বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ অপরাহ্ন
তরফ নিউজ ডেস্ক : কাজের চাপে নারায়ণগঞ্জের সন্তানসম্ভবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হোসনে আরা বেগম বীনার অসুস্থতা আরও বাড়তে পারে সেজন্য তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওএসডি) করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব ফয়েজ আহম্মদ।
ওএসডি হওয়ার পর ইউএনও’র একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস ধরে প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে জনপ্রশাসন সচিব এ কথা বলেন। সচিব বলেন, ‘যে আদেশ আমার অনুবিভাগ করেছে তা মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে আমি জাস্টিফাইড মনে করেছি, এটায় কোনো অন্যায় হয়নি, যথার্থ হয়েছে।’
গত ৪ ফেব্রুয়ারি নারায়ণগঞ্জ সদরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসনে আরা বেগমকে ওএসডি করে আদেশ জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। এরপর গত ৯ ফেব্রুয়ারি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন হোসনে আরা। স্ট্যাটাসে তিনি সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর একজন বিশেষ কর্মকর্তা তাকে অযোগ্য হিসেবে উপস্থাপন করে নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা থেকে বদলির পাঁয়তারা করেই চলেছিল বলে দাবি করেন।
আমার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ছিল ২০ এপ্রিল, কিন্তু ওএসডি হওয়ার খবর শুনে প্রচণ্ড মানসিক চাপে ফুসফুসে ব্লাড সার্কুলেশন অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়, ফলে পেটের সন্তানের অক্সিজেন সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যায় এবং হঠাৎ করেই পেটের বাবু নড়াচড়া পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় বলে জানান তিনি স্ট্যাটাসে।
৫ ফেব্রুয়ারি তার ৩১ সপ্তাহ বয়সী প্রি-ম্যাচিউর বাচ্চা সিজার করে বের করে ফেলা হয়। এখন সে স্কয়ার হাসপাতালের এনআইসিওতে বেঁচে থাকার জন্য প্রাণপণ যুদ্ধ করে যাচ্ছে বলে স্ট্যাটাসে উল্লেখ করেন তিনি।
‘এই নিষ্ঠুর অমানবিকতার পৃথিবীতে কোনো কর্তা ব্যক্তিদের কাছে আমি এ অন্যায়ের বিচার চাই না, শুধু আমার সৃষ্টিকর্তাকে বলব তুমি এর বিচার করো!!!’ স্ট্যাটাসে লেখেন সিনিয়র সহকারী সচিব হোসনে আরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সোমবার জনপ্রশাসন সচিব বলেন, ‘কিছুদিনের মধ্যে উপজেলা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা হবে বিষয়টি জেলা প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে মন্ত্রণালয় অবহিত হয়েছে। মেয়েটি গর্ভবতী কিন্তু অসুস্থ। যখন আদেশটি হয় তখন আমি ওমরায়। ঘটনা শুনে আমি অফিসারদের ডাকি কী কারণে হয়েছে। উপ-সচিব পর্যন্ত সব সিদ্ধান্ত এপিডি (নিয়োগ পদোন্নতি ও প্রেষণ অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব) নিতে পারেন এবং উনি এটা করেন।’
ফয়েজ আহম্মদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় মনে করেছে যে সামনে নির্বাচন কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। আর সাধারণত গর্ভাবস্থার প্রথম সময়টা এবং শেষ সময়টায় প্রবলেম হয়, মাঝখানটা ভালো থাকে। মেয়েটা নিজেই স্বীকার করেছেন উনি অ্যাজমার রোগী এবং ঢাকায় চেকআপে যান।’
তিনি বলেন, ‘এই মায়ের প্রতি এবং তার বাচ্চার প্রতি আমাদের পূর্ণ শ্রদ্ধা এবং পুরো ভালোবাসা রয়েছে। এই বিবেচনায় মনে করা হয়েছে যে চ্যালেঞ্জিং জবের সময় যদি এই চাপ তার অসুস্থতা আরও বাড়িয়ে দেয় এজন্য তাকে ওএসডি করে ঢাকায় রাখা হয়েছে এবং তিনি ঢাকায় ট্রিটমেন্টে আছেন।’
নির্বাচনের সময় একটা উপজেলা খালি রাখা সম্ভব কি-না প্রশ্ন রেখে সচিব বলেন, ‘তার যদি এতই আগ্রহ থাকে তবে মাতৃত্বকালীন ছুটির পর তাকে আবার ওই দায়িত্বে পাঠাব।’
তিনি বলেন, ‘বদলির এখতিয়ার এপিডির হাতে, যদি অবিচার হয়ে থাকে সে সচিবের কাছে আসতে পারে। মন্ত্রণালয় ভালো করছে না বলে মনে করলে তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। মুখ্য সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন, সেই সুযোগ ছিল।’
‘বাস্তবতা হলো, যেখানে বিধিবদ্ধ অথরিটি আছে সেখানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এটি কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে আমি জানি না’-যোগ করেন ফয়েজ আহম্মদ।
সচিব আরও বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা হয়ে তিনি নিজে নিজে এটা করেছেন কি-না, আমি সন্দেহ পোষণ করি। তাকে কেউ বিপথগ্রস্ত করার জন্য করল কি-না? আমাদের অথরিটিকে কেউ অসম্মান করার জন্য কেউ করেছে কি-না আই ডোন্ট নো।’
মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করে এ বিষয়ে বলেন, ‘এটা তার (ইউএনও) পানিশমেন্ট নয়। তার তো অপরাধ নেই। তার ভালোর জন্যই এটা করা হয়েছে। অনেকদিন পর সন্তান হচ্ছে, তার বিশ্রামের প্রয়োজন রয়েছে। সে তো নিজেই ছুটিতে যাবে। আমরা তাকে সাহায্য করেছি।’
ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘তিনি একটা নির্বাচন করেছেন, তার ওপর দিয়ে অনেক ধকল গেছে। সামনে উপজেলা নির্বাচন, তিনি কী এই অবস্থায় আবার নির্বাচনের চাপ নিতে পারতেন? তাকে দিয়ে উপজেলা নির্বাচন করালে কোনো অঘটন ঘটলে তখন এর দায় কে নিত? আমরা তার ভালো করতে গিয়েছিলাম বিষয়টি তিনি অন্যভাবে নিয়েছেন।’
এ বিষয়ে কথা বলতে হোসেনে আরা বেগম বানীর মুঠোফোনে কল দেয়া হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।
তার ফেসবুকে গিয়ে দেখা গেছে, ৯ ফেব্রুয়ারি দেয়া স্ট্যাটাসটিও আর নেই।