বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৩৭ অপরাহ্ন

সংবাদ শিরোনাম :

কে হচ্ছেন সিলেট চেম্বারের নতুন প্রশাসক?

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফের প্রশাসক বসতে যাচ্ছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিতে। গত ১১ বছরে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো প্রশাসক বসছে অর্ধশত বছরের প্রাচীন এই ব্যবসায়ী সংগঠনে। ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব, চেম্বারের নেতৃত্বদানকারীদের অনিয়ম এবং যে কোনো উপায়ে নির্বাচিত হওয়ার মানসিকতার কারণে সিলেট চেম্বারে বারবার প্রশাসক নিয়োগ দিতে হচ্ছে বলে মন্তব্য ব্যবসায়ীদের।

শুক্রবার (৩১ মে) শেষ হচ্ছে সিলেট চেম্বারের বর্তমান পরিচালনা পরিষদের মেয়াদকাল। ফলে গতকাল বৃহস্পতিবারই শেষ কর্মদিবস ছিলো এই কমিটির। নিজেদের মেয়াদকালে নির্বাচন আয়োজন করতে পারেনি বর্তমান কমিটি। আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে নির্বাচন কার্যক্রমও বন্ধ রয়েছে। ফলে শনিবার থেকেই মূলত অভিভাবকহীন হয়ে পড়ছে সিলেট চেম্বার অব কমার্স।

এ ব্যাপারে সিলেট চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ বলেন, আজ (বৃহস্পতিবার) আমরা শেষ অফিস করি। আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে উদ্যোগ নিয়েও মেয়াদকালে নির্বাচন করতে পারিনি। এখন বাণিজ্যমন্ত্রণালয় পরবর্তী করণীয় নির্ধারণ করবে। প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া চলছে বলে শুনেছি।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সিলেট চেম্বারে প্রশাসক নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বাণিজ্য সচিব দেশের বাইরে রয়েছেন। তিনি দেশে আসলেই প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হবে। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে।

এরআগে ব্যবসায়ীদের দ্বন্দের কারণে ২০০৯ সালে সিলেট চেম্বারের প্রশাসক হন নাগরিক সমাজের নেতা ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।  ২০১১ সালে প্রশাসক হন সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) ড. আবুল হাসান। ২০১৫ সালে নির্বাচন নিয়ে ফের বিরোধে জড়িয়ে পড়েন চেম্বার সদস্যরা। বিরোধ চরমে উঠলে ওই বছর সিলেটের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক এ.জেড এম নুরুল হককে প্রশাসক নিয়োগ করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানা যায়, এবারও নির্বাচন নিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন চেম্বার সদস্যরা। বর্তমান পরিচলনা পরিষদের বিরুদ্ধে ভ’য়া ভোটার অন্তর্ভূক্তির উঠে। ব্যবসায়ীদের দ্বন্দ্ব গড়িয়েছে আদালত পর্যন্ত। আদালত চেম্বারের বর্তমান কমিটির কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশনা দিয়েছেন।

সিলেট চেম্বারের সাথে সংশ্লিস্ট একাধিক ব্যবসায়ী জানান, সিলেট চেম্বারের নেতৃত্ব দখলে ব্যবসায়ীদের দুটি গ্রুপ দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় রয়েছে। এদের দ্বন্দের কারণে আগেও একাধিকবার চেম্বারে অচলাবস্থা দেখা দেয়। নিয়োগ করা হয় প্রশাসক। এমনকি এই দ্বন্দ্বের কারণে সিলেট চেম্বারের থেকে বেরিয়ে ব্যবসায়ীদের একটি অংশ ২০১৩ সালে গড়ে তুলেন সিলেট মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি।

জানা যায়, গত ৭ এপ্রিল সিলেটের ব্যবসায়ীদের এ শীর্ষ সংগঠনের নির্বাচন হওয়ার কথা ছিলো। সে লক্ষ্যে নির্বাচনী বোর্ড ও আপীল বোর্ড গঠন করা হয়। তবে ভোটারদের কাগজপত্র যাচাইবাছাই কালে ৮৮ জন ভ’য়া ভোটার সনাক্ত করে নির্বাচনী বোর্ড। ভূয়া ভোটার তালিকার কারণে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় চেম্বারের নির্বাচন স্থগিত করে।

নির্বাচন স্থগিতের পর ভোটার তালিকা বাছাইয়ে তদন্ত কমিটিও গঠন করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। গত ৩০ মার্চ তদন্ত কর্মকর্তা সরজমিনে সিলেট চেম্বার পরিদর্শন করে অনিয়মের প্রমাণ পান। তদন্ত প্রতিবেদনে ৪০ শতাংশ সদস্যই ভুল তথ্য ও জালিয়াতি করে সংগঠনটির ভোটার হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির তদন্ত কর্মকর্তা উপ-সচিব মো. জালাল উদ্দিন গত ১৭ এপ্রিল এই তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে জমা দেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তদন্ত কমিটির এই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সিলেট চেম্বারের অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে ২৯৩ জন, সহযোগী ক্যাটাগরিতে ১৮৪ জন ব্যবসায়ীকে চেম্বারের সদস্য পদ দেওয়া হয়। এ বছরের ২৬ জানুয়ারি অর্ডিনারি ক্যাটাগরিতে আরো ৪৬৭ জন এবং সহযোগী ক্যাটাগরির ১৮৩ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়া হয়েছে। দু’টি সভায় মোট ১ হাজার ১২৭ জন ব্যবসায়ীকে সদস্য পদ দেওয়ার বিষয়টি অস্বাভাবিককতা প্রমাণ পায় তদন্ত কমিটি।

এদিকে নির্বাচন পেছাতে ৪ এপ্রিল বাণিজ্যমন্ত্রী বরাবরে আবেদন করেন চেম্বার সভাপতি খন্দকার শিপার আহমদ। ওই আবেদনে সুপারিশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন। ভোটার তালিকা সংশোধনকল্পে এই পরিষদের ৩ মাসের মেয়াদ বাড়িয়ে দিতে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর প্রেক্ষিতে নির্বাচনের জন্য সিলেট চেম্বারের বর্তমান কমিটির মেয়াদ ৩ মাস সময় বাড়িয়ে দেয় মন্ত্রণালয়।

এর পর গত ২৫ এপ্রিল বাণিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশে সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির ২০১৯-২০২১ সালের নির্বাচন পরিচালনা বোর্ড ও আপীল বোর্ড পুণর্গঠন করা হয়। নির্বাচন পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানকে। আর আপীল বোর্ডের চেয়ারম্যান করা হয় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদকে।

পূর্ব সিডিউল অনুযায়ী নির্বাচনের জন্য নির্বাচনী বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন আওয়ামী লীগ নেতা বিজিত চৌধুরী ও আপীল বোর্ডের প্রধান ছিলেন সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপকি এমাদউল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন।

ভোটার তালিকা সংশোধনের আগে নির্বাচনী বোর্ড পুণর্গঠন করে বর্তমান কমিটির নির্বাচনের আয়োজনের তোড়জোড়ের এনিয়ে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হন সিলেট চেম্বারের সাবেক পরিচালক তাহমিন আহমদ। তার রিটের প্রেক্ষিতে গত ২৮ এপ্রিল চেম্বারের কার্যক্রম ৬ মাসের জন্য স্থগিত করেন বিচারপতি হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিল গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ । পাশাপাশি চেম্বারের বর্তমান কমিটির মেয়াদ বৃদ্ধি করা কেনো অবৈধ নয় এ ব্যাপারে বানিজ্য মন্ত্রণালয়কে কারণ দর্শাতেও নির্দেশ দেওয়া হয়। আপীল বিভাগও এই স্থগিতাদেশ বহাল রাখেন।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com