বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:০৬ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেনীর সোনাগাজীতে মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে নিপীড়নের পর পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ দৌলাসহ ১৬ জনের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করে মামলার চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।
বুধবার (২৯ মে) বেলা ২টার দিকে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসেনের আদালতে চার্জশিটটি জমা দেয়া হয়। মামলার তদন্তকারী কর্তাকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম চার্জশিটটি জমা দেন।
ঘটনার এক মাস ২১ দিনের মাথায় মামলাটির চার্জশিট দেয়া হলো। চার্জশিটে ১৬ আসামির সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই।
আজ নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিট জমা দেয়ার বিষয়টি গতকালই জানিয়েছিল পিবিআই। রাজধানীর ধানমন্তেডি পিবিআই সদর দফতরে সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার জানান, ৮০৮পৃষ্ঠার অভিযোগপত্রে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ সিরাজকে হুকুমের আসামি করা হয়েছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের সময় জেলে থাকলেও তার নির্দেশনায়ই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে।
বাকি আসামিরা হলেন- সোনাগাজী উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি রুহুল আমিন (৫৫), সোনাগাজী পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম (৫০), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান মোহাম্মদ জোবায়ের (২১), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আবদুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মণি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আবদুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মদ শমীম (২০) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
পিবিআই প্রধান জানান, নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার মিশনে সরাসরি অংশ নেন পাঁচজন। এছাড়া এ হত্যার ঘটনায় বিভিন্নভাবে যারা জড়িত, তাদের আসামি করা হয়েছে। আমরা আশাবাদী আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে। অভিযোগপত্রেও সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, চার্জশিটে সিরাজ উদ দৌলাকে আসামি করা হচ্ছে নুসরাতকে হত্যার ‘হুকুমদাতা’ হিসেবে। তার নাম থাকছে আসামির তালিকার ১ নম্বরে।
এ ছাড়া ওই মাদরাসার গর্ভনিং বডির সহ-সভাপতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল আমিন এবং সোনাগাজীর পৌর কাউন্সিলর ও আওয়ামী লীগ নেতা মাকসুদ আলম ওই হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনা এবং তা বাস্তবায়নে অর্থসহ বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করেছেন বলে উল্লেখ থাকছে অভিযোগপত্রে।
এতে বলা হয়েছে, তদন্তে ১৬ আসামির বিরুদ্ধে নুসরাত জাহান রাফিকে অগ্নিদগ্ধ করে হত্যা করা এবং হত্যার পরিকল্পনায় অংশগ্রহণ ও হত্যাকাণ্ডে সহযোগিতার অপরাধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন-২০০০ (সংশোধিত ২০০৩)-এর ৪ (১) ও ৩০ ধারায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে।
বনজ কুমার মজুমদার জানান, ২৬ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন হয়রানি করেন। রাফি এর প্রতিবাদ করেন এবং এ বিষয়ে রাফির মা শিরীন আক্তার মামলা করলে পুলিশ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠায়। ওই মামলা প্রত্যাহার করার জন্য চাপ দেয়া হচ্ছিল নুসরাত ও তার পরিবারকে। কিন্তু মামলা তুলে না নেয়ায় গত ৬ এপ্রিল মাদরাসার একটি ভবনের ছাদে ডেকে নিয়ে রাফির গায়ে আগুন দেয় বোরখা পরা কয়েকজন। আগুনে শরীরের ৮৫ শতাংশ পুড়ে যাওয়া। নুসরাত ১০ এপ্রিল রাতে হাসপাতালে মারা যান।
তিনি বলেন, নুসরাতের গায়ে আগুন দেয়ার পর ৮ এপ্রিল তার ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান অধ্যক্ষ সিরাজকে প্রধান আসামি করে আটজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরও চার-পাঁচজনকে আসামি করে একটি মামলা করেন। নুসরাতের মৃত্যুর পর তা হত্যা মামলায় রূপান্তরিত হয়। পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন আর দেশজুড়ে বিক্ষোভ-প্রতিবাদের মধ্যে মামলার তদন্তভার থানা পুলিশ থেকে দেয়া হয় পিবিআইয়ের হাতে। মামলা পিবিআইয়ে হস্তান্তরের পর এখন পর্যন্ত মামলার এজাহারভুক্ত আট আসামিসহ ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদের মধ্যে হত্যার দায় স্বীকার করে ১২ জন আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে ওই মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে আটক করে পুলিশ। পরে ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা তার শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। ১০ এপ্রিল রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।