তারকৃত কেউই ওই ঘটনার মূল আসামি নয় বলে একাধিক সূত্র জানিয়েছে।

গত বুধবার বিকাল ৩টার দিকে তাসফিয়াকে নিয়ে বাড়ির পাশের মালেকার বাপের দোকান এলাকার বন্ধু স্টোরে যান আবু জাহের। ওই দোকানে গিয়ে তাসফিয়ার জন্য চকলেট, জুস ও চিপস নিয়ে দোকান থেকে বের হচ্ছিলেন। এসময় মহিন, রিমন, আকবর, নাঈমের নেতৃত্বে ১৫-২০ জনের একদল সন্ত্রাসী মামুনের দোকানে এসে তুই (আবু জাহের) ওইদিন বৈঠকে ছিলি বলে গালাগালি করেন। এক পর্যায়ে তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়লে পাশে থাকা গ্যাসের সিলিন্ডারে লেগে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। পরে তারা দোকান থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা পেছন থেকে তাদের লক্ষ্য করে প্রথমে ইট নিক্ষেপ করলে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয় তাসফিয়া। পরে তারা বাড়ি যাওয়ার সময় পেছন থেকে আরও দুই রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছুঁড়ে সন্ত্রাসীরা। এতে তাসফিয়া ও জাহের গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটে পড়েন। পরে গুলিবিদ্ধ তাসফিয়া ও আবু জাহেরকে উদ্ধার করে নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যান স্থানীয় লোকজন। পরে সেখানে অবস্থার অবনতি হলে ঢাকা নেওয়ার পথে কুমিল্লায় পৌঁছলে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা নানীর কোলে মারা যায় তাসফিয়া। মাটিকাটার জের ধরে এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও মাটি কাটা নিয়ে বিরোধের সঙ্গে কোনোভাবেই সংপৃক্ততা ছিলো না মাওলানা আবু জাহেরের। তবে মাওলানা আবু জাহের মাটিকাটা নিয়ে বৈঠকে ছিলেন এমন অভিযোগে সন্ত্রাসীরা তাকে টার্গেট করে। আর সেই টার্গেটের শিকার হয়ে প্রাণ হারায় তাসফিয়া।

এ ব্যাপারে বেগমগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মীর জাহেদুল হক রনি জানান, বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে কুমিল্লার দাউদকান্দি এলাকায় একটি যাত্রীবাহী বাস থেকে শিশু তাসফিয়া হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আরও তিনজনকে আটক করা হয়েছে। তবে তাৎক্ষণিক তিনি তাদের নাম পরিচয় জানাননি। এর আগে এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

ওই গুলিবর্ষণের ঘটনায় জড়িত সবাইকে গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে বলেও জানান ওসি।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com