বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:১৮ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি ও মাদককে সমাজের একেকটি ক্ষত আখ্যা দিয়ে এসবের বিরুদ্ধে সকলকে একযোগে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতি সমাজের এক-একটি ক্ষত। কারণ এই সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের কারণেই কত নিরীহ মানুষকে আজকে জীবন দিতে হচ্ছে। এর থেকে আমাদের সমাজকে মুক্ত রাখতে হবে, দেশকে মুক্ত রাখতে হবে।
‘কাজেই আমি আমাদের অভিভাবক, পিতা-মাতা, শিক্ষক, গুরুজন, আত্মীয়-স্বজন, মসজিদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, ওলামা-মাশায়েখ, জনপ্রতিনিধিসহ সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার এবং জনমত সৃষ্টি ও সকলকে সচেতন করার অহবান জানাচ্ছি ,’যোগ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বিকেলে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে বঙ্গবন্ধু আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোর্টস চ্যাম্পিয়নশিপ ২০১৯ এর সমাপনী এবং পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, খেলাধুলা ও শরীর চর্চার মধ্যদিয়ে আমাদের ছেলে-মেয়েরা যেমন শারীরিক ও মানসিক শক্তি পাবে তেমনি মেধা বিকাশেরও সুযোগ পাবে। সে কারণেই আমরা এই উদ্যোগটা নিয়েছি। আর এরপরেই অদূর ভবিষ্যতে আমরা আন্তঃকলেজ প্রতিযোগিতাও শুরু করবো।
তিনি আশা প্রকাশ করেন এই আন্তঃস্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতাগুলো থেকে অসেক প্রতিভাবান খেলোয়াড় বের হয়ে আসবে যারা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে তাঁদের প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে দেশের জন্য একদিন বিশ্বকাপও জয় করে নিয়ে আসবে।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় মাসবাপী এই আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। ৬৫টি পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩০০০ জন ক্রীড়াবিদ এতে অংশগ্রহণ করে।
তাঁরা ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, টেবিল টেনিস, সাঁতার, বাস্কেটবল হ্যান্ডবল ও এ্যাথলেটিকস সহ মোট ১০টি ইভেন্টে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সোনার বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন এবং বলেছিলেন আমাদের আজকের তরুণ এবং যুব সমাজই হবে সোনার বাংলাদেশ গড়ার সোনার ছেলে-মেয়ে। কাজেই সেই সোনার ছেলে-মেয়েরা আমাদের দেশে গড়ে উঠবে এবং দেশকে আরো সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
তিনি এ সময় ’৭৫ এ জাতির পিতাকে হত্যার পর বাঙালি জাতির হৃত গৌরব পুনরায় ফিরে পাবার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, ভবিষ্য্যতেও বাংলাদেশের এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে চলবে।
খেলাধুলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খেলাধুলায় হার-জিত থাকবেই। এতে মন খারাপ করার কিছু নেই। আজ হারলে কাল জিতব এই কথা মনে রাখতে হবে। জাতির পিতা নিজেকে সেভাবেই গড়ে তুলেছিলেন, সবক্ষেত্রেই ‘হার না মানা’ একটি মনোভাব ছিল তার। যে কারণে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করেছিলাম।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমার দাদা ফুটবল খেলতেন। বাবাও ফুটবল খেলতেন। আমার দুই ভাই, শেখ কামাল ও শেখ জামাল তারা দুজনেই খেলাধুলা পছন্দ করত। কামালের স্ত্রী সুলতানা খেলোয়াড় হিসেবেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ব্লু’ ছিল। জামালের স্ত্রীও খেলাধুলায় ছিল। আমাদের পুরো পরিবারই খেলাধুলায় সম্পৃক্ত ছিলাম।’
তিনি এ সময় দেশের ক্রীড়াঙ্গনকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে শেখ কামালের আবাহনী ক্রীড়া চক্র প্রতিষ্ঠার উদ্যোগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।
খেলাধুলার উন্নয়নে তার সরকারের বিভিন্ন অবদানের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর অন্যান্য খাতের মতো খেলাধুলাতেও নজর দিই। তবে ওই মেয়াদে অনেক কাজ আমরা শুরু করেও শেষ করতে পারিনি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের পর আমরা আবার সেগুলো শেষ করেছি।’
এসময় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় প্রতিযোগিতার চ্যাম্পিয়ন ও রানার-আপ বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিনন্দন জানান প্রধানমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া বাকি দলগুলোকেও তিনি ধন্যবাদ জানান।
এরআগে প্রধানমন্ত্রী প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন।
তিনি এদিন গণবিশ্ববিদ্যালয় ও ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত ফুটবল ফাইনালের দ্বিতীয়ার্ধের খেলা গেলারিতে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন।
নির্ধারিত সময় ১-১ গোলে অমীমাংসীত থাকার পর টাই-ব্রেকারের সাডেন ডেথএ গণবিশ্ববিদ্যালয় ৫-৪ গোলে ফারইস্ট বিশ্ববিদ্যালয়কে পরাজিত করে শিরোপা জয় করে।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় স্পোটর্স চ্যাম্পিয়নশীপে ২০১৯ সালের চ্যাম্পিয়ন হবার গৌরব অর্জন করে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উজ্জ্বল জন্দ্র সুত্রধর প্রতিযোগিতার শ্রেষ্ঠ খেলোয়াড় (পুরুষ) এবং ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী তামান্না আক্তার শ্রেষ্ঠ খোলোয়াড় মহিলা হবার কৃতিত্ব অর্জন করেন।