মঙ্গলবার, ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০২:২৫ পূর্বাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক : রুদ্ধশ্বাস ফাইনাল ম্যাচে ধোনির চেন্নাইকে হারিয়ে আরো একবার আইপিএলের শিরোপা জিতলো রোহিতের মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। ২০১৩, ২০১৫, ২০১৭ এর পর আবার। এ নিয়ে মোট চতুর্থবার এই ট্রফি জিতল মুম্বাই।
এদিন টস জিতে মুম্বই প্রথমে ব্যাট করে ১৪৯ রান তোলে চেন্নাই। ম্যাচের শেষ বলে মাত্র ১ রানে জয় ছিনিয়ে আনল রোহিত শর্মার দল।
ফাইনালের রেকর্ড এবং এই টুর্নামেন্টের ইতিহাস, সব কিছুতেই ধোনির থেকে এগিয়ে ছিলেন রোহিত শর্মা। সেই রোহিত শর্মা এবং কুইন্টন ডে কক মিলে যখন শুরুর ওভারগুলোতে মারমার কাটকাট শুরু করলেন তখন ধরেই নেওয়া হচ্ছিল, আরও একবার সহজেই চেন্নাইয়ের ওপরে দাপট দেখাবে মুম্বাই।
দুই পেসার দীপক চাহর এবং শার্দূল ঠাকুরকে একের পর এক ছক্কা মেরে চলেছে দুই ওপেনার। রান রেট উঠে গিয়েছে দশের ওপরে। এই অবস্থাতে মোক্ষম একটা চাল চালেন ধোনি। দুই পেসারের দিক অদলবদল করে দেন। আর তাতেই সাফল্য।
৫০ পেরোনোর আগেই দুই ওপেনারকে হারিয়ে হঠাৎ করে চাপে পড়ে মুম্বাই। সেই চাপ থেকে কখনই আর সে ভাবে বেরোতে পারে তারা। ষষ্ঠ থেকে ১৬তম ওভারের মধ্যে মুম্বাইয়ের ওপরে ক্রমশ চাপ বাড়াতে থাকেন ধোনি। চাহর-শার্দূলের ওপরে আসরে নামেন হরভজন এবং ইমরান তাহির। এ দিন হরভজন খুব একটা প্রভাব সৃষ্টি করতে না পারলেও তাহির কিন্তু নিজের ফর্মেই ছিলেন। শুধু উইকেট তোলা নয়, সেই বিখ্যাত নাচেও কোনো অভাব দেখাচ্ছিলেন না তিনি।
এই অবস্থায় মুম্বাইয়ের ওপরে চাপ কমানোর জন্য আসরে নামতে হয় হার্দিক এবং কায়রন পোলার্ডকে। হার্দিক গোটা দুয়েক ছয় মেরে যখন ক্রমশ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছেন, তখনই তাকে বিদায় করেন চাহাল। কিন্তু তখনও ক্রিজে ছিলেন পোলার্ড। তাকে আটকে রাখার প্রচুর চেষ্টা করছিলেন ধোনি। চাপ এতটাই বেড়ে যায় যে শেষ ওভারে ডোয়েন ব্রাভোর প্রথম তিনটে বলে কোনো রানও করতে পারেননি তিনি। এমন কি মেজাজ হারিয়ে অখেলাওয়াড়সুলভ আচরণের জন্য আম্পায়াররা সতর্কও করেন তাকে। কিন্তু শেষমেশ এই পোলার্ডের জন্যই দেড়শোর দোরগোড়ায় গিয়ে থামে নীল জার্সিধারীরা।
এরপর অনেকটা মুম্বাইয়ের ইনিংসের মতোই এগোতে থাকল চেন্নাইয়ের ব্যাটিং। শুরুর দিকে যথারীতি ঝড় তুললেন দুই ওপেনার। তবে বেশি বিধ্বংসী ছিলেন ফাফ দু’প্লেসি। কিন্তু চতুর্থ ওভারে দু’প্লেসি আউট হতেই হঠাৎ করে ব্রেক লেগে গেল চেন্নাইয়ের ইনিংসে। একদিকে ওয়াটসন ধরে রেখেছিলেন, কিন্তু অন্যদিকে ক্রমশ উইকেট শুরু করল।
এই টুর্নামেন্টে চেন্নাইয়ের হয়ে সব থেকে বেশি রান করেছেন ধোনি। তাই ম্যাচ ক্রমশ শক্ত হয়ে আসলেও, ধোনিতে ভরসা ছিল চেন্নাইয়ের। কিন্তু মোক্ষম দিনে তিনি ব্যর্থ। চূড়ান্ত চাপ সহ্য করতে না পেড়ে রান আউট হয়ে যান তিনি। এর পর দায়িত্ব পুরোপুরি চলে আসে ওয়াটসন এবং ব্রাভোর ওপর।
এখানেই ওয়াটসনের থেকে গত বছরের আইপিএল ফাইনালের পারফরম্যান্সের পুনরাবৃত্তি চেয়েছিলেন চেন্নাই-ভক্তরা। সে দিন হায়দরাবাদের বিরুদ্ধে অসাধারণ শতরান করে দলকে জিতিয়েছিলেন ওয়াটসন। এ দিন অর্ধশতরান করে ফেললেও সেই আগ্রাসণ কিছুতেই দেখাতে পারছিলেন না তিনি। ফলে শেষ তিন ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার হয়ে পড়ে ৩৮। এই অবস্থাতেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন ওয়াটসন। ক্রুনাল পাণ্ডের ওভারে পর পর তিনটে ছয় মেরে চেন্নাইয়ের হিসেব অনেকটা সহজ করে দিলেন ওয়াটসন। শেষ দুই ওভারে চেন্নাইয়ের দরকার ছিল ১৮।
কিন্তু মুম্বাইও অত সহজে হাল ছাড়ার পাত্র ছিল না। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে ব্রাভোকে আউট করে ফের একবার ম্যাচ জমিয়ে দেন বুমরাহ। পুরো ওভারটা ভালোই বল করছিলেন বুমরাহ কিন্তু মোক্ষম সময়ে গুরুত্বপূর্ণ ক্যাচ ফেলে দেন উইকেট কিপার ডে কক। বল চলে যায় বাউন্ডারির বাইরে। এর ফলে শেষ ওভারে চেন্নাই এবং জয়ের মধ্যে তফাৎ কমে দাঁড়ায় মাত্র ৯ রানে।
বল হাতে মালিঙ্গা এবং ব্যাট হাতে তখনও অপরাজিত ওয়াটসন। পরপর ইয়র্কারে চাপ বাড়াতে শুরু করেন মালিঙ্গা। ওভারের চতুর্থ বলে চেন্নাই শিবিরে ধাক্কা দিয়ে রান আউট হয়ে যান ওয়াটসন। তখন চেন্নাইয়ের দরকার ২ বলে চার। পরের বলে সেই হিসেব গিয়ে দাঁড়ায় ১ বলে ২। ক্রিজে শার্দূল ঠাকুর। শেষ বলে শার্দূলকে এলবিডব্লিউ করে দেন মালিঙ্গা। এতেই চতুর্থবারের জন্য চাম্পিয়ন হয়ে গেল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স।