বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬ অপরাহ্ন
মনিরুল ইসলাম শামিম : স্মৃতিসৌধ-শহীদমিনার খচিত তৈষসপত্র ও কাঠের তৈরি মুক্তিযুদ্ধের নানা স্মারকে ভর্তি সোকেস এবং বাংলাদেশের মানচিত্র আকৃতির টি-টেবিল দিয়ে সাজানো একটি রুম। রুমটি দেখে অনেকেই বলেছেন, ‘এটি ড্রয়িং রুম নয়, যেন একখন্ড বাংলাদেশ’। হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলা সদরে এমন একটি দেশপ্রেমের নজির তৈরি করেছেন তুহিন চৌধুরী নামে এক যুবক। তিনি বাহুবল বাজারের মরহুম ওয়ারিছ উদ্দিন চৌধুরীর জ্যৈষ্ঠপুত্র।
স্বাধীনতা উত্তরকালে জন্ম নেওয়া ব্যবসায়ী তুহিন চৌধুরী তারই পিতা-মাতার মুখ থেকে বাল্যকালে মাতৃভাষা ও স্বাধীনতার সংগ্রামে আত্মত্যাগের ইতিহাস জানা পর তার মাঝে দেশপ্রেম সৃষ্টি হয়। পরবর্তীকালে তিনি শিক্ষা জীবন ও কর্মজীবনে এসে বই-পুস্তক পাঠ করে এবং ঐতিহাসিক স্থান ঘুরে ইতিহাস-ঐতিহ্য সম্পর্কিত জ্ঞানের ভান্ডার সমৃদ্ধ করেন। আরও জানার জন্য তিনি বিভিন্ন যাদুঘর পরিদর্শন করেন। এসব দেখে ও জেনে নিজের ড্রয়িং রুমে দেশপ্রেমের আবহ তৈরির চিন্তা মাথায় আসে সৃজনশীল যুবক তুহিন চৌধুরীর। যেমন ভাবনা তেমন কাজ। লাল-সবুজের প্রতি ভালোবাসা থেকে প্রায় একযুগ পূর্বে তিনি নিজ বাসার ড্রয়িং রুমের সাজ-সরঞ্জাম পাল্টাতে শুরু করেন।
তিনি স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস-ঐতিহ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিভিন্ন স্মারক তৈরি ও সংগ্রহ করতে শুরু করেন। এক পর্যায়ে তিনি কাঁঠ দিয়ে তৈরি করেন স্মতিসৌধ, শহীদ মিনার, শাপলা ফুল খচিত লগো, পতাকা, বিভিন্ন ডিজাইনের মানচিত্র, লাল সবুজ রং-এ আচ্ছাদিত টেবিল, মানচিত্রের আদলে টেবিল ইত্যাদি। এছাড়া সিরামিকের বিভিন্ন সাইজের প্লেইট ও মগে স্বাধীনতা যুদ্ধে আত্মত্যাগকারী বীরযুদ্ধাদের ছবি, স্মৃতিসৌধ, শহীদ মিনার, মানচিত্র, বধ্যভূমি ও স্বাধীন যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং স্থাপনাগুলোর ছবি প্রিন্ট করে কিংবা অঙ্কন করে তা দিয়ে স্তরে স্তরে সাজিয়েছেন সোকেস। বধ্যভূমিগুলোতে সমাহিত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস কিংবা বীরশ্রেষ্ঠ ও বীরউত্তম উপাধিতে ভূষিত যুদ্ধাদের ফ্রেমবন্দী ছবিগুলো টানিয়ে রেখেছেন ড্রয়িং রুমের দেয়ালে। এছাড়াও স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে রচিত বিভিন্ন লেখককের প্রকাশিত দুর্লভ বইও স্থান পেয়েছে তার ড্রয়িং রুমের সোকেসে। দূর্লভ এই সংগ্রহশালা গড়তে তার ব্যয় করতে হয়েছে সুদীর্ঘ সময় ও অর্থ। শুরুতে এগুলোকে কেউ কেউ নিছক পাগলামী মনে করলেও এখন অনেকেই দিচ্ছেন বাহ্বা, করছেন প্রশংসা।
এতো গেল তুহিন চৌধুরীর ড্রয়িং রুমে চিত্র। তার বাসার বেলকণিতে স্থান পেয়েছে সবুজের সমারোহ। এখানে আছে ইউপিং, তালপাস, মানি প¬ান্ট সহ বিভিন্ন প্রজাতির লতাপাতা ও ফুল গাছ। আছে- পাথরকুচি, লাল পাতাবাহার, অরকিট, কচু পাতাবাহার, কিসমাস, বিদেশী বকুল, পবনজাও ও বেলিফুল। প্রতিটি গাছের টবগুলোকে সাজানো হয়েছে লাল-সবুজ রঙ দিয়ে। পাশাপাশি বাসার ছাদেও আছে বিভিন্ন প্রজাতির ফুল গাছ। পরিবারের চাহিদা পূরণে সৃজিত ছাদবাগানে স্থান পেয়েছে- পেঁপে, বেগুন, টমেটো, ধনিয়া পাতা, মরিচ ছাড়াও বিভিন্ন মৌসুমী সবজি। ফলের চাহিদা পূরণে আছে আপেলকুল, মালটা, বিভিন্ন প্রজাতির আম, ডালিম ও পেয়ারা গাছ। সবগুলোর টবই লাল-সবুজ রঙে রাঙানো।
তুহিন আহমেদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে জানান, মানুষ নানান জিনিসপত্র দিয়ে ড্রয়িং রুম সাজালেও আমি দেশপ্রেমে জাগ্রত হয়ে দেশের বিভিন্ন প্রতিক দিয়ে ড্রয়িং রুমসহ বেলকনি, অন্যান্য রুম, সিড়ি ও ছাদকে সাজিয়েছি। কঠোর পরিশ্রম ও ত্যাগের বিনিময়ে আমার দূর্লভ এ প্রচেষ্টাটি কিছুটা হলেও বাস্তবায়ন করতে পেরে আত্মতৃপ্তি পাচ্ছি।