শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩৯ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক : সিলেটে নভেল করোনাভাইরাস সংক্রমণ যেন লাফিয়ে বাড়ছে। করোনাভাইরাসের মতো পাল্লা দিয়ে সিলেটের মানুষের জনসমাগমও বাড়ছে। মানুষের জটলার কারণেই করোনা সিলেট বিভাগে দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের সংশ্লিষ্টরা। চিকিৎসকরা বলছেন সাধারণ মানুষ সচেতন না হলে অতি শিগগিরই করোনার ভয়াবহতার মুখোমুখি হতে হবে সবাইকে।
গত বুধবার (২০ মে) একদিনে সিলেটে আক্রান্ত হন ৪০ জন আর মারা গেছেন তিনজন। এরপর বৃহস্পতিবার (২১ মে) একদিনেই সিলেট বিভাগে নতুন করে করোনায় আক্রান্ত হলেন আরও ৬৭ জন। আক্রান্তদের মধ্যে পুলিশ, চিকিৎসক, সরকারি কর্মকর্তাও রয়েছেন। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ১৩ জন, হবিগঞ্জে ২৫ জন, মৌলভীবাজারে ২২ জন ও সুনামগঞ্জ জেলায় ৭ জন হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং ঢাকার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় এই ৬৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়। সবমিলিয়ে সিলেট বিভাগে এ পর্যন্ত ৫৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হলো। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ২৩৮ জন, সুনামগঞ্জে ৮৯ জন, হবিগঞ্জে ১৫৬ জন ও মৌলভীবাজারে ৮৩ জন। আর এখন পর্যন্ত সুস্থ ১৪৫ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ১৬২ জন।
বৃহস্পতিবার ওসমানী মেডিকেল কলেজের পিসিআর ল্যাবে মোট ১৭৮ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে ১৩ জনের করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। শনাক্ত হওয়ারা সিলেট নগরের, সিলেট সদর উপজেলা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বিশ্বনাথ উপজেলার বাসিন্দা।
এদিকে ঢাকার ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় বৃহস্পতিবার হবিগঞ্জের ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে চুনারুঘাট ১৪ জন, সদর উপজেলায় ১ জন, লাখাইয়ে ১ জন, নবীগঞ্জে ৩ জন, বাহুবলে ২ জন, মাধবপুরের ১ জন, আজমিরীগঞ্জের ২ জন ও বানিয়াচংয়ের একজন রয়েছেন। এদের মধ্যে স্বাস্থ্যকর্মীসহ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী রয়েছেন ৯ জন। এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত হলেন ১৫৬ জন। এদের মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ৬৫ জন ও মারা গেছেন ১ জন।
বৃহস্পতিবার ঢাকার পিসিআর ল্যাব নমুনা পরীক্ষায় মৌলভীবাজারের নতুন ২২ জন ও পুরাতন ৫ জনসহ সর্বমোট ২৭ জনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে।
সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, শনাক্তদের মধ্যে বড়লেখায় ৩ জন চিকিৎসক, জুড়ীতে ৩ জন নার্স এবং মৌলভীবাজার সদরের একজন স্বাস্থ্যকর্মী রয়েছেন। জেলায় নতুন করে শনাক্ত হওয়াদের মধ্যে কমলগঞ্জ উপজেলারই ১০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে সাংবাদিক, শিক্ষক, হাসপাতালের ওয়ার্ডবয়, শিশু, নারী ও রিকশাচালক রয়েছেন। এরমধ্যে আক্রান্ত এক সেবিকা ও স্টোর কিপারের পরিবারের লোকজনও আছেন। এ নিয়ে মৌলভীবাজার আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৮৩ জনে।
এছাড়া বৃহস্পতিবার ঢাকার পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় সুনামগঞ্জের ৬ জনের ও শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবে পরীক্ষায় একজনের করোনা শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে সুনামগঞ্জ পুলিশলাইন্সের দুইজন পুলিশ সদস্য, তাহিরপুর উপজেলায় ৩ জন ও ছাতক উপজেলায় ২ জন রয়েছেন। এ নিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮৯ জনে।
গত ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনারোগী শনাক্ত হন ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মঈন উদ্দিন। এরপর গত ১৫ এপ্রিল ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। করোনারোগী শনাক্ত হওয়ার দুদিনের মাথায় সিলেটে প্রথম এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু করা হয়।
আর গত বুধবার (২০ মে) শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে করোনার নমুনা পরীক্ষা শুরু হয়। এছাড়া সিলেট বিভাগের বিভিন্ন উপজেলা থেকে সংগৃহীত নমুনা অধিক হয়ে যাওয়ায় পরীক্ষার জন্য ঢাকার বিভিন্ন ল্যাবে পাঠিয়েও সিলেটের লোকজনের করোনা পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সিলেট বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১১ জন। এর মধ্যে দুজন চিকিৎসকসহ আটজনই সিলেট জেলার বাসিন্দা। বাকি তিনজনের মধ্যে দুজন মৌলভীবাজারের এবং হবিগঞ্জ জেলার এক শিশু করোনাক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।