মঙ্গলবার, ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : একই যাত্রায় পৃথক ফল ভোগ করতে হলো গত নির্বাচনে গণফোরাম থেকে সাংসদ নির্বাচিত হওয়া সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খানকে। দলীয় নির্দেশনা অমান্য করে শপথ নেওয়ার কারণে সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিস্কার করেছে গণফোরাম। আর একই ‘অপরাধ’ সত্ত্বেও পুরষ্কৃত হয়েছেন মোকাব্বির খান।
গণফোরামের নতুন কমিটিতে মোকাব্বির খানকে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। রোববার সংবাদ সম্মেলন করে গণফোরামের পূর্ণাঙ্গ কমিটি প্রকাশ করা হয়।
গত নির্বাচনে সিলেট-২ আসন থেকে উদীয়মান সূর্য প্রতীকে অংশ নিয়ে মোকাব্বির খান ও মৌলভীবাজার-২ আসন থেকে ধানের শীর্ষ প্রতীক নিয়ে সুলতান মনসুর বিজয়ী হন।
নানা জল্পনা কল্পনার পর দল আর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আপত্তি উপেক্ষা করেই ৭ মার্চ সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেন সুলতান মনসুর। আর কয়েকদফা মত বদল করে ২ এপ্রিল শপথ নেন মোকাব্বির খান। দলীয় সিদ্ধান্তেই শপথ নিয়েছেন বলে সেসময় মোকাব্বির খান দাবি করলেও তাকে ‘প্রতারক’ আখ্যা দেন দলটির একাধিক নেতা।
শপথ নেওয়ায় সুলতান মনসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে গণফোরাম। আর মোকাব্বির খঅনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।
দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাওয়া মোকাব্বির খানের জবাবে গণফোরাম সন্তুষ্ট বলে রোববারের সংবাদ সম্মেলনে দলটির নেতারা জানিয়েছেন।
তবে তার আগে সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে বহিষ্কার হওয়া সুলতান মো. মনসুর আহমেদের দলে ফেরার বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি বলেও জানান তাঁরা।
এ বিষয়ে প্রশ্নের জবাবে গণফোরামের নতুন সাধারণ সম্পাদক রেজা কিবরিয়া বলেছেন, “উনি (সুলতান মনসুর) যদি আবার দলে ফেরত আসতে চান, উনি আবেদন করতে পারেন, কথা বলতে পারেন- এটা উনার ব্যাপার।”
একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিএনপি যখন অন্যান্য দল নিয়ে জোট গঠন করছিল, সে সময় কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরামে যোগ দিয়েছিলেন সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর, অধ্যাপক আবু সাইয়িদ ও রেজা কিবরিয়া।
তারা তিনজনই গণফোরাম থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ও শেখ হাসিনার ১৯৯৬-২০০১ সালের সরকারের অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা ও অধ্যাপক সাইয়িদ ভোটে হারলেও উতরে যান সুলতান মনসুর।
গত ৩০ ডিসেম্বরের ওই নির্বাচনে ভরাডুবির পর বিএনপি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনের ফল প্রত্যাখ্যানের পাশাপাশি সংসদে না যাওয়ার ঘোষণা দেয়।
মনসুর-মোকাব্বিরের শপথের পর এই জোটে অসন্তোষ দেখা দিলেও গত ২৯ এপ্রিল বিএনপির চারজন সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে সুর বদল হতে শুরু করে। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সেদিন বলেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই দলের চার নেতা শপথ নিয়েছেন।
আর রোববার এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, সংসদে না যাওয়ার তাদের ওই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না বলেই এখন তার মনে হচ্ছে।
তার এই বক্তব্যের কিছুক্ষণ পর গণফোরামের নতুন কমিটি জানাতে জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে আসেন কামাল হোসেনসহ দলটির শীর্ষ নেতারা।
সেখানে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে কেন্দ্রীয় কমিটিতে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাওয়া রেজা কিবরিয়া বলেন, “আমাদের দলের দুই জনের ব্যাপারে যদি জানতে চান প্রথম জনের (সুলতান মো. মনুসর) শেষ। প্রসেস ইজ কমপ্লিট। উনাকে আগের কমিটি চিঠি দিয়েছে, বহিষ্কার করেছে।
“আরেকজনের ব্যাপারে। এই কমিটিতে প্রেসিডিয়াম লিস্টে উনার (মোকাব্বির খান) নাম আছে। এরপরও উনার বিষয়টি আমরা কীভাবে বুঝাব আমি জানি না। লিস্টে তার নাম ঘোষণার পরও কেন ‘কনফিউজিং’ আমি বুঝতে পারছি না।”
মোকাব্বির খানকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, “আমরা (গণফোরাম) উনার উত্তরে স্যাটিসফাইড। সো…।”
দলের নিষেধ সত্ত্বেও শপথ নেওয়ার বিষয়ে সেসময় সুলতান মনসুর বলেছিলেন, আমি বিএনপি বা গণফোরামের কেউ নই। আমি বঙ্গবন্ধুর অনুসারী।