মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২০ পূর্বাহ্ন
রায়হান উদ্দিন সুমন, বানিয়াচং (হবিগঞ্জ) থেকে: বানিয়াচং সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ (গোল্ডেন) পেয়েছিলেন নাহিদা আক্তার। কিন্তু এমন ভালো ফল অর্জন করলেও তার মুখে হাসি ফোটেনি। দরিদ্র পরিবারের মেয়ে হওয়ায় কলেজে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া নিয়েও দুশ্চিন্তায় পড়েন তিনিসহ তার পবিারর। কারণ দরিদ্র পরিবারের পক্ষে তার এ ব্যয়ভার বহন করা কোনো কিছুতেই সম্ভব নয়।
অবশেষে মেধাবী নাহিদা মুখে হাসি ফোটাতে পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ও বানিয়াচং শরীফ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের প্রধান পৃষ্টপোষক ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। তিনি বানিয়াচং আজমিরীগঞ্জ আসনের (হবিগঞ্জ ২) নির্বাচনী এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম এডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ’র পুত্র। তার বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত এই পাঠাগারের মাধ্যমে মেধাবী নাহিদা আক্তারের আগামী দুই বছরের লেখাপড়ার খরচ বহন করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছেন। নাহিদাকে নিয়ে গত বুধবার এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার পরপরই প্রতিবেদকের সাথে যোগাযোগ করেন তিনি। তার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত মরহুম শহীদ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের মাধ্যমে নাহিদার লেখাপড়ার খরচ চালানো হবে বলে আওয়ামী লীগের এই নেতা নিশ্চিত করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার (৯মে) বিকাল বেলা শরীফ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের সদস্যরা নাহিদার বাড়িতে গিয়ে তারা পরিবাবারের সাথে কথা বলে বিষয়টি তাদেরকে জানিয়ে এসেছেন।
আওয়ামী লীগ নেতা ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল জানান – ‘আমার বাবা বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ আসনের সংসদ সদস্য ছিলেন। ১৯৯৬ সালে তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা অসহায় হয়ে পড়েছিলাম তখন। চিন্তায় পড়েছিলাম আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে। আমার বয়স তখন ১২ কি ১৩ ছিল। তৎকালীন ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা আমাদের খাওয়া-দাওয়াসহ লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে নেয়ার ঘোষণা করেছিলেন। তখন আমার মা মাঝেমধ্যে ঢাকায় গিয়ে এসব নিয়ে আসতেন। সুতরাং আমি অসহায়ের কষ্ট বুঝি।’আমি চাই কোনো মেধাবী যেন টাকার অভাবে তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে না যায়।
তিনি আরো জানান- মেধাবী নাহিদার বিষয়টি ‘আমি অনলাইনসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় দেখতে পাই। তখন থেকেই মনে মনে চিন্তা করলাম এই মেয়েটিকে নিয়ে কিছু করার। তার পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায় সেই কথা ভাবতে থাকলাম। সেই থেকে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম পাঠাগারের মাধ্যমে তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করার। আগামী দুই বছরের যাবতীয় খরচ আমার পিতার নামে প্রতিষ্ঠিত শরীফ উদ্দিন আহমেদ পাঠাগারের পক্ষ থেকে বহন করা হবে বলেও তিনি জানান। কয়েকদিনের মধ্যেই উপস্থিত হয়ে আর্থিক অনুদান তুলে দেবেন বলে জানিয়েছেন ময়েজ উদ্দিন শরীফ রুয়েল। অন্যদিকে নাহিদাকে নিয়ে ্েই প্রতিবেদনটি করার জন্য স্থানীয় সাংবাদিককেও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এই আওয়ামী লীগ নেতা।
উল্লেখ্য,গত বুধবার “অর্থের অভাবে কি থেমে যাবে নাহিদার স্বপ্ন”এই শিরোনামে বেশকয়েকটি স্থানীয় ও অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করা হয়। পরের জাতীয় দৈনিক সমকাল পত্রিকায় মা-মেয়ের ছবিসহ একই শিরোনামে সংবাদটি ছাপা হয়। সংবাদটি দেখে দেশে-বিদেশে থাকা অসংখ্য শুভাকাঙ্খি তথা হৃদয়বান ব্যক্তিরা নাহিদার পাশে দাঁড়ানোর আগ্রহ দেখিয়েছেন। সংবাটি প্রকাশ হওয়ার পর প্রচুর সাড়া পাওয়া যায়। অনেকেই এই প্রতিবেদকের সাথে মোবাইল ফোন ও ফেসবুকের মাধ্যমে নাহিদার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন। তার পাশে থাকতেও আগ্রহ ব্যক্ত করেছিলেন কেউ কেউ।
এই নিয়ে কথা হয় মেধাবী নাহিদার সাথে। তিনি বলেন -আমি কি কলেজে ভর্তি হতে পারবো কিনা সেই চিন্তাই ঘুরপাক খাচ্ছিলো মাথায়। আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। ভাবছি আমার বুঝি আর পড়ালেখা করা হবেনা। কিন্তু এখন সেই খবরটি জানতে পেরে নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু হলো।