বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন

কুলাউড়ায় ভয়াবহ রেল দূর্ঘটনা : কবে আমাদের বোধোদয় হবে?

সব রকমের সড়ক দুর্ঘটনা বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য একটি স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিদিনই দেশের কোথাও না কোথাও সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ ঝরছেই। গতকাল ২৪ জুন (সোমবার) দিবাগত রাত সাড়ে ১১ টার দিকে মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় বরমচাল সেতু ভেঙ্গে সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৬টি বগি লাইনচ্যুত হয়েছে।

ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় সেতু ভেঙ্গে ১টি বগি খালে পড়ে যায়। তাৎক্ষণিকভাবে উদ্ধার কাজে সিলেট থেকে আসা পুলিশ, স্থানীয় জনতা, র‌্যাব, বিজিবিসহ ফায়ার সার্ভিসের ১০টি ইউনিট কাজ করেছে। ঘটনাস্থলে উদ্ধারকাজে সহায়তায় একটি রিলিফ ট্রেনও কাজ করে। ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৩ মহিলাসহ এক শিশু। আহত হওয়া শতাধিক যাত্রীদের মধ্য থেকে গুরুতর আহত অনেককেই মৌলভীবাজার সদর হাসপাতাল,  কুলাউড়া সদর হাসপাতাল এবং সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। মধ্যরাতে সেখানকার দূর্ঘটনার শিকার হওয়া যাত্রীদের বাঁচাও- বাঁচাও চিৎকার, আহাজারি এবং কান্নায় আকাশ-বাতাস ভারি হয়ে ওঠে। জানা যায়, ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পরেও ট্রেন চালক দুর্ঘটনার বিষটি টের না পাওয়ায় কমপক্ষে পৌনে এক কিলোমিটার পর্যন্ত চালিয়ে যান। পরে যাত্রীদের চিৎকার ও হৈ হুলে­াড়ে ট্রেন থামানো হয়। আপাতত সারাদেশের সাথে সিলেট রুটে রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটিও গঠন করা হয়েছে।

এখনও আমাদের দেশে ট্রেন ব্যবস্থাপনা দুর্বল ও নাজুক অবস্থায় রয়েছে। লোকবল ও সম্পদের অপ্রতুলতাই যেন রেল বিভাগের নিয়তি। তবে আমাদের দেশে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতিসীমা কম থাকায় অন্যান্য দেশের ট্রেন দূর্ঘটনার চেয়ে আমাদের দূর্ঘটনায় অপমৃত্যুর সংখ্যা কম। সিলেট রুটের কুলাউড়াসহ বেশ কয়েকটা এলাকা ঝুঁকিপ্র্ণূ হওয়ায় প্রায় সময়ই এসব এলাকায় ছোটখাট দূর্ঘটনা ঘটে থাকে যা একটি স্বাভাবিক বিষয়। তবে সময়ের সাথে সাথে ট্রেন ব্যবস্থাপনা আধুনিক হওয়া স্বত্তে¡ও গতকালকের দূর্ঘটনা আমাদের রেল ব্যবস্থাপনার দুর্বলতাকে আবারও চোখে আঙগুল দেখিয়ে দিয়েছে। এখন পর্যন্ত বেশীরভাগ ট্রেনগুলোর ইঞ্জিন ও কোচগুলোর যান্ত্রিক ত্র“টি এবং রেল লাইনের রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকমতো না করা, বিভিন্ন লাইনে ব্যালাস্ট হিসেবে পর্যাপ্ত পাথর ও স্লিপার না থাকা, ব্রিটিশ আমলে তৈরি রেল সেতুগুলোর ঠিকমতো সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণ না করা ইত্যাদি কারণে এই জাতীয় দূর্ঘটনা দেশের সকল রেল রুটেই এখনও চলমান রয়েছে। তাই বিষয়টি নিয়ে এখনই রেল মন্ত্রণালয় সহ সচেতন মহলকে ভাবতে হবে। মানুষের ক্রমবর্ধমান যোগাযোগ চাহিদায় রেল যাতায়াত দিন দিন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। চলতি দশকের আগামী সময়গুলোতে রেল যোগাযোগের গুরুত্ব আরও বাড়বে। ভবিষ্যতের এই প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণে এখনই রেলকে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই।  অন্যদিকে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার শাহবাজপুরে তিতাস সেতুতে সংস্কার কাজ থাকায় সিলেটের সাথে দেশের সকল জেলার বাস যোগাযোগসহ অন্যান্য যাতায়াত মাধ্যম একটু অস্বাভাবিক থাকায় বেশ কয়েকদিন যাবত সারাদেশের সিলেটমুখী যাত্রীরা রেলের উপরই বেশীরভাগ ভরসা করছেন। ফলস্বরূপ যেসব বগিতে যতজন যাত্রী উঠার কথা সেখানে তার কয়েকগুন বেশী যাত্রী ঝুঁকি থাকা স্বত্তে¡ও অনায়াসে উঠছেন। বিষয়টা নিয়ে ট্রেন কর্তৃপক্ষ কতটা সচেতন সেটাও এখন প্রশ্নের বিষয়! ইদানিং সারাদেশে বাস দূর্ঘটনা নিয়ে বহু আন্দোলন, অবরোধ সহ বহু সভা সমাবেশ হয়েছে। হয়ত নতুন করে ট্রেন দূর্ঘটনার ব্যাপারে জনসাধারণ ও সাধারণ যাত্রীরা অনুরূপভাবে তৎপর হয়ে উঠবে। ট্রেনে ধারণ ক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে যাত্রী উঠার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে আমলে নিতে হবে ট্রেন কর্তৃপক্ষকেই। এ ক্ষেত্রে রেল মন্ত্রণালয়কে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। তাছাড়া এ ক্ষেত্রে অন্যের উপরে দায়িত্ব অর্পন করেই আমাদের মুক্তিও সম্ভব নয়। ট্রেন ভ্রবনে আমাদেরকেও যথেষ্ট সচেতন হতে হবে। মাত্রাতিরিক্ত যাত্রীপূর্ণ বগিগুলোতে কোন রকমে একটু ঠাঁই পেলেই আমরাও বেঁচে যাই। তাই এমন মানসিকতা থেকে আমাদেরকে দূরে থাকতে হবে। তবে আমাদেরকেও এটাও মনে রাখতে হবে, সময়ের চেয়ে জীবনের মূল্য অনেক বেশী।

লেখক-
নাজমুল হোসেন
প্রকৌশলী ও লেখক
ই-মেইলঃ nazmulhussen@yahoo.com

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন

ওয়েবসাইটের কোন কনটেন্ট অনুমতি ব্যতিত কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি।
Design & Developed BY ThemesBazar.Com