শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৩ পূর্বাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে কথা আছে- ‘সিলেট-১ আসন যার, সরকার তার’। স্বাধীনতার পর এই পর্যন্ত প্রতিটি নির্বাচনে এই আসনে জয়ী ব্যক্তির দল সরকার গঠন করায় এটা অনেকের বিশ্বাসের পর্যায়ে চলে গেছে।
ফলে সিলেট নগরী ও সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত এই আসনে প্রার্থী করা হচ্ছেন, সে দিকে নজর থাকে সব দলের। স্পিকার হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী, দুই অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিতের এই আসনটি ‘ভিআইপি’ আসন হিসেবেও পরিচিত।
অন্যবার আঁচ পাওয়া গেলেও একাদশ সংসদ নির্বাচনে এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন কারা, তা খোলসা করছেন না আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট কিংবা বিএনপি নিয়ে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারাও।
গোপালগঞ্জে পৈত্রিক এলাকাসহ দুটি আসনে মনোনয়ন ফরম কেনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাকি আরেকটি আসন কি সিলেট-১- এই প্রশ্ন আসছে যেমন; তেমনি লন্ডনে থাকা তারেক রহমানের স্ত্রী জোবায়দা রহমান এই আসনে প্রার্থী হচ্ছেন বলে আলোচনা চলছে সোশাল মিডিয়ায়।
সিলেট-১ আসনে নৌকার প্রার্থী হতে অন্তত ছয়জন আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছেন; তাদের মধ্যে তিনজনের নাম আলোচনায় আসছে বেশি। তারা হলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি এ কে আবদুল মোমেন, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ ও সাবেক নির্বাচন কমিশনার মুহাম্মদ ছহুল হোসেন।
নৌকা প্রতীকে ভোট করতে আগ্রহী সাবেক মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানও; যদিও সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তার শোচনীয় পরাজয় তাকে অনেকটাই পিছিয়ে দিয়েছে।
বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাবেক সচিব ইনাম আহমেদ চৌধুরী এবং এক সময়ের সংসদ সদস্য খন্দকার আবদুল মালিকের ছেলে খন্দকার আব্দুল মোক্তাদিরের পাশাপাশি হঠাৎ করে আলোচনায় উঠে এসেছেন কামাল হোসেনের দল জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের নামও।
গত আট বছর ধরে সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসা ৮৫ বছর বয়সী আবুল মাল আবদুল মুহিত আর ভোট না করার ঘোষণা দিয়ে ছোট ভাই মোমেনকে প্রার্থী চাইলেও নিজেও একটি মনোনয়ন ফরম নিয়ে চমক রেখে দিয়েছেন।
ফলে মোমেন মনোনয়ন না পেলে মুহিত যে আবারও প্রার্থী হতে পারেন, তেমন ভাবারও সুযোগ রয়ে গেছে।
কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ আগে কখনও সংসদ সদস্য হননি। সাংগঠনিক কারণেই এ আসনে তার প্রভাব রয়েছে। তিনি দলীয় মনোনয়নের জোর দাবিদার।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ছহুলের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের সম্পৃক্ততা তেমন না থাকলেও ‘ভিআইপি’ আসনটিতে তাকে ‘হেভিওয়েট’ হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে সিলেটের অন্যতম প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান ইনাম আহমেদের প্রভাব রয়েছে স্থানীয় রাজনীতিতে। তার ভাই ইফতেখার আহমেদ চৌধুরী ছিলেন সেনা নিয়ন্ত্রিত সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এবং ওই সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ফখরুদ্দীন আহমদ তাদের ভগ্নিপতি। ইনামের বড় ভাই প্রয়াত ফারুক আহমেদ চৌধুরী ছিলেন পররাষ্ট্র সচিব।
বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির স্থানীয় রাজনীতিতে সক্রিয়। তার বাবা খন্দকার আবদুল মালিক ওই আইন থেকেই সংসদ সদস্য ছিলেন বলে তাকেও খাটো করে দেখার সুযোগ নেই।
আবার এই দুজনকে নিয়ে বিএনপিকর্মীদের হিসাব-নিকাশের মধ্যে হানা দিচ্ছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও এক সময়ের আওয়ামী লীগ নেতা সুলতান মনসুর। বিএনপি আসনটি ছেড়ে দিলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে লড়তে দেখা যাবে সুলতান মনসুরকে; যদিও তার আসন হল মৌলভীবাজার-২।
প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-১ আসনে জয়ী হয়েছিলেন আবদুল হেকিম চৌধুরী। এরপর নির্বাচিতরা হলেন রফিকুল হক, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, খন্দকার আবদুল মালিক, হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, সাইফুর রহমান ও আবুল মাল আবদুল মুহিত।
কার কী অবস্থা?
স্থানীয় সাংবাদিক মঞ্জুর আহমদের ভাষ্যে সাবেক আমলা ইনাম আহমেদের রাজনীতি ঢাকাকেন্দ্রিক হওয়ায় স্থানীয় ভোটার ও কর্মীদের সঙ্গে তার যোগাযোগ কম। তার আসন সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ) হওয়ায় সিলেট-১ আসনের সাধারণ ভোটারদের সঙ্গেও তাদের খুব বেশি যোগাযোগ নেই।
তিনি বলেন, “সাংগঠনিকভাবেও বিএনপি রয়েছে অনেকটা ছত্রভঙ্গ অবস্থায়। দলের মহানগর সভাপতি অসুস্থ, সাধারণ সম্পাদক বিদেশে, জেলা বিএনপি সভাপতি মামলা কাঁধে নিয়ে পলাতক, অন্যান্য নেতারাও মামলা ও দলীয় কোন্দলে জর্জরিত। এ অবস্থায় দলকে গুছিয়ে তোলা ইনাম আহমেদের পক্ষে বেশ কঠিন।”
মঞ্জুর বলেন, খন্দকার আব্দুল মোক্তাদির স্থানীয় রাজনীতিতে সম্পৃক্ত থাকলেও বড় কোনো পদে তিনি ছিলেন না। হঠাৎ করেই তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হন। গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে প্রতিপক্ষ দলের ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থী হলে মোক্তাদিরের কাজ কঠিন হয়ে যাবে।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের অন্তঃকোন্দলের কথাও বলেন এক যুগ ধরে সিলেটে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত মঞ্জুর।
সাম্প্রতিক সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী বদর উদ্দিন কামরানের পরাজয়ের জন্য দলীয় কোন্দলকে কারণ হিসেবে দেখছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ভোট ধরে স্থানীয় রাজনীতিতে কামরানের সঙ্গে মুহিত পরিবারের দূরত্বও বেড়েছে।
মঞ্জুর বলেন, “আবার প্রথমবারের মতো সাংসদ হওয়ার স্বপ্ন দেখা সিরাজের সমর্থকরা মুহিত পরিবার ও কামরান দুই পক্ষকেই প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছেন। এই বিভক্তি না ঘুচলে এদের মধ্যে কাউকে জিতিয়ে আনা আওয়ামী লীগের পক্ষে কঠিন হতে পারে।”
তাহলে কোন্দল মিটিয়ে সবাইকে এক কাতারে এনে আওয়ামী লীগ কাকে মনোনয়ন দেবে গুরুত্বপূর্ণ এই আসনে?
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দুটি মনোনয়ন কিনেছেন। একটি গোপালগঞ্জ-৩ আসনের জন্য হলেও অন্যটি কোন আসনের, তা প্রকাশ করা হয়নি।
তাহলে সরকার নির্ধারণী এই আসন ধরে রাখতে শেখ হাসিনা নিজেই কি সিলেট-১ এ প্রার্থী হচ্ছেন- প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সংসদীয় মনোনয়ন বোর্ডের সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “না, তিনি এ আসনে প্রার্থী হচ্ছেন না।”
সূত্র : বাংলানিউজ২৪