শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:০৯ অপরাহ্ন
কমলগঞ্জ (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি : টানা ২১ দিন বন্ধ থাকার পর গত সোমবার (১৭ আগস্ট) বিকেলে মৌলভীবাজার-৪ আসনের সাংসদ, জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত বেঠকের সিদ্ধান্তে বুধবার (১৯ আগস্ট) সকাল থেকে ধলই চা-বাগান খোলার নোটিশ দিয়েছিল ধলই চা-বাগান কোম্পানি। গোপনে বাগানে ব্যবস্থাপকের প্রবেশ করা নিয়ে চা শ্রমিকদের মাঝে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে গতকাল বুধবার সকালে ধলই চা-বাগান কোম্পানির এজিএম’র সঙ্গে বাকবিতণ্ডা ও দুই নারী শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়া নিয়ে এজিএমকে মারধর ও গাড়ি ভাংচুরের অভিযোগ করে ওইদিন বিকেলে নোটিশ দিয়ে আবারও ধলই চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, চলমান উত্তেজনার মাঝে বুধবার সকালে ধলই চা-বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ খান চা-বাগানে প্রবেশকালে নারী চা শ্রমিকদের বাধার মুখে পড়েন। এ সময় বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে দুইজন নারী শ্রমিক লাঞ্ছিত হন। এতে ধলই চা-বাগানে উত্তেজনা চরম আকার ধারণ করে এবং বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ইটপাটকেল নিক্ষেপে এজিএম খালেদ খানের জিপ গাড়ির কাঁচ ভেঙে যায়। এজিএম নিজেও লাঞ্ছিত হন। এরপর চা শ্রমিকরা এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে অবরুদ্ধ করে রাখেন। পরবর্তীতে কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক ও থানার ওসি মো. আরিফুর রহমানের নির্দেশে মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানু আন্দোলনরত চা শ্রমিকদের বুঝিয়ে বেলা সোয়া ২টায় পুলিশি পাহারায় অবরুদ্ধ এজিএম খালেদ খান ও ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলামকে উদ্ধার করে চা-বাগান ত্যাগে সাহায্য করেন। এরপর বুধবার সন্ধ্যায় ধলই চা-বাগান কোম্পানির পক্ষে নোটিশ দিয়ে অনির্দিষ্টকালের জন্য চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের মনু-ধলই ভ্যালির সাধারণ সম্পাদক নির্মল দাস পাইনকা বলেন, ‘গত ১৭ আগস্ট সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ ড. এম এ শহীদের উপস্থিতিতে বৈঠকের সিদ্ধান্তে বুধবার থেকে ধলই চা-বাগান খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। আর অভিযুক্ত ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম আপাতত চা-বাগানের বাইরে প্রধান কার্যালয়ে যুক্ত থাকার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। এ সিদ্ধান্ত অমান্য করে গোপনে ব্যবস্থাপক আমিনুল ইসলাম ধলই চা-বাগানে প্রবেশ করে বাংলোয় অবস্থান করেন। গতকাল বুধবার সকালে আবার ধলই চা-বাগান কোম্পানির এজিএম খালেদ খান চা-বাগানে প্রবেশ করলে উত্তেজনা, নারী লাঞ্ছনা ও গাড়ির কাঁচ ভাঙার ঘটনা ঘটে।’
তিনি মনে করেন, ধলই চা-বাগান কোম্পানি পরিকল্পিতভাবে এ ঘটনার সৃষ্টি করে ধলই চা-বাগানের শ্রমিকদের উশৃঙ্খল প্রমাণ করে আবারও চা-বাগান বন্ধ ঘোষণা করেছে।
কমলগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক জানান, তিনি শুনেছেন বুধবার সন্ধ্যায় নোটিশ দিয়ে ধলই চা-বাগান অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। তবে তিনি নোটিশের কোনো কপি এখনও পাননি। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রাম ভজন কৈরী এবং মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবারও ধলই চা-বাগান বন্ধের ঘোষণাপত্রের কথা তাকে জানিয়েছেন। বিষয়টি তিনি খোঁজ নিয়ে দেখছেন বলে জানান।
কমলগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আরিফুর রহমান ধলই চা-বাগানে কোম্পানির এজিএম ও ব্যবস্থাপক অবরুদ্ধ থাকা, জিপ গাড়ির কাঁচ ভাংচুর ও দুই নারী চা শ্রমিক লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ নিয়ে কোনো পক্ষ থানায় অভিযোগ করেনি।’