বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫১ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : শরীয়তপুর সদর উপজেলার বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক জগদীশ বিশ্বাস। বাস করেন উপজেলার চিতলিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুর হিন্দু পাড়া গ্রামে। তার বাড়িটি যেখানে অবস্থিত সেখানে রয়েছে একটি ব্রিজ। যা নির্মাণ করা হয়েছে সরকারি অর্থ দিয়ে। ব্রিজটিতে রয়েছে একটি লোহার গেট, যা তালাবদ্ধ থাকে। যাতে করে ওই বাড়িতে বহিরাগত এবং গবাদী পশু ঢুকতে না পারে।
বিষয়টি নজরে আসে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দেওয়া সৈয়দ অনিক নামে এক ব্যবহারকারীর পোস্ট থেকে। পোস্টটিতে তিনি লেখেন, ‘শরীয়তপুরের সম্মানিত জেলা প্রশাসক, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর এবং সিনিয়র নেতাকর্মীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শুধু মাত্র একটি পরিবারের সুবিধার কথা ভেবে সরকার ৩৮ লাখ ৮৯ হাজার ৭৭৫ টাকা ব্যয়ে ৫০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি ব্রিজ নির্মাণ করেছে। ওই পরিবার ব্যতীত অন্য কেউ যেন সেতুটি ব্যবহার করতে না পারে তার জন্য সেতুটির উপর নির্মাণ করা হয়েছে লোহার গেইট। বড়ই ভাবনার বিষয়!’
তিনি আরও লেখেন, ‘কে এই ভদ্রলোক যার একার সুবিধার জন্য এতোগুলো টাকা খরচ করে সরকার এই সেতু নির্মাণ করে দিলেন। আবার সেই সেতুটি সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হক এসে উদ্বোধন করে দিলেন। জানি না সে কোন ভদ্রলোক। শুধু জানতে চাই এই টাকাগুলো কাদের? এই টাকাগুলো তো আমাদের ঘাম ঝড়ানো টাকা, দেশের সম্পদ। তাহলে কেন এইভাবে অপচয় করা হয়েছে। দয়া করে যারা দায়িত্বে আছেন এই বিষয়টা নিয়ে একটু ভাববেন আশা করি। ছোট মুখে বড় কথা লেখার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখিত।’
ফেসবুকে পোস্টটি দেখার পর সরেজমিনে চিতলিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাশীপুর হিন্দু পাড়া গ্রামে গিয়ে এর সত্যতা মেলে। দেখা গেছে, পল্লী চিকিৎসক জগদীশ বিশ্বাসের বাড়িতে প্রবেশের জন্য খালের উপর নির্মাণ করা হয়েছে ব্রিজটি। এটির পাশে কোনো রাস্তা নেই। ব্রিজের শেষ ভাগে (জগদীশের বাড়িতে ঢোকার প্রান্তে) একটি লোহার গেট রয়েছে।
জানা গেছে, কোনো বহিরাগত এবং গবাদী পশু যাতে বাড়িতে ঢুকতে না পারে, তাই গেটটি নির্মাণ করা হয়েছে। জগদীশ বিশ্বাসের বাড়ির ব্রিজ দিয়ে অন্য কোনো বাড়িতে যাওয়ার সুযোগ নেই। একক ব্যবহারের জন্যই নির্মাণ করা হয়েছে ব্রীজটি।
অবশ্য ব্রিজটির ৫০০ গজের মধ্যে আরও দুটি ব্রিজ রয়েছে। যা দিয়ে এলাকার জনসাধারণ যাতায়াত করে।
খোঁজ নিয়ে আরও জানা যায়, জগদীশ বিশ্বাসের ছেলে দুলাল বিশ্বাস সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) বিএম মোজাম্মেল হকের এপিএসর দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি বলেন, ‘শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোজাম্মেল হক ছোটবেলা থেকে আমার বাবার কাছে চিকিৎসা নিতেন। বাবা এমপি সাহেবের পারিবারিক ডাক্তার ছিলেন। এমপি সাহেব আমার বাবাকে অনেক ভালোবাসতেন। তাই সাবেক এমপি সাহেব তার বিশেষ বরাদ্দ থেকে এই ব্রিজটি নির্মাণ করেছেন।’
এ বিষয়ে চিতলিয়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আকুল কুমার মণ্ডল বলেন, ‘এই ব্রিজটি নির্মাণের জন্য সাবেক এমপি বিএম মোজাম্মেল হক তার বিশেষ বরাদ্দ থেকে অর্থ দিয়েছে। ব্রিজের উপর গেট লাগানো প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘চুরি ডাকাতি ঠেকাতে এবং গরু-ছাগল যাতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য লোহার গেটটি দেওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে শরীয়তপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহবুর রহমান শেখ বলেন, ‘এই মাত্র ঘটনাটি শুনলাম। তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য শরীয়তপুর-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য বিএম মোজাম্মেল হকের মুঠোফোনে বারবার কল দেওয়া হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।