শনিবার, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৩০ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : শক্তি-সামর্থ্যে বিস্তর এগিয়ে থেকে টুর্নামেন্টের ফেভারিট দল খুলনা। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে এখনও সেটির প্রতিফলন নেই। প্রথম ম্যাচে হারের দুয়ার থেকে জিতেছিল আরিফুল হকের শেষ ওভারের বীরত্বে। এবার তারা হেরেই গেল নাজমুল হোসেন শান্তর রাজশাহীর কাছে।
বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে বৃহস্পতিবার জেমকন খুলনাকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী।
আসরের প্রথম ম্যাচে শক্তিতে তুলনামূলক এগিয়ে থাকা বেক্সিমকো ঢাকাকে হারিয়েছিল রাজশাহী।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাটিং বিপর্যয়ে খুলনাকে আবারও উদ্ধার করেন আরিফুল হক। ২০ ওভারে খুলনা করতে পারে ১৪৬ রান। রাজশাহীর মোটেও বেগ পেতে হয়নি সেই রান তাড়ায়। জিতে যায় তারা ১৬ বল বাকি থাকতে।
৩৪ বলে ৫৫ রানের ইনিংস খেলে ম্যাচের সেরা অধিনায়ক শান্ত। পরে রনি তালুকদার, মোহাম্মদ আশরাফুল ও ফজলে মাহমুদ রাব্বিও রাখেন অবদান।
রান তাড়ায় শান্তর ব্যাট অশান্ত হয়ে ওঠে দ্বিতীয় ওভার থেকেই। শফিউল ইসলামকে পুল করে বাউন্ডারির পর দুর্দান্ত এক ফ্লিকে গ্যালারিতে আছড়ে ফেলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। পরের ওভারে আল আমিনকে টানা দুই বলে মারেন চার-ছক্কা।
আল আমিনের ওই ওভারেই আউট হয়ে ফেরেন ওপেনার আনিসুল ইসলাম ইমন। তবে দল চাপে পড়েনি। শান্তর ব্যাটে রান আসতেই থাকে, তিনে নেমে রনি তালুকদারও স্বস্তি দেননি খুলনার বোলারদের। সাকিবের এক ওভারে বাউন্ডারি মারেন দুজনই, মাহমুদউল্লাহকে ছক্কায় ওড়ান রনি।
অতি আগ্রাসী হতে গিয়ে রিশাদ হোসেনকে উইকেট দিয়ে ফেরেন রনি (২০ বলে ২৬)। এই লেগ স্পিনারকে ছক্কায় উড়িয়েই শান্ত ফিফটি স্পর্শ করেন ৩২ বলে। পরের বলেই মারেন আরেকটি বাউন্ডারি।
রিশাদই শেষ পর্যন্ত দারুণ এক ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন শান্তকে।
খুলনার ম্যাচে ফেরা হয়নি তবু। ফজলে মাহমুদ রাব্বি উইকেটে যাওয়ার পরপরই রিশাদকে দুটি ছক্কায় উড়িয়ে সরিয়ে দেন চাপের শঙ্কা। দুটি করে চার ও ছক্কায় ১৬ বলে ২৪ করে রাব্বি বিদায় নেন। দল তখন জয়ের কাছে।
মোহাম্মদ আশরাফুলের ২২ বলে অপরাজিত ২৫ আর নুরুল হাসান সোহানের ছক্কায় (৭ বলে ১১*) রাজশাহীর জয় ধরা দেয় অনায়াসেই।
শেষের মতো ম্যাচের শুরুতেও ছিল রাজশাহীর দাপট। টস হেরে বোলিংয়ে নেমে শুরুতেই তারা ফেরায় খুলনার অভিজ্ঞ ওপেনার ইমরুল কায়েসকে। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মেহেদি হাসানের অফ স্পিনে জোরালো আবেদন থেকে বেঁচে যাওয়ার পরের বলেই এলোমেলো শটে তিনি ক্যাচ তুলে দেন শর্ট ফাইন লেগে।
এই নিয়ে টুর্নামেন্টের দুই ম্যাচেই শূন্য রানে আউট হলেন ইমরুল।
সাকিব আল হাসান ভালো শুরুটাকে কাজে লাগাতে পারেননি আবার। মুকিদুল ইসলামের তিন বলের মধ্যে দুটি বাউন্ডারি মেরেছিলেন তিনি কাট করে। এরপরই পুল করতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন স্কয়ার লেগে (৯ বলে ১২)। আগের ম্যাচেও পুল করে ঠিক একই জায়গায় ক্যাচ দিয়েছিলেন সাকিব।
এনামুল হকের ব্যাটিংয়ে ছিল দুইরকম চিত্র। টাইমিং করতে ধুঁকেছেন বেশির ভাগ সময়। এর ফাঁকে খেলেছেন দারুণ কিছু শট। মিড উইকেট থেকে মেহেদির অসাধারণ সরাসরি থ্রো তাকে থামায় ২৬ রানে (২৪ বলে)।
এরপর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ ফেরেন আরাফাত সানিকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে। মুকিদলের বলে আলগা শটে বিদায় নেন অভিজ্ঞ জহরুল ইসলামও।
১০ ওভারের আগেই তখন খুলনার নেই ৫ উইকেট, রান মোটে ৫১।
ধুঁকতে থাকা ইনিংসে দম দেন শামীম হোসেন পাটোয়ারি। বরাবরই ইতিবাচক মানসিকতার এই তরুণ ব্যাটসম্যান শুরু থেকেই আগ্রাসী খেলে চাপ খানিকটা ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষকে। লেংথ আগেই পড়ার ক্ষমতা ও হাতের জোর মিলিয়ে চোখধাঁধানো কয়েকটি শট খেলেন তরুণ এই বাঁহাতি।
৩ চার ও ২ ছক্কায় তার ২৫ বলে ৩৫ রানের ইনিংস শেষ হয় ইবাদতের বলে। আরিফুলের সঙ্গে ৪৯ রানের জুটি ৩৯ বলে।
আরিফুল ঠিক আগের ম্যাচের মতোই শুরুতে সময় নিয়েছেন। টাইমিং পেতে লড়েছেন। এক পর্যায়ে রান ছিল ১৬ বলে ৯। পরে মেহেদিকে স্লগ সুইপে ছক্কায় তার ইনিংসের গতি বদলানোর শুরু। পরে মুকিদুলেরে এক ওভারে মারেন দুটি ছক্কা। শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ৩১বলে ৪১ রান করে।
শেষ দিকে শহিদুল ইসলামের ব্যাট থেকে আসে ১২ বলে ১৭ রান। তাতে দেড়শর কাছে যেতে পারে খুলনা। কিন্তু রাজশাহীর দাপুটে ব্যাটিংয়ের সামনে যথেষ্ট হয়নি সেই স্কোর।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
জেমকন খুলনা: ২০ ওভারে ১৪৬/৬ (এনামুল ২৬, ইমরুল ০, সাকিব ১২, মাহমুদউল্লাহ ৭, জহুরুল ১, আরিফুল ৪১*, শামীম ৩৫, শহিদুল ১৭*; ইবাদত ৪-০-২৭-১, মেহেদি ৪-০-২৩-১, মুকিদুল ৪-০-৪৪-২, সানি ৩-০-১৭-১, ফরহাদ ৪-০-২৯-০, ইমন ১-০-৫-০)।
মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী: ১৭.২ ওভারে ১৪৭/৪ (শান্ত ৫৫, ইমন ২, রনি ২৬, আশরাফুল ২৫*, ফজলে রাব্বি ২৪, সোহান ১১*; সাকিব ৪-০-২৭-০, শফিউল ৩-০-২৪-০, আল আমিন ২-০-১৩-১, শহিদুল ৩-০-২৭-১, মাহমুদউল্লাহ ১-০-১১-০, রিশাদ ৩-০-৩৪-২, শামীম ১.২-০-৯-০)।
ফল: মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী ৬ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: নাজমুল হোসেন শান্ত