বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : চৈত্র মাস এখনো শেষ হয়নি। এখই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। এতে কৃষকদের মধ্যে দেথা দিয়েছে শঙ্কা। ইতোমধ্যে হবিগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার প্রায় শত একর জমির ধান তলিয়ে গেছে পানিতে।
২০১৭ সালে কৃষকরা সারা বছরের পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারেনি। আগাম বন্যায় বিস্তীর্ণ হাওরের আধা পাকা ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এখনও সেই ক্ষত কাটিয়ে উঠতে পারেনি হাওরের কৃষকরা। এর মধ্যে এ বছর দেখা দিয়েছে আরও বড় বিপত্তি। অতি আগাম বন্যা যেন কৃষককে ভাবিয়ে তুলেছে।
ইতোমধ্যে হাওর এলাকার নিচু জমিগুলো ডুবতে শুরু করেছে। কৃষকদের তথ্য মতে, বানিয়াচং, নবীগঞ্জ ও আজমিরীগঞ্জ উপজেলার শত একর জমির কাঁচা ও আধপাকা ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। আর কয়েক হাজার একর জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম।
এদিকে, প্রতিদিনই চলছে মেঘ-বৃষ্টি আর ঝড়ের খেলা।
জেলার বানিয়াচং, আজমিরীগঞ্জ ও নবীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন হাওরে পানি উঠতে শুরু করেছে। আবার কোথাও কোথাও ছোট ছোট বাঁধগুলোতে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে করে বিভিন্ন নদ-নদী থেকে ধানি জমিতে হাওরে পানি ঢুকছে। ইতোমধ্যে নিচু এলাকার জমিগুলোর কাঁচা ও আধা পাকা ধান তলিয়ে গেছে।
কৃষকদের তথ্যমতে, জেলার তিন উপজেলায় প্রায় শত একর জমির ধান তলিয়ে গেছে। এতে করে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন অনেক কৃষক। অল্প জমি চাষ করা কয়েকজন কৃষক ইতোমধ্যে পথে বসেছেন বলেও দাবি করছেন অনেকে।
কৃষকরা বলছেন, গত কয়েকদিন বৃষ্টিতে বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে। আর এসব নদ-নদীর পানি বিভিন্ন খাল বিলের মাধ্যমে হাওরে প্রবেশ করছে। এছাড়া বৃষ্টির পানিও হাওরে জমা হচ্ছে। ফলে হাওরের নিচু জমিগুলো ডুবতে চলেছে। তবে ইতোমধ্যে অনেকগুলো জমি ডুবেও গেছে।
তারা বলছেন, অনান্য বছর বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে এসে বন্যা দেখা দেয়। এ সময় জমির ধানগুলো অধিকাংশই পেকে যায়। ফলে পানিতে ডুবে যাওয়া কিছু ধান কেটে আনা সম্ভব হয়। কিন্তু এ বছর যে জমিগুলো পানিতে ডুবে গেছে সেগুলো সম্পূর্ণ কাঁচা। ফলে কাটার কোন উপায় নেই। এছাড়া কয়েক হাজার জমির ধান এখন পানিতে হাবুডুবু খাচ্ছে।
এদিকে, উঁচু জমির ধান নিয়েও দুশ্চিন্তায় দিন-রাত কাটছে কৃষকের। প্রতিদিনই জেলার বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি হচ্ছে। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলে কাঁচা ধানই পানিতে তলিয়ে যাবে বলে আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
এ ব্যাপারে বানিয়াচং উপজেলার হারুনী গ্রামের কৃষক সুদাংশু দাস বলেন, ‘আমার অনেক জমির ধান পানিতে তলিয়ে গেছে। এছাড়া আরও কয়েকটি জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম। গত দুই বছর চাষ করেও কোন ধান ঘরে তুলতে পারিনি। এ বছরও যদি একই অবস্থা হয় তাহলে আমাদের না খেয়ে মরা ছাড়া কিছু করার নাই।’
একই এলাকার কৃষক দ্বিজেন্দ্র দাস বলেন, ‘গত দুই বছরের ঋণই এখনও পরিশোধ করতে পারিনি। এ বছর আবার একই বিপত্তি। আমরা হাওরের মানুষদের মরা ছাড়া আর কোন উপায় না। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে। প্রতিদিন পানি বেড়ে চলেছে। উঁচু জমির ধানগুলো তুলতে পারব তারও কোন ভরসা পাচ্ছি না।’
আজমিরীগঞ্জ উপজেলা সদরের বাসিন্দা মোতাহের মিয়া বলেন, ‘অন্য বছর বৈশাখের মাঝামাঝি সময়ে বন্যার দেখা দেয়। এতেও সব ধান পানিতে তলিয়ে যায়। এ বছর চৈত্র মাসেই যেখানে অনেক ধান তলিয়ে গেছে সেখানে ধান ঘরে তুলার স্বপ্নতো স্বপ্নই থাকবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এখন চৈত্রের খরায় ঘর থেকে বের হওয়া দায় দুষ্কর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ বছর বৃষ্টির কারণে বের হওয়া যাচ্ছে না। কি করব বুঝে উঠতে পারছি না।’
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গতকালও আমরা বানিয়াচং উপজেলার বিভিন্ন হাওর পরিদর্শন করে এসেছি। আমাদের কাছে এমন কোন তথ্য নেই। তাছাড়া উপজেলা অফিসসহ মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও এমন কোন তথ্য পাওয়া যায়নি।’
তবে এ বক্তব্যের ঘণ্টাখানেক পর তিনি আবার মোবাইল ফোন করে জানান, সামান্য কিছু জমি তলিয়েছে। তবে সেগুলো একদম নিচু এলাকার জমি। তাছাড়া কোন বাঁধ ভাঙেনি। কয়েকটি নদী পারাপারের রাস্তা ভেঙেছে। এতে হাওরের ধানের কোন ক্ষতি হবে না।’