শনিবার, ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩৭ অপরাহ্ন
তরফ স্পোর্টস ডেস্ক: অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টি-২০ সিরিজে সমতা আনলো স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ৩৬ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে।
এই জয়ে সিরিজে ১-১ সমতা আনলো টাইগাররা। ব্যাট হাতে অপরাজিত ৪২ রানের পর বল হাতে ৪ ওভারে ২১ রানে ৫ উইকেট নেন ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হওয়া সাকিব।
সিরিজে পিছিয়ে থেকে ঢাকার মিরপুরে দ্বিতীয় টি-২০ খেলতে নামে বাংলাদেশ। তবে এ ম্যাচে টস ভাগ্যে জিততে পারেনি তারা। শিশিরের কথা চিন্তা করে টস জিতে আগে ফিল্ডিং-এ নামে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ব্যাট হাতে নিজেদের ইনিংস শুরু করে প্রথম ওভারেই ১টি চারে ৯ রান তুলে নেন বাংলাদেশের ড্যাশিং ওপেনার তামিম ইকবাল। দ্বিতীয় ওভারে তামিম-লিটস দাস নেন ৬ রান। তবে তৃতীয় ওভারে প্রথম বলে জীবন পান তামিম। স্ট্রাইক পেয়ে ঐ ওভারেই তিনটি বাউন্ডারি মারেন লিটন। এতেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেন এই ডান-হাতি। চতুর্থ ওভারের শেষ দুই বলে ১২ রান তুলে ৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের স্কোর নিয়ে যান ৪১ রানে।
এ অবস্থায় উইটে হারানোর বেদনায় পুড়তে হয় বাংলাদেশকে। পঞ্চম ওভারে দ্বিতীয় বলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান এ্যালেনের বলে বিদায় নেন ১টি চারে ১৬ বলে ১৫ রান করা তামিম।
দলীয় ৪২ রানে তামিমের বিদায়কে আমলে নেননি লিটন। তাই ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলারদের উপর ঝড় বইয়ে দিয়েছেন তিনি। নিজের মুখোমুখি হওয়া ২৬তম বলেই টি-২০ ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় হাফ-সেঞ্চুরির স্বাদ নিয়েছেন লিটন। এসময় লিটনের ইনিংসে ছিলো ৫টি চার ও ৪টি ছক্কা। অর্থাৎ হাফ-সেঞ্চুরির ৪৪ রানই বাউন্ডারি-ওভার বাউন্ডারি থেকে আদায় করেছেন লিটন। তামিম আউট হলে ক্রিজে আসেন সৌম্য সরকার।
সৌম্য-লিটনের ব্যাটিং দৃঢ়তায় বাংলাদেশের দলীয় স্কোর একশ ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু এরপরই মিনি ধস নামে বাংলাদেশ ইনিংসে দলীয় ১১০ থেকে ১২০ রানের মধ্যে ৩ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।
লিটনের হাফ-সেঞ্চুরির পরই বিদায় নেন সৌম্য। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁ-হাতি পেসার কট্রেলের বলে অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েটের দুর্দান্ত ক্যাচে থামতে হয় সৌম্যকে। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ২২ বলে ৩২ রান করেন তিনি। দ্বিতীয় উইকেটে লিটনের সাথে ৪৩ বলে ৬৮ রান যোগ করেন সৌম্য।
তবে হাফ-সেঞ্চুরির পর নিজের ইনিংসটি বড় করতে পারেননি লিটন। কট্রেলের বলে বোল্ড হন লিটন। ৩৪ বলে ৬টি চার ও ৪টি ছক্কায় নিজের ইনিংসটি সাজান লিটন। এরপর উইকেটে গিয়ে বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি মুশফিকুর রহিমও। মাত্র ১ রান করেন তিনি। এমন অবস্থায় ১৩ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ১২০ রান।
ফলে ইনিংসের বাকী সাত ওভারে বাংলাদেশের স্কোর কোথায় গিয়ে থামে, সেটিই দেখার অপেক্ষায় ছিলো ক্রিকেটপ্রেমিরা। ভক্ত-সমর্থকদের পরবর্তীতে চার-ছক্কার বিনোদন উপহার দিয়েছেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ।
ইনিংসের শেষ ৪২ বলে রানের ফুলঝুড়ি ফুটিয়েছেন সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ। শেষ ৪২ বল থেকে দল পায় অবিচ্ছিন্ন ৯১ রান। বাংলাদেশের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ২০ ওভারে৪ উইকেটে ২১১ রান। মিরপুরের এই ভেন্যুতে এটিই সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় রান।
৫টি চার ও ১িিট ছক্কায় ২৬ বলে অপরাজিত ৪২ রান করেন সাকিব। ৭টি চারে ২১ বলে ৪৩ রানে অপরাজিত থাকেন মাহমুদুল্লাহ।
জয়ের জন্য ২১২ রানের বিশাল টার্গেটে শুরুটা ভালো করতে পারেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলীয় ১৮ রানে ফিরে যান ক্যারিবীয় ওপেনার এভিন লুইস। বাংলাদেশের বাঁ-হাতি পেসার আবু হায়দারের শিকার হবার আগে ১ রান করেন তিনি।
এরপর ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন ওপেনার শাই হোপ ও নিকোলাস পুরান। দ্বিতীয় উইকেটে মাত্র ১৪ বলে ৪১ রান যোগ করেন তারা। এতে ৪ ওভারেই ১ উইকেটে ৫২ রানে পৌছে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে হোপ-পুরানের ঝড় পঞ্চম ওভারেই থামিয়ে দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব। ৬ বলে ১৪ রান করা পুরানকে বিদায় দেন সাকিবের।
সাকিবের প্রথম সাফল্যের পরপরই বাংলাদেশ উইকেট শিকারের আনন্দে মাতান স্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজ। ওয়ানডে সিরিজে ও প্রথম টি-২০তে বাংলাদেশের মাথা ব্যাথার একমাত্র কারন হোপকে বুদ্বিদীপ্ত বোলিং দিয়ে আউট করেন মিরাজ। ৬টি চারে ১৯ বলে ৩৬ রান করেন হোপ।
৬২ রানে তৃতীয় উইকেট হারানোর পর বড় জুটির প্রত্যাশায় ছিলো ওয়েস্ট ইন্ডিজ। দলের আশা পূরণের চেষ্টায় ছিলেন শিমোরন হেটমায়ার ও রোভম্যান পাওয়েল। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলেছেন তারা। তবে ওভারপ্রতি যতটা দরকার ছিলো, ততটুকু তুলতে পারেননি তারা। ফলে ১০ ওভার শেষে ওভার প্রতি সাড়ে ১১ রান করে প্রয়োজন করে ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
কিন্তু এরপরই ছন্দ হারায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাকিবের ঘুর্ণিতে পড়ে পদভ্রষ্ট হয় তারা। চতুর্থ থেকে সপ্তম পর্যন্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের চারটি উইকেট শিকার করেন সাকিব। ফলে টি-২০ ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত পাঁচ উইকেট পূর্ণ হয় তার। চার উইকেটের আগে পুরানকেও শিকার করেছিলেন সাকিব। ৪ ওভারের বোলিং কোটা পূর্ণ করে ২১ রানে ৫ উইকেটের ফিগার দাড় করান সাকিব। সংক্ষিপ্ত ভার্সনে যা তার ক্যারিয়ারের সেরা বোলিং ফিগার।
সাকিবের ঝলকে ম্যাচ জয়ের পথ পেয়ে যায় বাংলাদেশ। কিন্তু শেষদিকে রোভম্যান পাওয়েল বাংলদেশের জয়কে দীর্ঘায়িত করেন। ৫টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩৪ বলে ৫০ রান করেন পাওয়েল।
এছাড়া নয় নম্বরে নেমে ১৬ বলে ২৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হারের ব্যবধান কমান কিমো পল। ৪ বল বাকী থাকতে ১৭৫ রানে গুটিয়ে যায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
আগামী ২২ ডিসেম্বর একই ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত হবে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-২০।
স্কোর কার্ড :
বাংলাদেশ ইনিংস :
তামিম ইকবাল ক কট্রেল ব এ্যালেন ১৫
লিটন দাস বোল্ড ব কট্রেল ৬০
সৌম্য সরকার ক ব্রাফেট ব কট্রেল ৩২
সাকিব অপরাজিত ৪২
মুশফিকুর রহিম ক এ্যালেন ব টমাস ১
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপরাজিত ৪৩
অতিরিক্ত (লে বা-৪, নো-২ ও-১২) ১৮
মোট (৪ উইকেট, ২০ ওভার) ২১১
উইকেট পতন : ১/৪২ (তামিম), ২/১১০ (সৌম্য), ৩/১১৩ (লিটন), ৪/১২০ (মুশফিক)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ বোলিং :
কট্রেল : ৪-০-৩৮-২ (নো-১),
টমাস : ৪-০-৪৩-১ (নো-১),
ব্র্যাথওয়েট : ৪-০-৪৩-০ (ও-৫),
অ্যালেন : ৪-০-২৯-১ (ও-২),
পল : ৪-০-৫৪-০ (ও-৩)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংস :
লুইস ক লিটন ব আবু হায়দার ১
শাই হোপ ক লিটন ব মিরাজ ৩৬
পুরান ক তামিম ব সাকিব ১৪
হেটমায়ার ক সাইফউদ্দিন ব সাকিব ১৯
পাওয়েল ক তামিম ব মুস্তাফিজ ৫০
ব্রাভো ক মুস্তাফিজ ব সাকিব ২
ব্র্যাথওয়েট স্টাম্প মুশফিক ব সাকিব ৮
এ্যালেন বোল্ড ব সাকিব ০
পল ক আরিফুল ব মুস্তাফিজ ২৯
কট্রেল অপরাজিত ৩
টমাস বোল্ড ব মাহমুদুল্লাহ ০
অতিরিক্ত (লে বা-৫, ও-৮) ১৩
মোট (অলআউট, ১৯.২ ওভার) ১৭৫
উইকেট পতন : ১/১৮ (লুইস), ২/৫৯ (পুরান), ৩/৬২ (হোপ), ৪/৯৮ (হেটমায়ার), ৫/১০১ (ব্রাভো), ৬/১১৮ (ব্র্যাথওয়েট), ৭/১৩৮ (এ্যালেন), ৮/১৫০ (পাওয়েল), ৯/১৭৩ (পল), ১০/১৭৫ (টমাস)।
বাংলাদেশ বোলিং :
আবু হায়দার : ৪-০-৩৩-১ (ও-১),
মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন : ৪-০-৪২-০,
মুস্তাফিজুর রহমান : ৪-০-৫০-২ (ও-২),
সাকিব আল হাসান : ৪-০-২১-৫ (ও-১),
মেহেদি হাসান মিরাজ : ৩-০-২৩-১,
মাহমুদুল্লাহ : ০.২-০-১-১।
ফল : বাংলাদেশ ৩৬ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান (বাংলাদেশ)।
সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা।