নিপীড়কের মৃত্যুর পরেও ওই ঘটনা প্রকাশের পেছনের কারণ ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, আর কোনো নারী যাতে এই ধরনের পরিস্থিতিতে না পড়েন এবং অল্প বয়সীরা এ ধরনের ঘটনার শিকার হলে তারা যেন মুখে খোলেন সেই পরিবেশ তৈরির লক্ষ্যেই তিনি এটা করেছেন।
প্রতিনিয়ত নিপীড়নের শিকার নারীদের পাশে দাঁড়াতে চান জানিয়ে লাইজু বলেন, “যখন আমি এ কাজটি করেছিলাম তখন আমি কোনো কিছু ভেবে-চিন্তে করিনি। এমনকি আমার যে পার্টনার তার মতামত না নিয়েই বলেছি। আমি ভেবেছি ৩১ বছর পর আমি যথেষ্ট পরিণত, কেউ আমার পাশে না থাকলেও আমি একাই সোচ্চার থাকব। এই কষ্ট বুকে নিয়ে মরে গেলে সেটা অন্যায় হবে।
“আমি যখন ৫০ বছরের নারী এ কথাটা বলব তখন আরও ছোট মেয়েরাও তাদের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার কথা বলবে।”
লাইজুসহ বাংলাদেশের যে নারীরা মুখ খুলেছেন তাদের ‘সাহসী’ আখ্যা দিয়ে নিপীড়নের শিকার সব নারীকে এভাবে মুখ খুলে সমাজে নিপীড়কদের চেহারা উন্মোচনের আহ্বান জানান মানববন্ধনের বক্তারা।
জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে বিভিন্ন পেশার নারীদের উদ্যোগে ‘নিপীড়িতদের পাশে দাঁড়াই, নিপীড়কদের ঘৃণা করি; আমরা # মি টু আন্দোলনের পক্ষে, আমরা যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে’ শিরোনামে এই মানববন্ধন হয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতি আরা নাসরিন বলেন, নারী অবশ্যই অনেক বেশি নির্যাতনের শিকার হয়, কিন্তু একইসঙ্গে পুরুষেরা নির্যাতনের শিকার হয়।
“নারীর ওপর যে নির্যাতন সেটা অনেকটা হিমবাহের মতো। হিমবাহ সমুদ্রের নিচে তার অনেকটা লুকিয়ে রাখে, অল্প একটু ওপরে দেখা যায়। সেই হিমবাহ বিশাল বিশাল জাহাজকে ডুবিয়ে দিতে পারে। একই অবস্থা নির্যাতনের। আমাদের সমাজটি একটি ভয়াবহ নির্যাতনমূলক সমাজ।”
নিপীড়নের বিরুদ্ধে অল্প কিছু নারী ও পুরুষ # মি টু আন্দোলন করলেও এই নির্যাতনের বিষয়টি সবার জানা আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ঘরের মধ্যে আমাদের নিজেদের লোক, রাস্তাঘাটে যে কেউ দুর্বলকে নির্যাতন করে। # মি টু কেবল একটা কথা শুরু করেছে। যে জিনিসগুলো আমরা জানতাম কিন্তু চুপ করে থাকতাম, সেই জিনিসগুলোকে স্পষ্ট করছে, সামনে আনছে।”
এ আন্দোলনের সুবিধার কথা তুলে ধরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, “এখন সুবিধা হল যে, চট করে কোনো নিপীড়ন করতে এখন সামান্য হলেও কেউ ভয় পাবে। এটা যতই জোরালো হবে মেয়েরা জানবে, ছেলেরা জানবে যে, নির্যাতন বলে দেওয়া যায়, তখন যারা এই নির্যাতন করে তারা ভয় পেতে শুরু করবে।”
মানবাধিকারকর্মী খুশি কবির বলেন, “যে নারীরা মুখ খুলেছেন, তারা শুধু মুখ খোলেনি সমাজে নিপীড়কদের চেহারা, তাদের চরিত্র ও পরিচয় উন্মুক্ত করেছে। এসব নারীদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।”
তিনি বলেন, “# মি টু আন্দোলনে দেখেছি, কিছু কিছু ব্যক্তি আমাদের পরিচিত। তারা প্রগতিশীল লেবাসধারী হয়ে তারা মনে করছে, একটা অসহায় ও দুর্বল মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারবে। এই মেয়েরা আজকে মুখ খুলছে। মি টু আন্দোলনে শুধু নয়জনই না, আস্তে আস্তে সকল নারীরা মুখ খুলবে এবং এদের সবার চেহারা উন্মোচন করবে।
“যাকে নিপীড়ন করা হয়েছে তাকে আমরা দোষারোপ করব না। নিপীড়কদের আসল চেহারা আমরা উন্মোচন করতে চাই। এটা হল মি টু’র আসল উদ্দেশ্য।”
বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক মিনু বলেন, “আমরা স্যালুট জানাই মি টু আন্দোলনের অংশ হিসেবে যারা মুখ খুলেছেন। কারণ তারা সাহস করেছেন, সেই সাহস আমি পাচ্ছি না। তিন বছর থেকে এই পর্যন্ত আমরা নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হয়েছি। নির্যাতনের শিকার হয়নি, এমন মেয়ে কেউ নেই।”
নারীর ওপর নির্যাতন, হয়রানি, লাঞ্ছনা বন্ধের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, “যারা মুখ খুলেছে তারা সাহসী, আগামীতে তাদের পথ ধরে আরও অনেকে এগিয়ে আসবে। যাদের বিরুদ্ধে নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে তারা যেসব অফিসে কর্মকর্ত আছেন তাদের কর্তৃপক্ষকে বলেছি যেন ব্যবস্থা নেওয়া হয়।”
মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে সাংবাদিক শাহনাজ শারমিন, শারমিন রিনভী, উদিসা ইসলাম, শুকুর আলী শুভ, শেখ মামুন, নাদিয়া শারমিনসহ বিভিন্ন পেশার নারী-পুরুষ বক্তব্য দেন।
সূত্র : বিডিনিউজ২৪