মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩৫ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিলে দল থেকে তাদের বহিষ্কার করা হবে বলে জানা গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক নেতা এ কথা জানিয়েছেন।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেন প্রথম অবস্থায় নির্বাচিত দুই এমপির শপথ নেওয়া ও সংসদে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে থাকলেও, এখন তিনি তার অবস্থান পরিবর্তন করেছেন। গণফোরামের অধিকাংশ কেন্দ্রীয় নেতা সংসদে যোগ না দেওয়ার পক্ষ নেওয়ায় ড. কামাল হোসেনও এখন চাচ্ছেন না, ঐক্যফ্রন্ট ভেঙে দুজন সদস্য সংসদে যোগ দেন।
সূত্র জানায়, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যমে বক্তব্য দেন। এরপর সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা ড. কামাল হোসেনকে বিষয়টি টেলিফোনে জানানো হলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে দলের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরীকে বলেন, ‘ওদের বহিষ্কার করে দাও’। তবে সুব্রত চৌধুরী ড. কামালকে বলেন, এখনই এ ধরনের সিদ্ধান্ত না নিয়ে তাদের আরো বোঝাতে হবে। দলীয় সিদ্ধান্ত শেষ পর্যন্ত অমান্য করে তারা যদি সংসদে শপথ নিতে যায় তাহলেই তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
এদিকে রোববার টেলিফোনে দুই সংসদ সদস্য সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান জানান, তারা নব্বই দিনের মধ্যে শপথ নেবেন ও সংসদে যোগ দেবেন। কারণ, এলাকার জনগণ তাদের সংসদে যোগ দেওয়ার জন্য ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে।
জানতে চাইলে, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী সোমবার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় বলেন, আমি টেলিফোনে দলের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকে জানিয়েছি। তিনি আমাকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। তবে যেহেতু তিনি কালকে (২৯ জানুয়ারি) দেশে ফিরছেন সেহেতু আমি ব্যবস্থা নেইনি। তবে তারা (দুই সংসদ সদস্য) যদি দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে শপথ নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকেন তাহলে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
‘আমি গণফোরামের কেউ না’, সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের এমন বক্তব্যের বিষয়ে সুব্রত চৌধুরী বলেন, তিনি তো গণফোরামে যোগ দিয়ে দলীয় চিঠি নিয়ে নির্বাচন করেছেন। এখন যদি জাতীয় বেঈমান হতে চান তাহলে আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব।
বহিষ্কারের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সুলতান মোহম্মদ মনসুর বলেন, ‘আমি আমার সিদ্ধান্ত বলে দিয়েছি। কে কি বললো এতে আমার কিছু আসে যায় না।’
এ ব্যাপারে মোকাব্বির খান বলেন, আমি বলেছিলাম ব্যক্তিগতভাবে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে ইতিবাচক। যেটা আমার নেতা ড. কামাল হোসেনও এর আগে গণমাধ্যমে বলেছেন। তবে দলীয়ভাবে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমি যেহেতু গণফোরাম করি, সেহেতু ড. কামাল হোসেন যে সিদ্ধান্ত দেবেন আমি সেটাই মেনে নেব।
এদিকে সোমবার (২৮ জানুয়ারি) গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলেন, একটি অবাধ সুষ্ঠু গ্রহণযোগ্য অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন তথা জনগণের ভোটের অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠিত হয়েছিল। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ঐক্য অটুট আছে। গণফোরাম তথা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত কোনো কোনো সংসদ সদস্য সংসদে যোগ দান করছেন, এ ধরনের সংবাদ বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে; যা অসত্য ও ভিত্তিহীন। সংসদে যোগ দেওয়ার বিষয়ে গণফোরামে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
জানতে চাইলে, গণফোরামের তথ্য ও গণমাধ্যম সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক বলেন, দলের অধিকাংশ সদস্য চান না ভোট ডাকাতির নির্বাচনকে জায়েজ করার জন্য দলের কেউ সংসদে শপথ নেবে। যারা নির্বাচিত হয়েছেন তারা ব্যক্তিগত খায়েশ মেটানোর জন্য সংসদে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারছেন না। আমি মনে করি তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করা ঠিক হবে না। তাহলে দল তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতেই পারে। সভাপতি দেশে আসার পর দলীয় ফোরামেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।