তরফ নিউজ ডেস্ক : জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন ক্ষমতা নতুন মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে দিয়েছেন চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ।
রুহুল আমিন হাওলাদারকে সরিয়ে নতুন মহাসচিব ঘোষণার পর একাধিক দলীয় প্রার্থীর চূড়ান্ত মনোনয়ন নিয়ে জটিলতা তৈরির প্রেক্ষাপটে এ পদক্ষেপ নিল জাতীয় পার্টি।
দলটির ‘চূড়ান্ত মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দে’ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির নতুন তালিকা পাওয়ার কথা জানিয়ে ইসির উপ সচিব আব্দুল হালিম খান বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, এর ফলে আগের মহাসচিবের চূড়ান্ত মনোনয়নের ক্ষমতা আর থাকছে না।
“জাপার মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাকে ক্ষমতা দিয়ে নতুন চিঠিটি কমিশনের বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে। যথাসময়ে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের তা জানানো হবে।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন আসনে জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী কে, সে সিদ্ধান্ত জানানোর এখতিয়ার কাগজে-কলমে ছিল সদ্য সাবেক হওয়া মহাসচিব এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারের হাতে।
গত ২৬ নভেম্বর জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ইসিকে লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন, দলীয় মনোনয়ন ও প্রতীক বরাদ্দের বিষয়ে মহাসচিব (তৎকালীন) হাওলাদারই তার দলের ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
তারপর ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত হাওলাদারের প্রত্যয়নেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেন লাঙ্গলের ২৩৩ জন প্রার্থী; তার মধ্যে ১৫৫ জন ইসির বাছাইয়ে উত্তীর্ণ হন।
বিভিন্ন আসনে একাধিক প্রার্থী এবং আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগি চূড়ান্ত হওয়ার পর জাতীয় পার্টির চূড়ান্ত প্রার্থী কে থাকছেন, তা হাওলাদারেরই জানানোর কথা ছিল।
কিন্তু এর মধ্যেই মনোনয়ন বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠার পর নিজের ‘বিশ্বস্ত ও সন্তানতুল্য’ হাওলাদারকে মহাসচিবের পদ থেকে সরিয়ে সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁকে সোমবার ওই পদে বসান এরশাদ।
আকস্মিক এই পরিবর্তনের পর প্রশ্ন ওঠে, ৯ ডিসেম্বরের আগে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন কে দেবেন। সেই প্রশ্নের সুরাহা করতেই বুধবার ইসিতে ‘ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি’ বদলের চিঠি পাঠান এরশাদ।
মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, “আমাকে চূড়ান্ত মনোনয়নের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বুধবার সকালেই এ সংক্রান্ত চিঠি ইসিতে পাঠানো হয়েছে।”
আগামী ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের ৩৯টি নিবন্ধিত দলের সবগুলোই অংশ নিচ্ছে। দলীয় প্রার্থী প্রত্যয়নে অধিকাংশ দলই একজনকে দায়িত্ব দিয়েছে। কোনো দল সভাপতি বা চেয়ারম্যানকে, কোনো দল সাধারণ সম্পাদক বা মহাসচিবকে ওই দায়িত্ব দিয়েছে। কয়েকটি দল একাধিক ব্যক্তিকে প্রত্যয়নের ক্ষমতা দিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছেই দলীয় প্রত্যয়নে ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির পদবী, নাম ও নুমনা স্বাক্ষর দিতে হবে। পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনেও তার অনুলিপি দিতে হবে।
দলের প্রত্যয়ন ক্ষমতা যার কাছে
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ইউনুস আহমদ সেখ, বিএনএফ এর আবুল কালাম আজাদ, ইসলামী ঐক্যজোটের আব্দুল লতিফ নেজামী, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের এম এ মতিন, পিডিপির এম এ হোসেন, এনপিপির শেখ ছালাউদ্দিন ছালু, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা আয়াতুল্লাহ, জাকের পার্টির মোস্তফা আমির ফয়সাল, গণফ্রন্টের জাকির হোসেন মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি।
সিপিবির মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, জাগপার তাসমিয়া প্রধান ও লুৎফুর রহমান খন্দকার, এলডিপির অলি আহমদ, জেএসডির আ স ম রব, বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খেলাফত মজলিসের মাওলানা মোহাম্মদ ইসহাক, সাম্যবাদী দলের দিলীপ বড়ুয়া, কল্যাণ পার্টির এম এম আমিনুর রহমান, আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা, জেপির শহীদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ন্যাপের গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া, গণফোরামের মোস্তফা মোহসীন মন্টু দলের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেবেন।
জাসদের হাসানুল হক ইনু, সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবু লায়েস মুন্না, ন্যাপের আমিনা আহমেদ বিকল্পধারার আবদুল মান্নান, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের হাবিবুর রহমান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাইফুল হক, বাংলাদেশ মুসলীম লীগের জুবাইদা কাদের চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মসিউর রহমান রাঙ্গার হাতে এই ক্ষমতা রয়েছে।
আর তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরী এবং বাংলাদেশ জাতীয় পার্টির এমএ মুকিত, এ এন এম সিরাজুল ইসলাম ও জাফর আহম্মদ জয় দলের প্রার্থীদের চূড়ান্ত মনোনয়ন দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন।
সূত্র : বিডিনিউজ২৪