বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২৯ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশে বিদেশি কোনো টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান লঙ্ঘন করে বাংলাদেশে ডাউনলিংককৃত বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে সোমবার (০১ এপ্রিল) পরিবেশক সংস্থা ন্যাশনওয়াইড মিডিয়া লিমিটেড এবং জাদু ভিশন লিমিটেডকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় তথ্য মন্ত্রণালয়। নোটিশ দেওয়ার পর রাত থেকে ভারতের জি টেলিভিশন নেটওয়ার্ক বাংলাদেশে প্রদর্শিত হচ্ছে না।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) সচিবালয়ে তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, সরকার কোনো চ্যানেল বন্ধ করেনি। সরকার প্রচলিত আইন প্রয়োগ করেছে। বাংলাদেশের ‘কেবল টেলিভিশন নেটওয়ার্ক পরিচালনা আইন, ২০০৬’ এর উপধারা-১৯(১৩) এর বিধান মতে বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করা যায় না। শুধু দেশীয় বিজ্ঞাপন নয়, কোনো ধরনের বিজ্ঞাপন দেখানো যায় না।
একই ধরনের আইন ভারত, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের অন্যান্য দেশে আছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সে সব দেশে এ আইন মানা হয়।
‘বাংলাদেশের যারা টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক তারা জানেন, আপনাদের টেলিভিশন চ্যানেল যখন ইউকে প্রদর্শন করা হয় তখন এখানে যে বিজ্ঞাপনগুলো দেখান, সেগুলো সেখানে দেখানো যায় না। সেখানে সেই দেশের বিজ্ঞাপন দেখানো যায়। ভারতে এবং অন্যান্য দেশে যখন টেলিভিশন চ্যানেল যখন প্রদর্শিত হয় তখন সেখানে বিদেশের বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয় না। কন্টিনেন্টাল ইউরোপেও একই রকম।’
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এ আইনটি মানা হচ্ছিলো না। আইনটি প্রয়োগ করা হয়নি। সেটি না করার কারণে বাংলাদেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলো যে বিজ্ঞাপন পেতো সেগুলো চলে গেছে ভারতে। পরিসংখ্যান দিয়ে মন্ত্রী জানান, ইউনিলিভার বাংলাদেশে পাঁচ বছর আগে বিজ্ঞাপনখাতে বাংলাদেশে ১৫ কোটি টাকা খরচ করতো। যেটি পাঁচ বছর পরে ২০ কোটি হওয়ার কথা ছিল, সেটি কমে পাঁচ কোটিতে গেছে। বাকি বিজ্ঞাপন ভারতীয় চ্যানেলের মাধ্যমে বাংলাদেশে প্রদর্শন করা হচ্ছিল, যেটি আইন বর্হিভূত। এরকম আরো অনেক কোম্পানি বছরে ৫০০ থেকে এক হাজার কোটি টাকার বিজ্ঞাপন অন্য দেশে চলে গেছে। টাকাটাও চলে যাচ্ছে।
‘বাংলাদেশের শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্য আমরা আইনটি প্রয়োগ করার উদ্যোগ গ্রহণ করছি। আইন প্রয়োগ করার আগে দু’মাস ধরে প্রচারণা করেছি। টেলিভিশন চ্যানেলের পক্ষ থেকে দাবি উপস্থাপন করা হয়েছে। আমরা তিন দফা নোটিশ দিয়েছি। এরপরও যখন দেখানো হচ্ছে, ১ তারিখে আমরা দেখতে পেলাম যে ডাউনলিংক করে বিদেশি চ্যানেল দেখায় সেখানে বিজ্ঞাপন প্রচার করা হচ্ছে। তখন আমরা আইন মোতাবেক নোটিশ দিয়েছি। সাতদিনের মধ্যে তাদেরকে কারণ দর্শাতে বলেছি, তারা নোটিশের জবাব দিক। জবাব দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সিদ্ধান্ত হবে। আমরা কোনো চ্যানেল বন্ধ করিনি।’
তথ্যমন্ত্রী সংস্থা দু’টিকে পরামর্শ দিয়ে বলেন, তারা সংশ্লিষ্ট চ্যানেলগুলোর কাছে ক্লিন ফিড চাইতে পারে অথবা তারা যন্ত্র স্থাপন করে ক্লিন করে প্রদর্শন করতে পারে।
চ্যানেল দু’টি (জি-বাংলা, জি-সিনেমা) দেখা যাচ্ছে না কেন- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, সেটা তারাই বলতে পারবে। আমরা বলেছি বিজ্ঞাপন ছাড়া যেন দেখানো হয় এবং বিজ্ঞাপনসহ দেখানো হচ্ছে, আইন লঙ্ঘন হচ্ছে।
সরকার এ বিষয়ে কতোটা কঠোর থাকবে- প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, আপনারা সঙ্গে থাকলে…, আমি সহযোগিতা চাই। আমরা নতুন কোনো আইন প্রয়োগ করছি না। দেশের স্বার্থে, দেশের গণমাধ্যম এবং টেলিভিশনের স্বার্থে, এবং টেলিভিশনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সাংবাদিক-কলাকুশলীর স্বার্থে প্রচলিত আইন প্রয়োগ করা শুরু করেছি।
‘আপনারাই বলেছেন, অনেক টেলিভিশন চ্যানেলে বেতন দেওয়া হচ্ছে না। তিন মাস ধরে বেতন দেওয়া হয়না। হঠাৎ করে ছাঁটাই করে দেওয়া হয়। তখন আমরা যখন টেলিভিশন মালিকদের সঙ্গে কথা বলেছি তারা বলেছে আমাদের পরিচালনা ব্যয় বেড়ে গেছে। বিজ্ঞাপন ছাড়া টেলিভিশনের কোনো আয় নেই। বিদেশি চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন অব্যাহত থাকলে আয় কমে যাবে। এক্ষেত্রে আপনারা সঙ্গে থাকলে, দেশের স্বার্থের সঙ্গে থাকলে আমরা এই আইন অবশ্যই প্রয়োগ করবো।’
বাংলাদেশে বিদেশি টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের কারণে দেশীয় টিভি চ্যানেলগুলো লোকসানে পড়ছে জানিয়ে ওইসব চ্যানেলে দেশি বিজ্ঞাপন বন্ধের দাবি করে আসছিল দেশের টিভি চ্যানেলের মালিকরা।