লর্ডসে বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে ম্যাচটিই এবারের বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ। শুক্রবার সেই লড়াইয়ে প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ক্রিকেটতীর্থে শুরুর আনন্দকে বিশ্বকাপ শেষের তৃপ্তিতে রূপ দিতে পারে কেবল জয়ই।
বাংলাদেশের সবার জন্য অবশ্য এটিই প্রথমবার লর্ডস দর্শন নয়। ওয়ানডে এটি প্রথম হলেও ২০০৫ ও ২০১০ সালে দুটি টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। ওই দুইবার মিলিয়ে বিশ্বকাপের ১৫ জনের দলের ৬ জন পেয়েছেন আগে লর্ডসে খেলার স্বাদ। তবে তারাও সবশেষ বার এত আগে এসেছেন যে অনুভূতি প্রায় নতুনের মতোই।
২০০৫ সালের লর্ডস টেস্ট বাংলাদেশের কাছে ছিল ভুলে যাওয়ার মতো। তবে ২০১০ সালের ম্যাচ থেকে আছে কিছু সুখস্মৃতি। ৫ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এখানকার বিখ্যাত অনার্স বোর্ডে নাম লিখিয়েছিলেন পেসার শাহাদাত হোসেন। দ্বিতীয় ইনিংসে চোখধাঁধানো সেঞ্চুরিতে ব্যাটসম্যানদের অনার্স বোর্ডে নাম লেখান তামিম ইকবাল। ম্যাচটি অবশ্য হেরেছিল বাংলাদেশ। এবার জয় ছাড়া আর কিছু চাওয়া নেই। কোচ স্টিভ রোডস জানালেন, লর্ডসে পা রেখে কতটা রোমাঞ্চিত দলের ক্রিকেটাররা। এই উপলক্ষ্যকেই তাড়না বানিয়ে দলকে জয়ের লড়াইয়ে ঝাঁপিয়ে পড়তে দেখতে চান বাংলাদেশ কোচ।
“বাস থেকে নেমে, গ্রেস গেট (ডব্লু জি গ্রেসের নামে) দিয়ে ঢুকে পথটুকু ছেলেরা দারুণ উপভোগ করেছে। প্যাভিলিয়নে যাওয়ার পথে সিড়ির ছবিগুলো, ড্রেসিং রুম, অনার্স বোর্ড, তারা মুগ্ধতা নিয়ে দেখেছে। ব্যালকনিতে গিয়ে সামনে অসাধারণ দৃশ্যাবলী, কার্পেটের মতো সবুজ ঘাস, বড় বড় স্ট্যান্ড, সব দেখে ওরা এসব নিয়েই বলাবলি করছিল।”
“লর্ডসে এমনটিই হওয়া উচিত। রোমাঞ্চকে খুব বেশি পেয়ে বসতে দেওয়া যাবে না, তবে ক্রিকেট খেলার জন্য এর চেয়ে ভালো জায়গা খুব বেশি নেই। আশা করি, কালকে এখানে ওরা সুখস্মৃতির জন্ম দিতে পারবে। কেউ হারতে চায় না। হারলে তো সেটি সবাই ভুলে যেতে চায়। কিন্তু লর্ডসে খেললে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। এজন্যই জয়ে স্মরণীয় করে রাখা উচিত।”
জিতলেও সেমি-ফাইনালে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবু এই ম্যাচকে নিষ্প্রাণ মনে করেন না রোডস।
“দুর্দান্ত লর্ডসে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান খেলছে, এখানে মরা ম্যাচ বলে কিছু নেই। দুই দলই পরস্পরকে হারাতে মরিয়া। আমরা অবশ্যই মরিয়া। আমি নিশ্চিত তারাও। তাদের তো জয় চাওয়ার অনেক কারণ আছে।”
“আমরা জিততে চাই। খুব ভালো প্র্যাকটিস করেছি আজকে আমরা, ভালো পরিকল্পনা সাজিয়েছি। ভারতের কাছে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে আমরা ছিটকে গেছি। তবে লর্ডসে খুব ভালো একটি দলকে হারানোর চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে। পাকিস্তানকে হারাতে পারলে আমি ছেলেদের নিয়ে খুবই গর্বিত থাকব।”
বাংলাদেশ কোচ যদিও বলছেন, ‘অনেক কারণ’, আদতে পাকিস্তানের জয় চাওয়ার কারণ বলতেও বাংলাদেশের চেয়ে বেশি কিছু নেই। তাদের সেমি-ফাইনালে খেলার আশা টিকে আছে কাগজে-কলমেই। বাস্তব সম্ভাবনা প্রায় শূন্যের কোটায়। সমীকরণটা এরকম, আগে ব্যাট করে তারা ৪০০ করলে বাংলাদেশকে থামাতে হবে ৮৪ রানে! আরও কম রান করলে সমীকরণ হতে থাকবে আরও অসম্ভব।
পাকিস্তান তাই অসম্ভবের আশায় নেই। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ জানালেন, তাদেরও চাওয়া জয় দিয়ে শেষ করা।
“হ্যাঁ, সমীকরণ অনেক কঠিন। ৩১৬ রান বা এরকম ব্যবধানে জিততে হবে আমাদের। আগে ব্যাট করলে ৬০০ বা ৫০০ রান করতে হবে। আমি জানি না, এই সমীকরণ কিভাবে করা হয়, তবে কিছু করার নেই। আমরা চাই শেষটা ভালো করতে। কালকে নিজেদের সেরাটা উজার করে দেব।”
১৯৯৯ বিশ্বকাপে এই ইংল্যান্ডেই পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশ পেয়েছিল প্রথম কোনো টেস্ট দলকে হারানোর অনির্বচনীয় স্বাদ। তবে পাকিস্তানকে আরেকবার হারাতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬ বছর!
দীর্ঘ সেই খরার পর এসেছে সাফল্যের আনন্দধারা। দুই দলের সবশেষ চার লড়াইয়েই জিতেছে বাংলাদেশ। ২০১৫ সালে পাকিস্তানকে ওয়ানডে সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করার পর বাংলাদেশ জিতেছে গত এশিয়া কাপেও। সরফরাজ অবশ্য মনে করছেন, বিশ্বকাপের মঞ্চে আগের ফলের গুরুত্ব নেই।
“সবশেষ চার ম্যাচে আমরা ওদের কাছে হেরেছি। তবে এটা বিশ্বকাপ। দুই দলই শক্তিশালী। আশা করি আমরা দল হিসেবে ভালো করব।”
আপাত গুরুত্বহীন ম্যাচটিও তাই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে দুই দলের শেষ ম্যাচ বলেই। শেষটা অবশ্যই সবকিছু নয়, চ্যাম্পিয়ন না হলে বিশ্বকাপে লোকে শুধু শেষটাই মনে রাখে না। তবে শেষের জয় অন্তত স্বস্তির পরশ কিছুটা বুলিয়ে দেয়।