রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৩ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : তাবলিগ জামাতের বৃহত্তম জমায়েত ৫৬তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব শুরু হচ্ছে শুক্রবার। পাঁচ স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ নদের তীরে বাদ ফজর আম বয়ানের মধ্য দিয়ে শুরু হবে বিশ্ব মুসলিমের অন্যতম বৃহৎ এ ধর্মীয় জমায়েত। রোববার (১২ জানুয়ারি) দুপুরে আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।
দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে ১৭ জানুয়ারি (শুক্রবার)। দ্বিতীয় পর্বের আখেরি মোনাজাত ১৯ জানুয়ারি (রোববার)।
ইজতেমায় অংশ নিতে ট্রেন, নৌকা, বাসসহ বিভিন্ন যানবাহনে হাজারো মুসল্লি ইজতেমা মাঠে সমবেত হচ্ছেন। তারা জামাতবদ্ধ হয়ে দলে দলে ইজতেমা মাঠের নির্ধারিত স্থানে (খিত্তায়) প্রয়োজনীয় মালামাল ও ব্যাগ নিয়ে অবস্থান করছেন।
প্রথম পর্বে ইজতেমা ময়দানকে ভাগ করা হয়েছে ৮৭টি খিত্তায়। নিজ নিজ জেলার খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন দেশীয় মুসল্লিরা। আর ভারত, পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যসহ নানা দেশের মুসল্লিরা আসছেন বিদেশী নিবাসে।
শীত বিবেচনায় মুসল্লিদের চিকিৎসায় সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে চালু করা হয়েছে স্বাস্থ্য ক্যাম্প। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় সন্তুষ্ট মুসল্লিরা।
গাজীপুর সিটি করপোরেশন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমরা চাই মানুষ যাতে নিরাপদে আসতে পারে এবং যেতে পারে। সবাই যেন রাসুলুল্লাহ (সা.) কে পাওয়ার জন্য যেভাবে পরিশ্রম করছে সে সাথে আমাদের গাজীপুরের মানুষও সহযোগিতা করছে।
গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের কমিশনার আনোয়ার হোসেন বলেন, ট্রাফিকের ওপর প্রচণ্ড চাপ। আমরা সেটা মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি। আমরা দৃড়ভাবে বিশ্বাস করি সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখার জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা করবো। এরই মধ্যে ১৫ কিলোমিটার এলাকায় যানজট সৃষ্টি হয়েছে।
কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
মুসল্লিদের নিরাপত্তায় বিশেষ কৌশল হাতে নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। প্রায় ২ হাজার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সদস্য ইজতেমার নিরাপত্তায় থাকছে। ইজতেমার মূল প্যান্ডেলসহ আশপাশের সকল প্রবেশ পথ ও পার্শ্ববর্তী রাস্তা সিসিটিভির আওতায় আনা হয়েছে। থাকছে জলকামান, রায়টকার, এপিসি, দমকল বাহিনী, অ্যাম্বুলেন্স এবং স্বাস্থ্য অধিদফতর নিয়ন্ত্রিত একাধিক মেডিকেল টীম।
অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে প্রতিটি প্রবেশপথে নিরাপত্তা চৌকি বসিয়ে ব্যাপক তল্লাশি করা হচ্ছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মারুফ হোমেন সরদার দৈনিক জাগরণকে বলেন, কোনও ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণ বরদাশত করা হবে না।
তুরাগপাড়ে দেখা গেছে, বিভিন্ন জেলার দায়িত্বশীল তাবলিগের সাথীরা ইজতেমার মাঠে চলে এসেছেন।
মাঠের এক জিম্মাদার মাওলানা আহমদ আলী জানান, দেশব্যাপী আলমি শুরার সাথীদের ইজতেমা একসঙ্গে হওয়ায় অনেক মানুষের সমাগমের বিষয়টি বিবেচনা করে এ বছর তাবলিগের মুরব্বিরা ইজতেমার ময়দানের জায়গা সম্প্রসারণের চিন্তা করেছিলেন। আলহামদুল্লিহ, সেই ব্যবস্থা হয়েছে। এ বছর বেড়িবাঁধের পশ্চিমপাশে, বাটা কোম্পারির মাঠে ও হুন্ডা ভবনের খালি অংশ ইজতেমার জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।
মহাসড়কে যান চলাচলে নিদের্শনা
তাবলীগ জামাতের অন্যতম বৃহত্তম এই সম্মিলনের নিরাপত্তা ও মুসল্লিদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন করতে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) পক্ষ থেকে যানবাহন নিয়ন্ত্রণে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) কে এম আরিফুল হক জানান, ইজতেমাকালীন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা যানবাহন পার্কিংয়ের স্থান নির্ধারণসহ ১২ জানুয়ারি (রোববার) ইজতেমার আখেরি মোনাজাত উপলক্ষে সংশ্লিষ্ট এলাকার বিভিন্ন সড়কে যান চলাচলে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে।
তিনি বলেন, ১২ জানুয়ারি (রোববার) ভোর ৪টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট এলাকার সড়ক-মহাসড়কে সকল প্রকার যানচলাচল বন্ধ রাখা হবে। যানচলাচল বন্ধ রাখার স্থানগুলো হচ্ছে- টঙ্গী ব্রিজ থেকে ভোগড়া পর্যন্ত, টঙ্গী স্টেশন রোড ক্রসিং থেকে মীরের বাজার পর্যন্ত এবং মুন্নুগেট হতে কামারপাড়া পর্যন্ত। একইভাবে ১৯ জানুয়ারি (রোববার) অনুষ্ঠিতব্য বিশ্ব ইজতেমার দ্বিতীয় ধাপের আখেরি মোনাজাত উপলক্ষেও ওইসব এলাকার সড়ক-মহাসড়কে সকল প্রকার যান চলাচল বন্ধ থাকবে।
১০ জানুয়ারি থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত প্রথম ধাপে এবং ১৭ থেকে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় ধাপে বিশ্ব ইজতেমা অনুষ্ঠিত হবে।
বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে আগত মুসল্লিদের বহনকারী ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত যানবাহন পার্কিংয়ের স্থানসমূহ সম্পর্কে কে এম আরিফুল হক জানান, টাঙ্গাইল থেকে আসা মুসল্লিদের বহনকারী সব গাড়ি ভাওয়াল বদরে আলম কলেজ প্রাঙ্গণে থাকবে।
ময়মনসিংহ থেকে আসা গাড়ি চান্দনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করবে।
সরকারি কাজে ব্যবহৃত গাড়ি সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি ও কলেজ মাঠে থাকবে। সব ড্রাইভার এই বিদ্যালয়ে অবস্থান করবে। অন্যদিকে বাইরের ইউনিট থেকে আসা অফিসার ও ফোর্সদের বহনকারী সকল যানবাহন টঙ্গী পাইলট স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে অবস্থান করবে।